সম্প্রতি, “বিএনপির কর্মসূচীতে বাধা না দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সেনাপ্রধানের চিঠি” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপির কর্মসূচীতে বাধা না দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সেনাপ্রধানের চিঠি দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং কেনো রকম সূত্র ছাড়াই তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।
গুজবের সূত্রপাত যেভাবে
ফেসবুক মনিটরিং টুল ব্যবহার করে দেখা যায়, এ বিষয়ে গত ৬ ডিসেম্বর ফেসবুকে প্রথম পোস্ট (আর্কাইভ) করা হয়।

পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “ব্রেকিং নিউজ। সরকারের সাথে সেনাবাহিনীর ধন্ধ প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা না দিতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে সেনাপ্রধানের চিঠি।”
এই পোস্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উক্ত তথ্যের বিষয়ে পোস্টে কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। কমেন্টে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীই তথ্যটির সূত্রের ব্যাপারে জানতে চাইলেও পোস্টাদাতা তাদের উত্তর (রিপ্লাই) দেননি।
সেই সাথে, একই তথ্য সম্বলিত ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া অন্যান্য পোস্টগুলোতেও কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়নি।
পরবর্তীতে, কিওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে অনুসন্ধান করে আলোচিত তথ্যটির ব্যাপারে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও কোনো সংবাদ খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যনার টিম।
সেনাপ্রধান কি এমন কোনো চিঠি দিয়েছে?
গণমাধ্যমে আলোচিত তথ্যটির ব্যাপারে কোনো সংবাদ না পেয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট শাখায় খোঁজ নিয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইটে News and Publication, Media & Announcement ইত্যাদি সেকশনসহ ওয়েবসাইটটি বিশ্লেষণ করে আলোচিত পোস্টের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজেও এ সংক্রান্ত কোনো পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিসহ বাহিনী সংশ্লিষ্ট নানা তথ্য সাধারণত প্রকাশ করে থাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (ISPR)। আইএসপিআরের ওয়েবসাইটে ‘Army’ সেকশনেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া আইএসপিআরের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে নিয়মিত ভিত্তিতে সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট নানা তথ্য ও সংবাদ প্রকাশ করা হলেও পেজটি পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত তথ্যটির ব্যাপারে কোনো পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কি এমন চিঠি দেওয়ার এখতিয়ার আছে?
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইটে উক্ত বাহিনীর কাজের ধারার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সরকারের নির্দেশে দেশের নিরাপত্তা রক্ষার কাজে যোগদান, প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলায় সহায়তা, অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে অংশগ্রহণ, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণসহ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কাজের ধারার বিষয়ে ওয়েবসাইটে উল্লেখ থাকলেও সরকার বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পরামর্শ বা অন্যান্য বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়ার কোনো ধারা উল্লেখ নেই।

তাছাড়া, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, সেনাপ্রধানের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠির মাধ্যমে পরামর্শ দেওয়ার কোনো বিধান নেই।
অর্থাৎ, বিএনপির কর্মসূচীতে বাধা না দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সেনাপ্রধানের চিঠি দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়।
মূলত, বেশকিছু দাবিতে গেল কয়েকমাস বিভাগীয় গণসমাবেশ আয়োজনের পর ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। এই গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি বিএনপির কর্মসূচীতে বাধা না দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সেনাপ্রধান চিঠি দিয়েছেন দাবি করে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু মূলধারার গণমাধ্যম এবং সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট শাখায় খোঁজ নিয়ে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীকে এমন কোনো চিঠি দেওয়ার বিধানও নেই।
উল্লেখ্য, ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে যমুনা সেতুতে সকল প্রকার গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকার বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ১০ ডিসেম্বর বিএনপিরল আয়োজিত ঢাকার গণসমাবেশে বাধা না দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সেনাপ্রধানের চিঠি দেওয়া বিষয়ক একটি দাবি সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।