ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দাবিতে প্রক্টরের ছবি প্রচার

সম্প্রতি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ছবি দাবিতে ‘ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য কি শরীফ না শরীফা তাই তো বুঝতেছিনা’ ও ‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য,  তিনি ভাইয়া নাকি আপু….?’ শীর্ষক ভিন্ন ভিন্ন ক্যাপশনে  একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ব্র্যাক

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ছবিতে চিহ্নিত ব্যক্তিটি ব্র্যাক  বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, ছবিটি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রুবানা আহমেদের। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, একটি পোস্টের মন্তব্যঘরে করা বেশ কয়েকটি মন্তব্যে দাবি করা হয়েছে ছবিটি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষিকা সহকারী অধ্যাপক রুবানা আহমেদের। 

Comment collage by Rumor Scanner

পরবর্তী অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক ইত্তেফাক এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৩ জানুয়ারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক বন্ধ করে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা | Brac University | Asif Mahatab শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Youtube

উক্ত ভিডিওটিতে আলোচিত ছবিতে থাকা কালো চাদর ও সার্জিক্যাল মাস্ক পরিহিত চিহ্নিত ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওতে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সদস্যদের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে দেখা যায়।

Image Comparison by Rumor Scanner

ভিডিওটির ১ মিনিট ২১ সেকেন্ডে একজনকে বলতে শোনা যায় ‘এই যে প্রক্টর ম্যাম আছে, আপনি কথা বলেন’।

উপরোক্ত প্রাপ্ত তথ্যসমূহের ভিত্তিতে আলোচিত ছবির চিহ্নিত ব্যক্তির পরিচয়  যাচাইয়ে পরবর্তীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসাশনিক কর্মকর্তাদের একটি তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত তালিকা থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টরের নাম রুবানা আহমেদ। 

Screenshot: www.bracu.ac.bd

পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে রুবানা আহমেদের  প্রোফাইলে পাওয়া ছবির সাথে আলোচিত ছবির চিহ্নিত ব্যক্তির চেহারার হবহু মিল পাওয়া যায়।

Image Comparison by Rumor Scanner 

ড. রুবানা আহমেদের প্রোফাইল থেকে আরও জানা যায়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের একজন সহকারী অধ্যাপক। ২০২২ সালের ২৩ মে থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

Screenshot: www.bracu.ac.bd

তাছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য প্রফেসর সৈয়দ মাহফুজুল আজিজ। 

Screenshot: www.bracu.ac.bd

অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নয়। 

মূলত, গত ১৯ জানুয়ারি “বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ” শীর্ষক একটি সেমিনারে আসিফ মাহতাব নামের বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক ট্রান্সজেন্ডার এবং সমকামিতা বিরোধী বক্তব্য দেন। এসময় তিনি নতুন পাঠ্যসূচির আওতায় সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রদান করা ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক আলোচনা রয়েছে দাবি করে প্রকাশ্যে বইটির দুইটি পৃষ্ঠা  ছিঁড়ে ফেলেন। যার পর থেকে উক্ত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার শুরু হয়। এ ঘটনার পরপরই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উক্ত খণ্ডকালীন শিক্ষককে ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়। যাতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশের মধ্যে অসন্তুষ দেখা দেয় এবং তাকে চাকরিতে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রতিবাদ জানিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে আন্দোলনে নামে।  এসময় তাদের সাথে কথা বলতে ঘটনাস্থলে যান বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষিকা রুবানা আহমেদ ও পুলিশের একটি দল। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় ধারণকৃত একটি দৃশ্যে এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে  ‘ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য কি শরীফ না শরীফা তাই তো বুঝতেছিনা’ ও ‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য,  তিনি ভাইয়া নাকি আপু….?’ শীর্ষক ভিন্ন ভিন্ন ক্যাপশনে  একটি তথ্য  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।  তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ছবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নয়। এটি মূলত বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর এবং অর্থনীতি ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রুবানা আহমেদের।

সুতরাং, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের ছবিকে উপাচার্যের ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img