সম্প্রতি “নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে ছাত্রদলের দুই নেতার মৃত্যু” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য কিছু মূলধারার গণমাধ্যম, ভূইফোঁড় ও স্থানীয় অনলাইন পোর্টাল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

গণমাধ্যমে প্রচারিত এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন The Daily Campus, Bhorer kagoj, Amar Sangbad, Amader Somoy এবং Pars Today।
ভূইফোঁড় ও স্থানীয় অনলাইন পোর্টাল Narayanganj Post, বিডিক্রাইম২৪, ইনিউজ৭১, উত্তরবঙ্গ নিউজ, দৈনিক জনবানী, দৈনিক জনতা, ParsToday, Daily News, Daily Dorpon এবং CnBangladesh.com।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় বিএনপির দুই কর্মী নিহত হয়নি বরং একজন কর্মী নিহত হয়েছেন। উক্ত ঘটনায় সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুজন খান ফারুক মারা যাননি বরং বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে, মূলধারার জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ওয়েবসাইটে পহেলা সেপ্টেম্বর “নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদল নেতা সুজনের মৃত্যুর তথ্য ভুয়া” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটিতে নারায়নগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি শাহেদ আহমেদকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়, সুজনের অবস্থা আশংকাজনক। মহানগর বিএনপি ও আমাদের কাছে তার মৃত্যুর তথ্য ছিল। কিন্তু তিনি জীবিত, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মূলধারার অনলাইন পোর্টাল Banglanews24.com এর ওয়েবসাইটেও একইদিনে “নারায়ণগঞ্জে সুজনের মৃত্যু নিয়ে ‘শোনা কথায়’ বিভ্রান্তি” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

এই প্রতিবেদনটিতে নারায়নগঞ্জ বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, সুজনের মৃত্যুর খবর সঠিক নয়। এটা তথ্য বিভ্রাট। সবাই আহত হওয়ায় খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত করতে দেরি হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরও জানানো হয়, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপুর কারণে সংবাদমাধ্যমে সুজনের মৃত্যুর ভুয়া তথ্য ছড়ায়। প্রথমে তিনি বলেছিলেন, সুজন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি জানান, তার কাছে কেবল মৃত্যুর তথ্য ছিল। বাকিটা জানা নেই।
মূলধারার আরেকটি জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠের ওয়েবসাইটে পহেলা সেপ্টেম্বর “নারায়ণগঞ্জে আহত ছাত্রদল নেতা সুজন হাসপাতালে, অবস্থা আশঙ্কাজনক” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত আরো একজনের মৃত্যুর দাবি করে ফেসবুকে পেইজে পোস্ট করেছিল বিএনপি।
তবে পরে সেই পোস্টটি সরিয়ে ফেলা হয়। মারা যাওয়া দাবি করা আহত ঐ ছাত্রদল নেতা সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক খান সুজনকে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে।
অপরদিকে জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তরের পহেলা সেপ্টেম্বরের “নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষ: বিএনপির দাবি নিহত ২” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের দাবি যে, পুলিশের গুলিতে নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদল ও যুবদলের দুই নেতা নিহত হয়েছেন। তারা হলেন, নিহত দুজন হলেন- নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক খান সুজন ও ফতুল্লার এনায়েতনগরের তিন নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল নেতা শাওন।

এছাড়া মূলধারার জাতীয় দৈনিক আমাদেরসময়.কমের ২ সেপ্টেম্বরের “নারায়ণগঞ্জে ২ কর্মীর মৃত্যুতে মৌলভীবাজারে যুবদলের বিক্ষোভ সমাবেশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নারায়নগঞ্জে পুলিশের গুলিতে যুবদলের ২ কর্মী নিহতের ঘটনায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে মৌলভীবাজার জেলা যুবদল। সংগঠনের ২ কর্মী নিহতের খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) এ বিক্ষোভ সমাবেশ করে তারা।
তবে উপরোক্ত নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি ও ছাত্রদলের বরাতে গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, মৌলভীবাজার যুবদল ও বিএনপির দাবিটি সঠিক নয়।
মূলত, গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনকালে নারায়নগঞ্জে বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় শাওন প্রধান নামে যুবদলের এক কর্মী নিহত হন। এসময় সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুজন খান ফারুক আহত হন। কিন্তু কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই কিছু ভূইফোঁড় পোর্টালে ছাত্রদল নেতা সুজন খান ফারুকের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। তবে পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি ও ছাত্রদলের বরাতে জানা যায়, সুজন খান ফারুক মারা যাননি। তিনি আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
প্রসঙ্গত, পহেলা সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিকে কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা ও পাবনাসহ দেশের নানা জায়গায় সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ শহরে বিএনপি কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে যুবদল কর্মী শাওন প্রধান (২০) নিহত হন। তিনি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়ন যুবদলের কর্মী ছিলেন।
সুতরাং, “নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে ছাত্রদলের দুই নেতার মৃত্যু” শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Daily Bangladesh Pratidin: নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদল নেতা সুজনের মৃত্যুর তথ্য ভুয়া
- Banglanews24.com: নারায়ণগঞ্জে সুজনের মৃত্যু নিয়ে ‘শোনা কথায়’ বিভ্রান্তি
- Daily Kaler Kantho: নারায়ণগঞ্জে আহত ছাত্রদল নেতা সুজন হাসপাতালে, অবস্থা আশঙ্কাজনক
- BBC Bangla: বিএনপি: কয়েক জেলায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত ১ জন
- Daily Prothom Alo: নারায়ণগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে যুবদল কর্মী নিহত