সিলেটে মাদ্রাসা শিক্ষকের নিখোঁজ কান্ডে ভিন্ন মৃত ব্যক্তির ছবি প্রচার

সম্প্রতি, ফেসবুকে একজন ব্যক্তির হাস্যোজ্বল ছবি এবং একটি মৃতদেহের ছবিকে একই ব্যক্তি দাবি করে প্রচারিত পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সিলেটের একজন আলেম স্ত্রী ও শ্বাশুড়ির অত্যাচারে মেঘনা নদীতে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তার লাশ পাওয়া গেছে নরসিংদিতে।

সিলেটে

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

কিছু পোস্টে মৃতদেহের ছবি ছাড়া শুধু হাস্যোজ্বল ছবিটি যুক্ত করা হয়েছে। এমন ‍কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হ্যাসোজ্বল ব্যক্তিটির নাম আলাউদ্দীন আস সাদী। সিলেটের এক মাদ্রাসার এই শিক্ষক সম্প্রতি নিখোঁজ হওয়ার পর তাকে পরে পাওয়া গেছে এবং তিনি সুস্থ আছেন। অন্যদিকে মৃতদেহটি হাফেজ রেদওয়ান হুসাইন নামে ভিন্ন ব্যক্তির, যিনি নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছেন। 

ছবি যাচাই ১

মৃতদেহের ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে এইচ.এম. আফজালুল বাশার নামের এক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৫ মে প্রকাশিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook

পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, হাফেজ রিজওয়ান সাহেব (তারাকান্দা হুজুর) মারা গেছেন। 

এই পোস্টে মৃতদেহের ছবি থাকলেও হাস্যোজ্বল ব্যক্তিটির ছবি ছিল না। 

এই বিষয়ে এইচ.এম. আফজালুল বাশার  রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “হাফেজ রিজওয়ান আমার হুজুর ছিলেন। হুজুরের বাড়ি ময়মনসিংয়ের তারাকান্দায়। উনি বাড়ির পাশের নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নদীর এপার থেকে ওপারে যাওয়ার সময় নদীর খাদে পড়ে মারা যান।” 

এই বিষয়ে তাকে ক্লেইম পোস্টের স্ক্রিনশট পাঠালে তিনি লাশের ছবিকে তার হুজুর অর্থাৎ হাফেজ রেদওয়ান হুসাইনের বলে শনাক্ত করেন এবং অন্য ছবিটি হুজুরের নয় বলে জানান।

গত ১৫ মে হাফেজ রেদওয়ান হুসাইনের মৃত্যুর বিষয়টি একাধিক ব্যক্তির পোস্ট থেকে জানা যায়। কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে। 

ছবি যাচাই ২

পরবর্তীতে হাস্যোজ্বল ব্যক্তির ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে আলাউদ্দিন আস সাদী নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের কাভার ফটো একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। এই ব্যক্তির ফেসবুক প্রোফাইল পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তিনি সিলেটের কোম্পানিগন্জের খায়েরগাঁও দারুল হাদিস মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষক।

Screenshot: Facebook

১৮ মে Hafej Asad Ahmed নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত একটি  পোস্ট থেকে জানা যায়, বউ শাশুড়ির অত্যাচার সইতে না পেরে একজন মাওলানা সাহেব (ছবির) সিলেটে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্যহত্যা করেছে বলে ফেইসবুকে একটি খবর ভাইরাল হয়েছে। খবরটি ছিল মিথ্যা। মূলত ২ টি ঘটনা এক সাথে ঘটেছিল। একটি ঘটনা সিলেটে। সেটি হল একজন মাওলানা সাহেব পোস্ট করেছে একটি ব্রীজের ছবি দিয়ে যে বউ শাশুড়ির অত্যাচারের মধ্যে আছে তিনি এবং জীবনের বিভিন্ন কষ্টের কথা। তারপর তিনি কোথাও চলে গেছেন। তিনি মারা যান নি। “মাওঃ  Alauddin As Sadi  ” নামের হুজুর ছেলেটা বেঁচে আছে, তার সন্ধান পাওয়া গেছে। সে কুড়িগ্রাম ইন্ডিয়া বর্ডার ক্রসিংয়ের সময় পুলিশের হেফাজতে আছে। ২য় ঘটনা: সেসময় একজন মাদ্রাসার শিক্ষক নদী পাড়ি দিতে মারা গেছেন সম্ভবত ময়মনসিংহের ঘটনা। সেই মাওলানা সাহেব কে নদী থেকে তোলার ছবি ঐ মাওলানা সাহেবের আ*ত্যহ*ত্যার লা*শ বলে প্রচার করেছে ফেইসবুকবাসী। মূলত একটা বিষয় পেলেই হুট করে প্রচার না করি, একটু যাচাই করি, একটু সময় নিয়ে প্রচার করি।’

Screenshot: Facebook

এই বিষয়ে খাঁয়ের গাও মহিলা মাদরাসা ও এতিমখানা’র শিক্ষক মুফতি মনিরুল ইসলাম তেীহিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ”আলাউদ্দীন আস সাদী বেচে আছেন। নিখোঁজ ছিলেন, বর্তমানে সন্ধান পাওয়া গেছে তিনি কুড়িগ্রাম আছেন। উনি মারা যাননি বর্তমানে সুস্থভাবে বেচে আছেন।”

অর্থাৎ, আলোচিত পোস্টগুলোতে দুইজন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিকে এক ব্যক্তি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

মূলত, খাঁয়ের গাও মহিলা মাদরাসা ও এতিমখানা’র (কোম্পানিগঞ্জ, সিলেট)  শিক্ষক আলাউদ্দীন আস সাদী নিখোঁজ হওয়া অবস্থায় (পরবর্তীতে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়) ময়মনসিংয়ের তারাকান্দায় হাফেজ রিদওয়ান নামে একজন হুজুুর নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে মারা যান। এই দুই ঘটনাকে এক করে  ‘সিলেটে এক আলেম আত্যহত্যা করেছে, লাশ পাওয়া  গেছে নরসিংদীতে’ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, স্ত্রী ও শ্বাশুড়ির অত্যাচারে সিলেটের এক আলেম মেঘনা নদীতে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে, লাশ পাওয়া গেছে নরসিংদিতে শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img