আরটিভি’র ফটোকার্ডের শিরোনাম বিকৃত এবং ছবি পরিবর্তন করে ঢাবি শিক্ষার্থীর নামে ভুয়া তথ্য প্রচার

সম্প্রতি, “ফেসবুকে সুইসাইড নোট লিখে পোস্ট, পুলিশ গিয়ে দেখে হাত মারছে ঢাবি শিক্ষার্থী” শীর্ষক শিরোনামের সাথে এক ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করে মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভি’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

ঢাবি শিক্ষার্থী

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক  

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত শিরোনামে মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভি কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আরটিভি’র ডিজাইন সম্বলিত উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আরটিভি’র প্রচারিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে সংবাদটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা  হয়েছে ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা তারিখ এবং আরটিভি’র লোগোর সূত্র ধরে আরটিভি’র ফেসবুক পেজে গত ৬ সেপ্টেম্বর “সুইসাইড নোট লিখে ফেসবুকে পোস্ট, পুলিশ গিয়ে দেখে আড্ডা দিচ্ছেন যুবক” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ফটোকার্ড ও পোস্টের কমেন্টে একই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, ফটোকার্ডটিতে কোনো ব্যক্তির ছবি নয় বরং সুইসাইড নোটের ছবি দেখা যায়।

Photocard Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, আরটিভি’র ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এই ফটোকার্ডকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে শিরোনাম বিকৃত এবং ছবি পরিবর্তন করে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।  

আরটিভি’র এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজবাড়ীর শহরের ৭নং ওয়ার্ডের ভবানিপুর গ্রামে প্রেমের সম্পর্কে ভাটা পড়ায় এক যুবক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যার মিথ্যে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সুইসাইড নোটটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে জেলা পুলিশের নজরে আসে। এ সময় তাৎক্ষণিক পুলিশের মোবাইল টিম ওই যুবককে উদ্ধার করতে বাড়িতে গিয়ে জানতে পারে তিনি ফেসবুকে মিথ্যা পোস্ট দিয়েছেন।

এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে ফেসবুকে ছড়িয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। শামিম হোসেন নামে উক্ত ব্যক্তি আলোচিত ছবিটি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রোফাইল পিকচার হিসেবে আপলোড করেন গত ২ সেপ্টেম্বর। শামিমের অ্যাকাউন্ট থেকে জানা যায়, তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা করছেন। 

Screenshot source: Facebook

মূলত, রাজবাড়ীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ফেরদৌস নাঈম ফেসবুকে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যার মিথ্যে হুমকি দেওয়ার পর পুলিশের মোবাইল টিম ওই যুবককে উদ্ধার করতে বাড়িতে গিয়ে দেখে পরিবারের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে যুবক। এ বিষয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভি’র ফেসবুক পেজে ‘সুইসাইড নোট লিখে ফেসবুকে পোস্ট, পুলিশ গিয়ে দেখে আড্ডা দিচ্ছেন যুবক’ শীর্ষক শিরোনামে ফটোকার্ড প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উক্ত ফটোকার্ডে থাকা ছবিটির স্থলে ঢাবির আরেক শিক্ষার্থীর ছবি বসিয়ে এবং ভিন্ন শিরোনামে আরটিভি’র ফটোকার্ড দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। 

প্রসঙ্গত, পূর্বেও একই ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করে আরেক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল২৪ এর নকল ফটোকার্ড প্রচার করা হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, আরটিভি’র ফটোকার্ডে থাকা ঢাবির এক শিক্ষার্থীর সংবাদে আরেক শিক্ষার্থীর ছবি বসিয়ে ভিন্ন শিরোনামে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা এবং আলোচিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img