সম্প্রতি, “ফিলিস্তিনে বোমা হামলা বন্ধ না হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দেবে বলে হুমকি দিয়েছে কাতার।” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সম্বলিত তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফিলিস্তিনে বোমা হামলা বন্ধ না হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে কাতার কোনো হুমকি দেয়নি। বরং কাতারের আমিরের ২০১৭ সালে দেওয়া পুরানো একটি বক্তব্যের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Aljazeera Mubasher এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৭ সালের ১৪ মে ‘أمير قطر: قضية فلسطين هي قضية شعب اقتلع من أرضه وشرد من وطنه’ (Emir of Qatar: The Palestinian issue is the issue of a people uprooted from their land and displaced from their homeland) শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটির শিরোনাম এবং বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, সেই সময় কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ১৭তম দোহা ফোরামে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের বিষয়ে কথা বলছিলেন। এসময় তিনি ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
পরবর্তীতে, দোহা ফোরামের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৭ সালের ১৮ মে তারিখে প্রকাশিত ভিডিও থেকেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ ২০১৭ সালে কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত ১৭ তম দোহা সম্মেলনে দেওয়া কাতারের আমিরের একটি বক্তব্যকেই তার সাম্প্রতিক বক্তব্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এছাড়া, ফিলিস্তিনে বোমা হামলা না বন্ধ করলে কাতার বিভিন্ন দেশে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে এমন দাবিতে কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো ধরণের তথ্য বা সংবাদ প্রতিবেদনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, কাতার ভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘Doha News’ গত ১২ অক্টোবর উক্ত দাবিতে প্রচারিত তথ্যটিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
মূলত, ২০১৭ সালে দোহা ফোরামের ১৭তম অধিবেশনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শরণার্থীদের বিষয়ে কথা বলার পাশাপাশি ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেই সময় উক্ত ঘটনা নিয়ে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। তবে সম্প্রতি সেই অধিবেশনে দেওয়া তার একটি বক্তব্যের খন্ডিত অংশকেই ‘ফিলিস্তিনে বোমা হামলা বন্ধ না হলে কাতার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দেবে বলে হুমকি দিয়েছে’ শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা করলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷ এ পর্যন্ত ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের সংঘাতের কারণে গাজায় ২৩২৯ জন মারা গেছেন এবং ৯০৪২ জন আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
উল্লেখ্য, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷
সুতরাং, ফিলিস্তিনে বোমা হামলা বন্ধ না হলে কাতার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে দাবিতে কাতারের আমিরের ২০১৭ সালের পুরোনো একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Aljazeera Mubasher – Youtube Video
- Doha Forum – Youtube Video
- Doha News – Gaza: Experts debunk fake news on Qatar gas supply threats