সেনাবাহিনী কর্তৃক থানায় ঢুকে পুলিশ সদস্যদের মারধরের ঘটনাটি ভারতের, বাংলাদেশের নয়

সম্প্রতি, “থানায় ঢুকে পুলিশ সদস্যদের বেধড়ক মারধর করলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও শর্ট ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।

থানায় ঢুকে

hn.bdtiktok.official999 (আর্কাইভ) নামের টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

টিকটকে ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওটি ইতিমধ্যে প্রায় ১৬ লক্ষ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ ভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া এসেছে। ভিডিওটি সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি বার শেয়ার করা হয়েছে এবং এতে সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি মন্তব্য করা হয়েছে। অধিকাংশ মন্তব্যকারীরাই ভিডিওটির বিষয়বস্তু সত্যি মেনে নিয়ে মন্তব্য করেছেন।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাবাহিনী কর্তৃক থানায় ঢুকে পুলিশ সদস্যদের মারধরের ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং, ভারতের।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। আলোচিত ভিডিওটির বর্ণনায় ঘটনাটি কোন দেশের সে সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। 

ভিডিওতে বলা হয়েছে, “থানায় ঢুকে পুলিশ সদস্যদের বেধড়ক পেটানো হয়েছে। মঙ্গলবার আজ সাড়ে নয়টার দিকে কিছু সেনা থানায় ঢুকে পুলিশ সদস্যকে মারধর করে। এতে থানার হাউজ অফিসার সহ পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় সেনাবাহিনীর তিন ল্যাফট্যনেন্ট কর্নেল সহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ । অভিযুক্ত সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা, হত্যাচেষ্টা এবং থানায় ঢুকে পুলিশ সদস্যকে অপহরণের অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও, পুলিশের অভিযোগে বলা হয়েছে, অস্ত্র ও পোশাকসহ তিন কর্মকর্তার নেতৃত্বে সেনারা অনুমতি ছাড়াই থানায় প্রবেশ করে। এ সময়ে কোনো ধরনের উসকানি ছাড়া থানার ভেতরে থাকা পুলিশ সদস্যদের মারধর করেন। এমনকি পুলিশ সদস্যদের লাথিও মারেন তারা। এই ঘটনার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হলে দ্রুত সেখানে ছুটে যান কর্মকর্তারা। পুলিশ জানায়, আহত সদস্যদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটি থেকে কী-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে জাতীয় দৈনিক কালবেলার ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩১ মে ‘থানায় ঢুকে পুলিশ সদস্যদের বেধড়ক পি’টু’নি | Police | Army | Kashmir | India | kalbela” শিরোনামে প্রকাশিত ৩ মিনিটের মূল ভিডিওটি পাওয়া যায়। 

Comparison: Rumor Scanner

মূল ভিডিওর শুরুর ৫৫ সেকেন্ডের ক্লিপ নিয়ে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটির বিস্তারিত অংশ বাদ দিয়ে প্রচার করা হয়েছে, যেখানে ঘটনাটি কোন দেশের সে সম্পর্কে জানানো হয়েছে। ভিডিওটির বিস্তারিত অংশে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম NDTV তে ৩০ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়, সম্প্রতি ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের কুপাওয়াড়ার একটি থানায় এ ঘটনা ঘটেছে।

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে NDTV এর ওয়েবসাইটে গত ৩০ মে ‘Army-Cops Clash In J&K’s Kupwara, Case Against 16 Including 3 Lt Colonels’ শীর্ষক শিরোনামে এই বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার একটি পুলিশ স্টেশনে পুলিশকে মারধরের অভিযোগে তিন অফিসার-সহ ১৬ সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় স্টেশন হাউস অফিসার-সহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।

অর্থাৎ, থানায় ঢুকে সেনাবাহিনী কর্তৃক পুলিশকে মারধরের ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়, এটি ভারতের ঘটনা।

মূলত, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থানায় ঢুকে পুলিশ সদস্যদের বেধড়ক মারধর করেছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম টিকটকে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের একটি থানায় ঢুকে সেনা সদস্যরা পুলিশ সদস্যদের বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ৩১ মে বাংলাদেশি গণমাধ্যম কালবেলার ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রচারিত হয়। উক্ত ভিডিওর খণ্ডিত অংশ নিয়ে ভুয়া শিরোনাম যুক্ত করে ঘটনাটি বাংলাদেশের দাবিতে টিকটকে প্রচার করা হচ্ছে। 

সুতরাং, ভারতের সেনা সদস্য কর্তৃক থানায় ঢুকে পুলিশ সদস্যদের মারধরের ঘটনা বাংলাদেশ দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img