সম্প্রতি, “বাংলাদেশে মহেশপুর উপজেলায় এক মুসলিম তরুণী এক হিন্দু তরুণকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করতে চাইলে মুসলমানরা হিন্দু তরুণের বাড়ি ঘেরাও করে তাকে হত্যা করতে চায়। তারা মুসলিম তরুণীটিকে বিয়েতে অনুৎসাহিত করতে হিন্দুদের নিয়ে বাজে মন্তব্যও করে। পরবর্তীতে হিন্দু তরুণটিকে পুলিশ গ্রেফতার করে।” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে ছড়িয়ে পড়েছে।
টুইটারে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মুসলিম তরুণী ও হিন্দু তরুণ স্বেচ্ছায় বিয়ে করতে চাওয়ায় হিন্দু তরুণকে পুলিশের গ্রেফতারের দাবিটি সঠিক নয় বরং পুলিশ নিজেদের হেফাজতে তাদের স্ব স্ব অভিভাবকের হাতে তুলে দেয়।
মুসলিম তরুণী ও হিন্দু তরুণ স্বেচ্ছায় বিয়ে করতে চাওয়ায় হিন্দু তরুণকে পুলিশের গ্রেফতারের দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে, দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরের স্থানীয় সীমান্ত টিভি নামে একটি ফেসবুক পেজের এডমিন সেলিম রেজার সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সেলিম রেজা রিউমর স্ক্যানারকে জানান, তাদের জবানবন্দি থেকে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি মুসলিম তরুণী ও হিন্দু তরুণ দুজনেই গাজীপুরে থাকতো। মেয়েটির বাড়ি জামালপুরে। ছেলের বাড়ি ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে৷ ছেলের খালুর বাসা মহেশপুরে। তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়। ওদের সাথে কথা বলে যতটুকু বুঝেছি, মেয়েটির পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না৷ মেয়েটির পরিবার এই সম্পর্কের ব্যাপারে অবগত ছিল। তবে তাদের পরিবারের সাথে আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাইনি।
তিনি বলেন, তারা গাজীপুর থেকে এসে মহেশপুরে খালুর বাসায় থাকতে শুরু করে। পরবর্তীতে বিষয়টি এলাকাবাসীর নজরে এলে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানকে অবগত করে মেম্বারের হাতে তুলে দেয়। পরবর্তীতে মেম্বার মহেশপুর থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে ছেলে-মেয়ে ও তাদের আশ্রয়দাতাকে থানায় নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, এসময় আমরা পুলিশকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাদেরকে থানায় নেওয়ার পরে কি করা হবে? পুলিশ আমাদেরকে জানায়, তারা ছেলে-মেয়ে দুইজনের অভিভাবকদের ডেকে তাদের হাতে তুলে দিবে।
এসময় এলাকাবাসী কর্তৃক তাদেরকে আটকের পর মারধর করা হয় বলেও জানান তিনি।
এছাড়া ঘটনাটি সম্পর্কে আরও জানতে মহেশপুর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার রাজবংশীর সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন জানিয়ে পুলিশের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
পরবর্তীতে গ্রেফতারের বিষয়ে নিশ্চিত হতে মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ সেলিম মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, মুসলিম তরুণী ও হিন্দু তরুণ দুজনকেই পুলিশ থানায় নিয়ে আসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। পরবর্তীতে তাদের নিজ নিজ অভিভাবক এসে তাদেরকে নিয়ে যায়। তারা স্বেচ্ছায় চলে গেছে। এ নিয়ে কোনো মামলা-মোকাদ্দমা হয়নি।
মূলত, গাজীপুর থেকে একজন মুসলিম তরুণী ও হিন্দু তরুণ ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় এসে হিন্দু তরুণটির এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠে। সেখানে মহেশপুরের স্থানীয় এলাকাবাসী তাদেরকে আটক করে মারধর করে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানকে অবগত করে মেম্বারের হাতে তুলে দেয়। পরবর্তীতে মেম্বার মহেশপুর থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে ছেলে-মেয়ে ও তাদের আশ্রয়দাতাকে থানায় নিয়ে যায়। তবে থানায় নিয়ে আসা হলেও তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়নি বরং তাদের নিজ নিজ অভিভাবক এসে তাদেরকে নিয়ে যায়। এ নিয়ে কোনো মামলা-মোকাদ্দমা হয়নি বলে জানান মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ সেলিম মিয়া।
সুতরাং, মুসলিম তরুণী ও হিন্দু তরুণ স্বেচ্ছায় বিয়ে করতে চাওয়ায় হিন্দু তরুণকে পুলিশের গ্রেফতারের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
Conversation with Local Journalist
Conversation with OC of Moheshpur Thana