এই ছবিটি বাংলাদেশের মুসলিমদের ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার নয়, ভিন্ন ঘটনার

সম্প্রতি, ইন্টারনেটে অস্ত্র ও লাঠি হাতে একদল মাদ্রাসা ছাত্রের ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশের ইসলামী জঙ্গিরা ভারতের বিরুদ্ধে অস্ত্রহাতে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ের ধারণকৃত ছবি এটি।

এক্সে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ছবিটি বাংলাদেশের মুসলিমদের ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার নয় বরং, অস্ত্রহাতে প্লাস্টিকের খেলনা বন্দুক হাতে নিয়ে যুবকের দাঁড়ানোর একটি ছবিতে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম সমকাল এর অনলাইন সংস্করণে গত ১৬ ডিসেম্বর ‘মাদ্রাসা ছাত্রের হাতের বন্দুকটি খেলনা ছিল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত একটি ছবির সাথে আলোচিত ছবিটির মিল পাওয়া যায়।

Comparison by Rumor Scanner

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার মোশাররফিয়া হাফেজিয়া ও ক্বওমী মাদ্রাসা মাঠে হেলিকপ্টার নিয়ে আসেন মাহফিলের প্রধান মেহমান সাইয়িদ শায়েখ নাসির বিল্লাহ আল মাক্কী। তিনি নবীজির ৪৩ তম বংশধর। তার আগমনকে ঘিরে সেসময় এলাকায় জনসমাগম ঘটে। উক্ত মাদ্রাসার মাঠে আয়োজিত মাহফিলে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মাদ্রাসা ছাত্রের হাতের বন্দুকটি ছিল একটি প্লাস্টিকের খেলনার বন্দুক।

মাদ্রাসাছাত্র মো. নাইমুল ইসলাম সমকালকে বলেছেন, ছোট বোনের জন্য ২২০ টাকা দিয়ে তিনি এটি কিনেছিলেন। তবে এটি নিয়ে ভিড়ের মধ্যে বেশ কিছু সময় ঘোরাঘুরি করেছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘‘শায়েখ যখন হেলিকপ্টার থেকে নামলেন। ১২টা ২০ থেকে ৫০ মিনিটের মধ্যে হবে সময়টা, উনি যখন ঘোড়ার গাড়িতে উঠলেন চারপাশে দায়িত্বশীলরা ছিল, আমি বন্দুকটি নিয়ে চলছিলাম, একসময় চলতে চলতে হঠাৎ আমার বন্দুকটি ভেঙে যায়। আপনারা দেখতে পারেন ওটার সামনে ভাঙা আছে। ভেঙে যাচ্ছে আর মানুষেরও কষ্ট হবে এজন্য উঁচু করেছি। পরে কে ভিডিও করে ছেড়ে দিয়েছে তা আমি জানিও না। ভিড়ের মধ্যে পড়ে গেছি আমি, রাখব কোথায় এটা তো আমার বাড়ি না বা মাদ্রাসা না।’’

উক্ত প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, এই ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত হলে এবং বিভিন্ন মহল থেকে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শাহজাদপুর উপজেলা বেলতল গ্রামের শফিক মিয়ার ছেলে নাইমুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। প্লাস্টিকের খেলনা বন্দুকটি জব্দও করা হয়।

শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আসলাম আলী বলেন, ‘‘ঘটনাটি নিয়ে আমরাও প্রথমে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলাম। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ৪৩তম বংশধরের আগমন উপলক্ষে প্রচুর লোক সমাগম ঘটে। সেখানে এক যুবক পাশে একটি অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে ছিল। সামাজিক মাধ্যমে এমন ছবি প্রকাশে সমালোচনার মুখে পড়ে উপজেলা প্রশাসনসহ পুলিশ। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে অস্ত্রটি প্লাস্টিকের খেলনা মাত্র। শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি জামিয়া রশিদিয়া হাফেজিয়া ও ক্বওমী মাদ্রাসার ছাত্র মো. নাইমুল ইসলাম তার সহপাঠীদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে এসে মাদ্রাসা মাঠের পাশেই অস্থায়ী দোকান হতে তিনি তার ছোট বোন সুমাইয়ার (৮) জন্য ২২০ টাকায় একটি প্লাস্টিকের খেলনা বন্দুক কেনেন।’’

এছাড়াও, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি নিউজ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৩ ডিসেম্বর ‘সিরাজগঞ্জে আসলেন রাসূল (সা) এর ৪৩ তম বংশধর শায়েখ নাসির বিল্লাহ আল মক্কী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানকার একটি দৃশ্যেও উক্ত যুবককে অস্ত্রহাতে দেখা যায়।

Screenshot: DBC NEWS

অর্থাৎ, অস্ত্রহাতে যুবকের দাঁড়িয়ে থাকার আলোচিত ছবিটি কোনো যুদ্ধের মহড়ার নয়। সেসময় তিনি প্লাস্টিকের ওই খেলনা বন্দুকটি নিয়ে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

সুতরাং, প্লাস্টিকের খেলনা বন্দুক হাতে নিয়ে মাহফিলে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালনকালে এক যুবকের ছবিকে ভারতের বিরুদ্ধে অস্ত্রহাতে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img