ব্রুনাইয়ে মহানবীর অবমাননায় মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির আইনটি পুরানো

দীর্ঘদিন ধরে ‘মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে অবমাননা করলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে শরীয়া আইন জারি করছে ব্রুনাই,,,,,,, আলহামদুলিল্লাহ্’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।

সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

২০২২ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে
আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে। 

২০২১ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে
আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে। 

২০২০ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে
আর্কাইভ দেখুন এখানে

২০১৯ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে
আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্রুনাইয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে অবমাননা করলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন জারির বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং আইনটি প্রথম ২০১৩ সালে ঘোষণা করা হয় এবং ২০১৯ সালে কার্যকর করা হয়। 

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক গণমাধ্যম Al Jazeera এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল “Brunei enacts new penal code as sultan calls for ‘stronger’ Islam” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ব্রুনাই সমকামিতা ও ব্যভিচারের জন্য পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড এবং চুরির জন্য অঙ্গচ্ছেদের শাস্তি কার্যকর করতে যাচ্ছে। দেশটির শাসক সুলতান হাসান আল বলকিয়া ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম আইনটি ঘোষণা করেন৷ তবে এটির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়৷ 

প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, এই আইনগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুসলিমদের জন্যই প্রযোজ্য হবে৷ কিছুক্ষেত্রে অমুসলিমদের জন্যও প্রযোজ্য হবে৷ এই আইনে যেসব অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, ধর্ষণ, ব্যভিচার, সমকামিতা, অপহরণ এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. কে অপমান বা তাঁর সম্মানহানি করা। 

ব্রিটিশ গণমাধ্যম BBC News এ ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল “Brunei implements stoning to death under anti-LGBT laws” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও সমজাতীয় তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ব্রুনাই সমকামিতা ও ব্যভিচারের অপরাধের জন্য পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ডের ইসলামি আইন সূচনা করতে যাচ্ছে। যেসব অপরাধের জন্য দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে তার মধ্যে রয়েছে ধর্ষণ, ব্যভিচার, সমকামিতা, অপহরণ এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. কে অপমান করা।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে অবমাননা করলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ব্রুনাইয়ের আইন জারির বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। বরং দেশটি ২০১৯ সালেই এই আইনটি কার্যকর করে। 

তবে ব্রুনাই ২০১৯ সালে এই আইনটি কার্যকরের ঘোষণা দেওয়ার পর বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠে। বিশেষ করে সমকামিতার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের সাজা নিয়ে। 

এই প্রসঙ্গে ২০১৯ সালের পহেলা এপ্রিল জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট ব্রুনাই সরকারকে এই দণ্ডবিধি কার্যকর হওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানান৷ 

পাশাপাশি তিনি এই আইনটিকে নিষ্ঠুর এবং অমানবিক ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেন। 

পরবর্তীতে ব্রিটিশ গণমাধ্যম Wall Street Journal এর ২০১৯ সালের ৬ মে “Brunei Backs Away From Death Penalty for Gay Sex” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসান আল বলকিয়া বলেন, সমকামিতা ও ব্যভিচারের জন্য পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি কার্যকর করা হবে না। 

 এছাড়া বার্তা সংস্থা Reuters এর একই বছরের ৫ মে “Brunei says it won’t enforce gay death penalty after backlash” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও সমজাতীয় তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। 

এছাড়া প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, কিছু কিছু অপরাধের জন্য যেমন, পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, মাদক কারবারির মতো অপরাধের জন্য আগে থেকেই ব্রুনাইয়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান কার্যকর রয়েছে৷ তবে দেশটিতে ১৯৫৭ সাল পরবর্তী সময়ে দেশটিতে কখনো মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি।

মূলত, ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসান আল বলকিয়া ২০১৩ সালে ধর্ষণ, ব্যভিচার, সমকামিতা, অপহরণে জড়ালে এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. কে অপমান করলে মৃত্যুদণ্ডের আইনের ঘোষণা দেন৷ পরবর্তীতে ২০১৯ সালে তিনি এই আইনটি কার্যকরের ঘোষণা দেন। তবে পরবর্তীতে এই আইন নিয়ে বিশেষ করে সমকামিতা ও ব্যভিচারের অপরাধে পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ডের সাজার বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠলে সুলতান হাসান আল বলকিয়া সমকামিতা ও ব্যভিচারের জন্য পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি কার্যকর করা হবে না বলে ঘোষণা দেন। তবে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর অবমাননায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিয়ে তিনি নতুন করে কোনো ঘোষণা দেননি৷ 

সুতরাং, ব্রুনাইয়ে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে অবমাননা করলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন জারির বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ের নয়; এটি বিভ্রান্তিকর। 

আরও পড়ুন

spot_img