মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধ করতে বাংলাদেশকে তুরস্কের মিসাইল দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি “মিয়ানমারের রাজধানী ধ্বংস করতে বাংলাদেশকে ব্যালিস্টিক মিসাইল দিচ্ছে তুরস্কমিয়ানমারের কলিজায় আঘাত” শীর্ষক শিরোনামের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। ভিডিওগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধ করার জন্য তুরস্ক বাংলাদেশকে কোনো মিসাইল দেয় নি বরং তুরস্ক থেকে বিভিন্নসময় সামরিক অস্ত্র কিনেছে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, জাতীয় গণমাধ্যম দৈনিক ইনকিলাবে ২০২১ সালের ৮ মার্চ প্রকাশিত “তুরস্ক থেকে ৩শ কিলোমিটার রেঞ্জের মিসাইল কিনছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী!” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,

“টিআরজি ৩০০ নামের মিসাইল সিস্টেমটি আগামী জুনের ২১ তারিখে বাংলাদেশে সরবরাহ করা হবে”

~ তুরস্কের ডিফেন্স মিনিস্ট্রির টুইট

অর্থাৎ, তুরস্ক ৩০০ কি.মি. বেগের যে মিসাইলটি বাংলাদেশকে দিয়েছে বলে সমসাময়িক সময়ে দাবি করা হচ্ছে সেটি আসলে ২০২১ সালে বাংলাদেশ তুরস্ক থেকে কিনে নিয়েছে।

এছাড়াও, দৈনিক যুগান্তরে ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী প্রকাশিত “তুরস্ক থেকে সামরিক ড্রোন কিনছে বাংলাদেশ” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনে তুরস্ক থেকে ড্রোন কিনার ব্যাপারে তথ্য দেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ মান্নান।

অর্থাৎ, বাংলাদেশ বেশ কয়েকবছর ধরেই তুরস্ক থেকে সামরিক অস্ত্র কিনছে। যা নিয়ে বিভিন্নসময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

তবে, সমসাময়িক সময়ে মিয়ানমার-বাংলাদেশ অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশকে ব্যালিস্টিক মিসাইল দেয়ার যে তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে তা নিয়ে মূলধারার কোনো গণমাধ্যমেই সংবাদ প্রচারিত হয় নি। এমনকি ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজেও উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র ব্যবহার করতে দেখা যায় নি।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা সংকটের পর রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অবস্থান করতে দেয় বাংলাদেশ সরকার। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্নসময় বাংলাদেশের সীমান্তে নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সীমান্তে মর্টার শেল নিক্ষেপ এবং বাংলাদেশের আকাশ সিমান্তে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার প্রবেশের ঘটনা ঘটে। এসকল ঘটনায় বাংলাদেশের ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপে চটকদার শিরোনাম, পূর্বের বিভিন্ন ভিডিও একত্র করে মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশকে তুরস্কের মিসাইল দেয়ার দাবিতে বিভিন্ন ভিডিও ও তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।

এছাড়াও, গত মাসের ১৭ সেপ্টেম্বর বিবিসি বাংলায় “সীমান্তে মিয়ানমারের গোলার আঘাতে হতাহতের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী – ‘প্রয়োজনে’ জাতিসংঘে যাবে বাংলাদেশ” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে মিয়ানমার-বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে সুস্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

প্রতিবেদনে তিনি বলেন,

“আমরা যুদ্ধ চাই না। শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে। আমাদের প্রচেষ্টায় না হলে জাতিসংঘে তুলবো।”

~ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান

অর্থাৎ, মিয়ানমারকে ধ্বংস করতে বাংলাদেশকে মিসাইল দিয়েছে তুরস্ক দাবিতে প্রচারিত ভিডিওগুলো কোনোরূপ তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে প্রচার করা হচ্ছে।

মূলত, রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে গত বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সিমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের সীমান্তে নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সীমান্তে মর্টার শেল নিক্ষেপ এবং বাংলাদেশের আকাশ সিমান্তে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার প্রবেশের ঘটনা ঘটে। এসকল ঘটনার প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধ করতে বাংলাদেশকে তুরস্কের মিসাইল দেয়ার দাবিতে ভিডিও এবং তথ্য কোনোরূপ তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, মিয়ানমারের রাজধানী ধ্বংস করতে বাংলাদেশকে ব্যালিস্টিক মিসাইল দিচ্ছে তুরস্ক শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img