বুধবার, অক্টোবর 9, 2024

আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করে প্রথম হ্যালো বলেননি

সম্প্রতি “হ্যালো’ একটা মেয়ের নাম। পুরো নাম মার্গারেট হ্যালো ( Margaret Hello)। তিনি আর কেউ নন – বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল এর গার্ল ফ্রেন্ড। গ্রাহাম বেল হলেন টেলিফোনের আবিষ্কারক। আবিষ্কারের পর তিনি প্রথম যে কথাটি বলেন তা হচ্ছে “হ্যালো” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন জাগোনিউজ২৪, বাংলাদেশ পোস্ট, বাংলানিউজ২৪, যুগান্তর। 

ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন নিউজ১৮

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মার্গারেট হ্যালো নামে গ্রাহামবেলের কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিল না এবং টেলিফোন আবিষ্কারের পর তিনি প্রথম শব্দ “হ্যালো” বলেননি বরং গ্রাহামবেলের স্ত্রীর নাম ছিল ম্যাবেল হাববার্ড অপরদিকে টেলিফোন যোগাযোগে “হ্যালো” শব্দের প্রচলন ঘটান টমাস আলভা এডিসন।

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক স্বাধীন, অলাভজনক গণমাধ্যম প্র‍তিষ্ঠান npr.org এ ২০১১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি “A (Shockingly) Short History Of ‘Hello’ ” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে অক্সফোর্ড ইংলিশ অভিধানের বরাতে জানা যায়, “হ্যালো” শব্দটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ১৮২৭ সালে। কিন্তু তখন এটি সম্বোধনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতো না। টেলিফোন আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত “হ্যালো” দ্বারা মূলত কারো মনোযোগ আকর্ষণ অথবা বিস্ময় প্রকাশ করা হতো। 

অভিধানটির বরাত দিয়ে প্রতিবেদনটি আরও জানায়, টমাস আলভা এডিসন “হ্যালো” শব্দটির সাধারণ ব্যবহারের সূচনা করেন। তিনি টেলিফোনে উত্তর দেওয়ার সময় ” হ্যালো” ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারীদের আহবান জানান।

অপরদিকে টেলিফোনের আবিষ্কারক আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল ভেবেছিলেন “Ahoy” শব্দটি হ্যালোর চেয়ে ভালো। অর্থাৎ টেলিফোন আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল আবিষ্কার করলেও টেলিফোন যোগাযোগে “হ্যালো” শব্দটির প্রচলন ঘটান মূলত টমাস আলভা এডিসন।

পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান Africacheck.org তে ২০১৯ সালের ২৮ জুন “No, ‘Margaret Hello’ was not phone inventor Alexander Graham Bell’s girlfriend” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটিতে Alexander Graham Bell: Giving voice to the world বইয়ের লেখক মেরি কে কারসনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলের মার্গারেট হ্যালো নামে কোনো বান্ধবী ছিল না।

১৮৭৬ সালের ৭ মার্চ বেল যখন প্রথম সফলভাবে টেলিফোনে কল করতে সমর্থ হন তখন তিনি সর্বপ্রথম কথা বলেছিলেন তার সহযোগী টমাস ওয়াটসনের সঙ্গে। তিনি তাকে বলেছিলেন, “মি. ওয়াটসন, এখানে আসুন। আমি আপনাকে দেখতে চাই।” 

এছাড়া গ্রাহাম বেল “হ্যালো” এর পরিবর্তে “Ahoy” শব্দটি ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।

অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলের সঙ্গে মার্গারেট হ্যালোর দাবিতে প্রচারিত ছবিটির সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, এটি মূলত তার স্ত্রী ম্যাবেল হাববার্ড।

মার্কিন ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান snopes.com এর ওয়েবসাইটে ২০১৪ সালের ১৫ মার্চ “The Hello Girl” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটিতে Wikimedia commons কে উদ্ধৃত করে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানটি জানায়, এই ছবিতে থাকা নারীটি মূলত তার স্ত্রী ম্যাবেল হাববার্ড।

যাকে তিনি টেলিফোন আবিষ্কারের পরের বছরই বিয়ে করেন এবং মৃত্যু অবধি তার সঙ্গেই ছিলেন।

এছাড়া ইতিহাস ভিত্তিক ওয়েবসাইট history.com এ ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর “Alexander Graham Bell” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ১৮৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের একটি বধির স্কুলে পাঠদানের সময় গ্রাহাম বেলের সঙ্গে বধির শিক্ষার্থী ম্যাবেল হাববার্ডের সঙ্গে পরিচয় হয়। যার সঙ্গে তিনি ১৮৭৭ সালের ১১ জুলাই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

অর্থ্যাৎ আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলের  মার্গারেট হ্যালো নামে কোনো বান্ধবী বা স্ত্রী ছিল না।

মূলত আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলের মার্গারেট হ্যালো নামে কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিল না এবং টেলিফোন আবিষ্কারের পর তিনি প্রথম শব্দ “হ্যালো” বলেননি বরং গ্রাহামবেলের স্ত্রীর নাম ছিল ম্যাবেল হাববার্ড। এছাড়া ১৮৭৬ সালের ৭ মার্চ বেল যখন প্রথম সফলভাবে টেলিফোনে কল করতে সমর্থ হন, তখন তিনি সর্বপ্রথম কথা বলেছিলেন তার সহযোগী টমাস ওয়াটসনের সঙ্গে। তিনি তাকে বলেছিলেন, “মি. ওয়াটসন, এখানে আসুন। আমি আপনাকে দেখতে চাই।” যার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া দাবির সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলের মার্গারেট হ্যালো নামের বান্ধবী এবং তার  টেলিফোন আবিষ্কারের পর সর্বপ্রথম হ্যালো বলার দাবিটি সত্য নয়; এটি সম্পূর্ণ গুজব।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img