সম্প্রতি ‘গোপন বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দিলো পিটার হাস’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কর্তৃক বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
গত ০৩ আগস্ট Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘গোপন বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দিলো পিটার হাস’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়।

২ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে বলা হয়, ‘এবার আওয়ামী লীগের সাথে পিটার হাসের গোপন বৈঠক ফাঁস। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নেওয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানান। যদি আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না দেওয়া হয় তাহলে কঠোর নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়বে বাংলাদেশ সরকার।’
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও আলোচিত দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে উল্লিখিত দাবির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি প্রকাশের তারিখে (০৩ আগস্ট) দেশের মূলধারার গণমাধ্যম ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণে ‘আ. লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে পিটার হাস’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়।
পরবর্তী অনুসন্ধানে কি ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে মূলধারার গণমাধ্যম বিডিনিউজ ২৪ এর ওয়েবসাইটে একই তারিখে (০৩ আগস্ট) ‘নির্বাচন কীভাবে সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়: পিটার হাস’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে নির্বাচন দলীয় সরকার না তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হবে, প্রধান দুই দলের এই বিরোধের জায়গায় নিজেকে জড়াতে রাজি নন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, “এটা রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়। আমাদের আগ্রহ শুধু সহিংসতামুক্ত, অবাধ, সুষ্ঠু, নির্বাচন।”
মতবিনিময় শেষে পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেন, “আওয়ামী লীগের সঙ্গে এ বৈঠক, বাংলাদেশে সব দলের সঙ্গে যে সিরিজ বৈঠক করেছি তারই অংশ। আমি অন্য রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় করেছি, এটা আমি করেছি আমেরিকান রাষ্ট্রদূত হিসেবে।
“প্রতিটি মিটিংয়ে আমি একই বার্তার পুনরাবৃত্তি করেছি। এটা আমেরিকার পলিসি- আমরা অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সমর্থন করি। কারো দ্বারা কোনো সহিংসতা চাই না।”
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, অবাধ-সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে প্রত্যেকের ভূমিকা পালন করার আছে। সরকারের ভূমিকা আছে, গণমাধ্যমে ভূমিকা আছে, বিচার বিভাগ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, নিরাপত্তা বাহিনী; অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রত্যেকেরই ভূমিকা পালন করার আছে।
“আমি আবারও বলছি, যুক্তরাষ্ট্র কোনো নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন করে না। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি, যে পদ্ধতিতে বাংলাদেশের জনগণ তাদের পরবর্তী সরকার বেছে নেবে।”
অর্থাৎ, ওই বৈঠকে বা তার আগেপরে আওয়ামী লীগের সাথে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পর্কিত কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনাই হয়নি।
পাশাপাশি, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সর্ম্পকিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পূর্ণবহাল করা হয়নি।
তাছাড়া, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, জাতীয় সংসদে বিল পাশ হওয়ার পূর্বে এধরণের বিষয়ে কোনো ব্যক্তির হস্তক্ষেপেরও সুযোগ নেই। এছাড়াও বিদেশি কোনো রাষ্ট্রদূতের পক্ষে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনুমোদন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়।
মূলত, সম্প্রতি ‘গোপন বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দিলো পিটার হাস’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে দেখা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রের উল্লেখ নেই এবং আলোচিত দাবিগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কর্তৃক বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কোনভাবেই বিদেশি কোনো রাষ্ট্রদূতের পক্ষে এমন কাজ করার সুযোগও নেই।
উল্লেখ্য, পূর্বেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ইন্টারনেটে একাধিক ভুয়া তথ্য প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়গুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দিয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- The Daily Star: আ. লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে পিটার হাস
- bdnews24.com: নির্বাচন কীভাবে সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়: পিটার হাস
- BBC Bangla: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা
- Laws of Bangladesh: http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-957/section-30072.html
- Rumor Scanner’s Own Analysis