১৯৭৪ সালে মাছ ধরার জাল পরিয়ে লজ্জা নিবারণের সেই আলোচিত ঘটনার প্রধান চরিত্র বাসন্তী। সম্প্রতি, সেই বাসন্তীকে নিয়ে মূলধারার গণমাধ্যম বাংলাদেশ প্রতিদিনে লেখা এক সম্পাদকীয় কলামে পত্রিকারটির সম্পাদক নঈম নিজাম দাবি করেছেন “বাসন্তী মারা গেছেন।
‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ এ প্রকাশিত সম্পাদকীয় কলমটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭৪ এর আলোচিত বাসন্তী মারা যাননি বরং তিনি বেঁচে আছেন এবং বর্তমানে তিনি সরকারের থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া বাড়িতে অবস্থান করছেন।
কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, গত ৩ মার্চ, ২০২৩ এ গণমাধ্যম ‘সমকাল’ এ “৭৪-এর আলোচিত বাসন্তী পাবেন আজীবন আর্থিক সহায়তা” এই শীর্ষক একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘১৯৭৪ সালের সেই আলোচিত বাসন্তীকে আজীবন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা প্রশাসন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসে বাসন্তীকে ভরণপোষণের জন্য ৪ হাজার ৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
বাসন্তীর বসবাসের জন্য সরকারিভাবে একটি পাকা ঘর দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিনোদনের জন্য দেওয়া হয়েছে একটি টেলিভিশন। জেলেকন্যা বাসন্তী দাস বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী হওয়ায় অনেক আগে থেকেই প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে আসছেন।’
এছাড়া, গত ৫ মার্চ ২০২৩ এ ‘Jagonews’ এর ইউটিউব চ্যানেলে “উপহারের ঘরে বাসন্তী, ভরণপোষণ দিচ্ছে সরকার” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদনও প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। এছাড়া ভিডিও প্রতিবেদনে বাসন্তীর বর্তমান অবস্থান দেখানো হয়।
অনুসন্ধানের মাধমে গত ৩ এপ্রিল ২০২৩ এ ‘Maydul Islam’ নামক এক ব্যাক্তির একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। সেই পোস্টে তিনি বাসন্তির একটি ভিডিও প্রকাশ করে জানান বাসন্তী বেঁচে আছেন।
মূলত, ১৯৭৪ সালে মাছ ধরার জাল পরিয়ে লজ্জা নিবারণের সেই আলোচিত ঘটনার প্রধান চরিত্র বাসন্তীকে নিয়ে সম্প্রতি ‘ বাংলাদেশ প্রতিদিন’ প্রত্রিকায় লেখা এক সম্পাদকীয় কলামে পত্রিকারটির সম্পাদক নঈম নিজাম দাবি করেন “বাসন্তী মারা গেছেন।” কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। বাসন্তী বেঁচে আছেন এবং বর্তমানে তিনি সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া বাড়িতে অবস্থান করছেন
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের কাছ জয় লাভের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুর্নগঠনের কাজ এগিয়ে চলছিলো ঠিক তখনই (১৯৭৪) দেশে আকস্মিকভাবে বড় ধরনের বন্যায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সেসময় দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের দুর্দশা তুলে ধরতে কুড়িগ্রামের চিলমারীর বাসন্তী নামের এক যুবতীর সংবেদনশীল ছবি প্রকাশ করেছিলো দৈনিক ইত্তেফাক। ছবিটি তুলেছিলেন ইত্তেফাকের ফটো সাংবাদিক আফতাব উদ্দিন। সেসময় ছবিটি দেশ বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। তবে পরবর্তী সময়ে ওই ছবির নেপথ্যের গল্প নিয়ে বের হয়ে আসে নানা তথ্য। ফটো সাংবাদিক ছবিটি পরিকল্পিতভাবে তুলেছিলেন বলে খোদ গণমাধ্যম সূত্রেই দাবি করা হয়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন ব্যক্তিদের মৃত্যু নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচারের ঘটনায় একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।
সুতরাং, ১৯৭৪ এর আলোচিত বাসন্তীর মৃত্যুর সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Samakal – “৭৪-এর আলোচিত বাসন্তী পাবেন আজীবন আর্থিক সহায়তা”
- Jagonews – “উপহারের ঘরে বাসন্তী, ভরণপোষণ দিচ্ছে সরকার”
- Jagonews Youtube – “উপহারের ঘরে বাসন্তী, ভরণপোষণ দিচ্ছে সরকার”
- Maydul Islam – Facebook