গত বছরের ০৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে জুলাই সনদ নিয়মিত আলোচনায় আছে। জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনার মাত্রা সম্প্রতি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের লেটারহেডে একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ছবিটি জুলাই সনদে বাংলাদেশ পুলিশের ১১ দফা সুপারিশের বিশেষ বিবেচনাধীন পত্রের।
ছবিটিতে ১১ দফা সুপারিশের তালিকা দেখতে পাওয়া যায় যেখানে সুপারিশ করা হয়,
“১. জুলাই সনদে এই আন্দোলনে পুলিশের ইতিবাচক তথ্য যথাযথভাবে তুলে ধরতে হবে
২. জুলাই আন্দোলনে নিহত পুলিশ সদস্যদের সঠিক তালিকা প্রকাশ করতে হবে
৩. জুলাই আন্দোলনে সকল পুলিশ হত্যার সুষ্ঠ তদন্ত করতে হবে
৪. জুলাই আন্দোলনে পুলিশ হত্যাকারীদের কোনোভাবেই জুলাই সনদে দায়মুক্তি দেওয়া যাবে না
৫. জুলাই আন্দোলনের প্রতিটি পুলিশ হত্যার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে
৬. পুলিশ হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে কোনোপ্রকার বাঁধা সৃষ্টি করা যাবে না
৭. জুলাই সনদে নিহত পুলিশ সদস্যদের কথা উল্লেখ থাকতে হবে
৮. জুলাই সনদে নিহত ও আহত পুলিশ সদস্যদের সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে
৯. জুলাই সনদ ঘোষণার পর থেকে পুলিশকে কোনো রাজনৈতিক দলের নিরাপত্তায় ব্যবহার করা যাবে না
১০. জুলাই সনদে পুলিশ সংস্কারের মৌলিক বিষয়গুলোও থাকতে হবে
১১. কোনো রাজনৈতিক দল পুলিশকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেনা এই সংক্রান্ত বিধিমালা জুলাই সনদে থাকতে হবে”।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জুলাই সনদ ইস্যুতে বাংলাদেশ পুলিশকে জড়িয়ে প্রচারিত পত্রটি আসল নয়। বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে আলোচিত ছবিটি ভুয়া বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে শুরুতে আলোচিত বিশেষ বিবেচনাধীন পত্রটি আসল হওয়ার সপক্ষে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করলেও আলোচিত ছবিটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
প্রচারিত পত্রটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে ‘মোঃ মেনহাজুল আলম পিপিএম’ এর স্বাক্ষর দেখতে পাওয়া যায়। এ বিষয়ে মেনহাজুল এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানার টিমকে নিশ্চিত করেন, প্রচারিত ছবিটি ভুয়া। তিনি আরো বলেন, “ঐ শাখার এআইজি আমি নই।”
এছাড়া, প্রচারিত পত্রটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে ‘রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ক্যারিয়ার প্ল্যানিং-২ শাখা’র উল্লেখ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করলে উল্লিখিত শাখার এআইজি হিসেবে মেনহাজুল এর বদলে ‘আফরিদা রুবাই’ এর নাম দেখতে পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগরের সাথেও যোগাযোগ করে। তিনি জানান, “সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরের নামে একটি ভুয়া চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু অনলাইন মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। চিঠিতে পুলিশ সদর দপ্তরের লেটারহেড ব্যবহার করে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের বক্তব্য নিম্নরূপঃ
১। উক্ত চিঠিটি বাংলাদেশ পুলিশের কোনো দপ্তর থেকেই ইস্যু করা হয়নি।
২। চিঠির বক্তব্য বানোয়াট, অনৈতিক ও পুলিশ সদর দপ্তরের অনুসৃত নীতিমালার পরিপন্থী।
৩। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী হিসেবে যার নাম দেয়া হয়েছে তিনি উল্লিখিত শাখাতেই কর্মরত নন।
এ ধরনের ভুয়া চিঠি তৈরি বা প্রচারে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সুতরাং, জুলাই সনদে বাংলাদেশ পুলিশের ১১ দফা সুপারিশ দাবিতে প্রচারিত বিশেষ বিবেচনাধীন পত্রটি ভুয়া ও বানোয়াট।
তথ্যসূত্র
- Statement of Md. Menhazul Alam, PPM, AIG (Personal Management-2)
- Statement of Inamul Haque Sagor, AIG (Media & PR), Bangladesh Police Headquarter