সম্প্রতি, ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যমে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা রুটের শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের সাথে বাংলাদেশি একটি ট্রাক ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘর্ষ ঘটায় দাবিতে একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়াও দাবি করা হচ্ছে, পরবর্তীতে শ্যামলী পরিবহনের বাসটিতে থাকা ভারতীয় যাত্রীদের স্থানীয় লোকজন প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। পাশাপাশি তাদের সামনে ভারত বিরোধী নানা স্লোগানও দিয়েছেন। একই দাবিতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীও তার ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেন। এছাড়াও তথ্যটি ভারতীয় ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত এমন প্রতিবেদন দেখুন রিপাবলিক বাংলা (আর্কাইভ), হেডলাইস ত্রিপুরা ন্যাশনাল (আর্কাইভ), এবিপি আনন্দ (আর্কাইভ), এনই ইন্ডিয়া ব্রডকাস্ট (আর্কাইভ) এবং দ্য স্টেটসম্যান (আর্কাইভ)।
ত্রিপুরা রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর ফেসবুক পেজ থেকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন আরও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতের আগরতলা থেকে বাংলাদেশের ঢাকাগামী ভারতীয় যাত্রী বহনকারী শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের সাথে ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশি ট্রাকের সংঘর্ষের দাবিটি সঠিক নয়। এছাড়াও ভারতীয় যাত্রীদের হয়রানি করার তথ্যটিও মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে, ওভারটেকিং জনিত কারণে ঘটা দুর্ঘটনার বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে ১ ডিসেম্বর ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভারতীয় বাসে হামলা নয়, দুর্ঘটনা ঘটেছে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভারতীয় বাসে হামলার দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যগুলোর প্রেক্ষিতে ১ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ। উক্ত সম্মেলনে বাসের চালকও মো. আসাদুল হকও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, শনিবার দুপুরে শ্যামলী পরিবহনের বাসটি ভারতের আগরতলা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে ঢাকা যাচ্ছিল। বাসটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার সুহিলপুরের চান্দিয়ারা এলাকা অতিক্রম করার সময় একটি ট্রাক বাসটিকে ওভারটেক করতে গিয়ে চাপ দেয়। এ সময় বাসটি বাঁ দিকে সরে গেলে একটি তিন চাকার ভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ভ্যানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ভ্যান চালক আহত হন। এ নিয়ে শ্যামলী পরিবহনের বাসচালক আসাদুল হক ও ভ্যান চালক ইব্রাহিম এর মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাস কর্তৃপক্ষ এবং ভ্যান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে মীমাংসা করে এবং বাসটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সেখানে কোনো রকম হামলা কিংবা কোনো দেশ বা সম্প্রদায়কে কটাক্ষ করে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। ঘটনার সময় বাসে ১৭ জন ভারতীয় এবং ৯ জন বাংলাদেশি যাত্রী ছিলেন। তবে দুর্ঘটনায় তাদের কারো কোনো ক্ষতি হয়নি।
এছাড়াও সম্মেলনে শ্যামলী পরিবহনের বাস চালক মো. আসাদুল হক বলেন, বাসে থাকা ভারতীয় যাত্রীদের সাথে স্থানীয় সাধারণ মানুষের কোনো বাক-বিতণ্ডা বা কোনোরকম ঝামেলা হয়নি। ভারতীয় গণমাধ্যমে বাসে হামলার খবর দেখে আমিও অবাক হয়েছি।
জেলা পুলিশ সুপার মো. জাবেদুর রহমান ঘটনাটি নিয়ে বলেন, একটি সাধারণ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যাচার করা হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতেই চালকসহ সংশ্লিষ্টদেরকে এখানে আনা হয়েছে সত্যটা জানার জন্য।
প্রতিবেদনটিতে উক্ত সংবাদ সম্মেলনে নিয়ে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদনটিও রয়েছে।
এছাড়া, চ্যানেল ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে একই দিন ভারত থেকে আসা বাসে হামলা নাকি দুর্ঘটনা; প্রকৃত ঘটনা জানাল ড্রাইভার | Indian Media | Fake News শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত সংবাদ সম্মেলন নিয়ে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম WION News এর সহ- সম্পাদক Sidhant Sibal এর এক্স অ্যাকাউটে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
পোস্টটির ক্যাপশনে ভারতীয় এই সাংবাদিক জানান, দুর্ঘটনা কবলিত বাসটির যাত্রীরা কোনো ধরনের হেনস্তার শিকার হননি। এছাড়া, পোস্টটিতে সংযুক্ত ভিডিওতেও একাধিক বাসযাত্রীকে একই কথা বলতে শোনা যায়।
সুতরাং, ভারতের আগরতলা থেকে বাংলাদেশের ঢাকাগামী ভারতীয় যাত্রী বহনকারী শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসকে পরিকল্পিতভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আক্রমণ করা হয় দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Independent Television Website: ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভারতীয় বাসে হামলা নয়, দুর্ঘটনা ঘটেছে’
- Channel 24 Youtube Channel: ভারত থেকে আসা বাসে হামলা নাকি দুর্ঘটনা; প্রকৃত ঘটনা জানাল ড্রাইভার | Indian Media | Fake News
- Rumor Scanner’s Analysis