সম্প্রতি ‘প্রশ্ন কিনে চান্স পেয়েছে খুলনা মেডিকেল কলেজের ২২ বা ১১ জনের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।
একই অভিযোগে খুলনা মেডিকেল কলেজের ১১ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল হয়েছে দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রশ্ন কিনে চান্স পাওয়া খুলনা মেডিকেল কলেজের (খুমেক) কথিত ২২ বা ১১ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে সম্প্রতি মেডিকেল ভর্তি ফাঁস চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যের গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র ছাড়াই তথ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এ সংক্রান্ত পোস্টগুলোর তথ্যসূত্র খোঁজার চেষ্টা করে। তবে পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে উক্ত দাবির পক্ষে কোনো তথ্যসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে এ নিয়ে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানেও মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে এ জাতীয় কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে বেসরকারি সংবাদ ভিত্তিক টিভি চ্যানেল২৪ এর ফেসবুক পেজে গত ১৮ আগস্ট ‘ডাক্তার নামে ওরা কারা?’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রায় ১৬ মিনিটের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটির ১১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো: টিটো মিঞার একটি বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়।
যেখানে তিনি বলেন, ‘যারা এই অনৈতিক প্রক্রিয়ায় ভর্তি হয়েছেন, এই টোটাল ব্যাপারটা যদি প্রমাণিত হয় এবং কারা ভর্তি হয়েছেন সেটাও যদি প্রমাণিত হয় তাহলে অবশ্যই তাদের ব্যাপারে কারো সিম্প্যাথি থাকা উচিত না।’
একই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি ১৭০ জন শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করেছে। যাদের অ্যাকাডেমিক ফলাফলসহ বিভিন্ন তথ্য চেয়ে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে চিঠি পাঠাতে শুরু করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ঢাকা ও খুলনা মেডিকেল কলেজের দুইটি চিঠি দেখানো হয়।
এই দুইটি চিঠি সম্পর্কে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, চিঠি দুইটিতে সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের ২২ শিক্ষার্থীর তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখিত খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর পাঠানো চিঠিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে তদন্তের স্বার্থে খুলনা মেডিকেলে অধ্যায়নরত/এম.বি.বি.এস. উত্তীর্ণ ১১ জন ছাত্র/ছাত্রীর তথ্য পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ দীন-উল ইসলামের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এই চিঠি ও পাশাপাশি চ্যানেল ২৪ এর প্রতিবেদনটি থেকে কথিত ২২ বা ১১ শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য রিউমর স্ক্যানার টিম খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ দীন-উল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে।
তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ২২ বা ১১ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের দাবিটির কোনো সত্যতা নেই। তিনি ভর্তি বাতিল সংক্রান্ত কোনো চিঠি পাননি।
এছাড়া একই কলেজের উপাধ্যক্ষ ডাঃ মোঃ মেহেদী নেওয়াজকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এ সংক্রান্ত দাবিগুলো সম্পর্কে জানালে তিনি বলেন, ‘ইনফরমেশনটা সঠিক নয় আমরা এই ধরনের কোন ইনফরমেশন কলেজ পাইনি।’
মূলত, সম্প্রতি মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিআইডি ১৭০ জন শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করেছে। যাদের অ্যাকাডেমিক ফলাফলসহ বিভিন্ন তথ্য চেয়ে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে চিঠিও পাঠাতে শুরু করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ১১ জন শিক্ষার্থীর বিষয়ে তথ্য চেয়ে একটি চিঠি খুলনা মেডিকেল কলেজেও পাঠানো হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন কিনে চান্স পাওয়া খুলনা মেডিকেল কলেজের (খুমেক) ২২ বা ১১ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তবে দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি কোনোরূপ তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে প্রচার করা হচ্ছে। পাশাপাশি খুমেক কর্তৃপক্ষও উক্ত দাবিটির কোনো সত্যতা নেই উল্লেখ করে তারা এমন কোনো চিঠি পায়নি বলে জানান।
সুতরাং, প্রশ্ন কিনে চান্স পাওয়া খুলনা মেডিকেল কলেজের কথিত ২২ বা ১১ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Channel24: ডাক্তার নামে ওরা কারা?
- Statement of khulna Medical College Principal
- Statement of khulna Medical College Vice Principal
- Rumor Scanner Own Investigation