সম্প্রতি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের উপর ছাত্রলীগের হামলার দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওটি প্রায় ৫১ হাজারবার দেখা হয়েছে।
ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে নাহিদ ইসলামের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই ১
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে চ্যানেল২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩ আগস্ট ‘২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা এনসিপি’র’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ৩ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘দ্বিতীয় রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠায় নতুন সংবিধান প্রণয়ন, জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কারসহ ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিবের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নেতা-কর্মীরা এই সমাবেশে অংশ নেন। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত ব্যক্তিরাও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
অর্থাৎ, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
ভিডিও যাচাই ২
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ঢাকা পোস্টের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২০২২ সালের ২৫ আগস্ট ‘মাইক্রোবাস ভাঙচুর করলেন হরতাল সমর্থকরা’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

পরবর্তীতে, একই দিনে ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজধানীতে অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা অর্ধদিবসের হরতাল।
অর্থাৎ, ভিডিওটি নাহিদ ইসলামের ওপর ছাত্রলীগের হামলার নয়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই ভিডিওটি ভিন্ন দাবিতে প্রচার করা হলে সেসময় এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
ভিডিও যাচাই ৩
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ১ সেপ্টেম্বর ‘নোয়াখালীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে বাংলা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন নোয়াখালীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালীন সময় হামলা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বলা হয়, নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফাহিম হাসান খানের নেতৃত্বে জেলা শহরের সড়কের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময়ে সড়কের পাশে অবৈধভাবে থাকা বিভিন্ন গাড়ি ডাম্পিং করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গাড়ির মালিক ও চালকরা মাইজদী প্রধান সড়ক অবরোধ করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের একাধিক টিম উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অর্থাৎ, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে নাহিদ ইসলামের ওপর হামলার নয়।
উল্লেখ্য, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অফিশিয়াল পেজ এবং নাহিদ ইসলামের অফিশিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে তার ওপর ছাত্রলীগের হামলা বিষয়ে কোনো পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি। নাহিদ ইসলামের মতো ব্যক্তির ওপর ছাত্রলীগের হামলা হলে উক্ত বিষয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে ঢালাওভাবে সংবাদ প্রচার হতো। কিন্তু মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র এমন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, নাহিদ ইসলামের ওপর ছাত্রলীগের হামলা দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Channel 24 – ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা এনসিপি’র
- Dhaka Post – মাইক্রোবাস ভাঙচুর করলেন হরতাল সমর্থকরা
- Jamuna TV – নোয়াখালীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর