টলিউড নায়িকা মিমি চক্রবর্তী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাননি, এটি ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও 

কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরবর্তী সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে ভারতের নায়িকা ও সাবেক সংসদ সদস্য মিমি চক্রবর্তী বাংলাদেশে চলমান কোটা আন্দোলনে সহিংসতায় শিক্ষার্থীদের নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারতীয় সংসদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। 

মিমি চক্রবর্তী

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতীয় সংসদে মিমি চক্রবর্তী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া পর লোকসভার অধিবেশনে মিমির শপথ গ্রহণের ভিডিওর কিছু ক্লিপের সাথে বাংলাদেশের চলমান কোটা আন্দোলনের কিছু ফুটেজ যুক্ত করে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে ভিডিওটির শুরুতে মিমি চক্রবর্তীকে ‘নমস্কার, সর্বপ্রথম আমি এখানে উপস্থিত সকল গুরুজনদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’ শীর্ষক বক্তব্য দিতে শোনা যায়। পরবর্তীতে ভিডিওর উপস্থাপক দাবি করেন, বাংলাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের গুলি চালিয়ে হত্যা করার বিষয়টি মিমি চক্রবর্তী ভারতীয় সংসদে তুলে ধরেছেন। এছাড়াও তিনি এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপের আহ্বানও জানান। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগও দাবি করেছেন বলে দাবি করে আলোচিত ভিডিওটির উপস্থাপক।

অনুসন্ধানে ভারতীয় সংসদ টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ২৫ জুন Trinamool Congress’ Mimi Chakraborty takes oath as Lok Sabha MP শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত এ সংক্রান্ত মূল ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওর শুরুতে দেখানো মিমি চক্রবর্তীর ফুটেজের সাথে উক্ত ভিডিওর  মিল রয়েছে।

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটিতে তাকে ‘নমস্কার, সর্বপ্রথম আমি এখানে উপস্থিত সকল গুরুজনদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমি শ্রীমতি মিমি চক্রবর্তী লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হইয়া ঈশ্বরের নামে শপথ করিতেছি যে, আমি বিধি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ভারতের সংবিধানের প্রতি প্রকৃত বিশ্বাস ও অনুগত্য প্রকাশ করিব। আমি ভারতের সর্ব বহুমত্য ও সংহতি রক্ষা করিয়া চলিব এবং যে কর্তব্য ভার আমি গ্রহণ করতে চলিয়াছি তাহা আমি বিশ্বস্তভাবে নির্বাহ করিব। জয় বাংলা। জয় ভারত। বন্দে মাতরম।’ শীর্ষক বক্তব্য দিতে শোনা যায়। এছাড়াও, ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, এটি মূলত ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর এলাকার সংসদ সদস্য হিসেবে মিমি চক্রবর্তীর নির্বাচিত হওয়ার পর তার শপথ গ্রহণের ভিডিও। 

পরবর্তীতে মিমি চক্রবর্তী বাংলাদেশে চলমান কোটা আন্দোলন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেছেন কিনা জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও ভারতীয় গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

মূলত, কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরবর্তী সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে ভারতের নায়িকা ও সাবেক সংসদ সদস্য মিমি চক্রবর্তী বাংলাদেশে চলমান কোটা আন্দোলনে সহিংসতায় শিক্ষার্থীদের নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারতীয় সংসদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মিমি চক্রবর্তী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেননি। প্রকৃতপক্ষে, লোকসভা নির্বাচনে জয় লাভের পর তার শপথ গ্রহণের সময় ধারণ করা একটি ভিডিওর কিছু অংশের সাথে চলমান কোটা আন্দোলনের কিছু ফুটেজ যুক্ত করে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, ভারতের নায়িকা মিমি চক্রবর্তীর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img