“যমুনা নদীর কাছের একটি ব্রিজের নিচে ১২ বছরের এক বালক গরীব শিশুদের শিক্ষাদান করছে” দাবি করে বিগত কয়েক বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উক্ত তথ্যটি প্রচার হয়ে আসছে।
যা দাবি করা হচ্ছে
গত ২৫ মার্চ ফেসবুকে ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত’ নামক পেজে “মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) দাবি করা হয়, “যমুনা নদীর কাছে একটি ব্রিজের তলায় ১২ বছরের এই বালকটি প্রতিদিন স্কুল থেকে যা কিছু শিখে আসে, সেগুলো নিজের কলোনিতে থাকা গরীব শিশুদের শেখায়।”
পোস্টে একটি ছবিও যুক্ত করা হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি ব্রিজের নিচে এক কিশোর দেয়ালে টাঙানো কালো বোর্ডে লিখছে। কিশোরের পেছনে বেশ কয়েকটি সারিতে বেশকিছু শিশু বসে আছে। কিশোরের পাশে একজন ব্যক্তিকেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
একই দাবিতে ২০২২ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
২০২১ সালে একই দাবিতে ছড়িয়ে পড়া কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
২০২০ সালে একই দাবিতে ছড়িয়ে পড়া কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, যমুনা নদীর কাছের ব্রিজের নিচে ১২ বছরের এক বালকের গরীব শিশুদের শিক্ষাদান করার দাবিটি সঠিক নয় বরং ভারতের ঐ ব্রিজের নিচে বিনামূল্যের উক্ত শিক্ষাদান স্থানে শিক্ষকরাই নিয়মিত পাঠদান করেন।
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের শাখা প্রতিষ্ঠান Share America এর ওয়েবসাইটে ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর The world needs 4 million new teachers. Is your country running short? শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে যুক্ত একটি ছবির সাথে দাবিকৃত ছবিটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। AP Images এর তোলা ছবিটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “একজন শিক্ষক নতুন দিল্লিতে একটি গণপরিবহন সেতুর নীচে দরিদ্র শিশুদের জন্য একটি বিনামূল্যের স্কুলে ব্ল্যাকবোর্ড থেকে পড়া ছাত্রের কথা শুনছেন৷”
পরবর্তীতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘Huffpost’ এর ওয়েবসাইটে ২০১২ সালের ৪ ডিসেম্বর “School Under Btidge In New Delhi Offers Free Education To India’s Poor Children” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে যুক্ত একটি ছবির সাথে দাবিকৃত ছবিটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম AP এর ফটো সাংবাদিক আলতাফ কাদরির তোলা ছবিটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “২০১২ সালের ৬ নভেম্বর তোলা ছবিটিতে, নয়া দিল্লীতে মেট্রো ব্রিজের নিচের একটি বিনামূল্যে স্কুলে ভারতীয় দরিদ্র শিশুরা বিল্ডিংয়ের দেওয়ালে লাগানো কালো বোর্ড থেকে পড়ছে।”
অনুসন্ধানে আলতাফ কাদরি’র ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে “SCHOOL FOR LESS FORTUNATE” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবিকৃত মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে একই স্থানের একাধিক ছবি যুক্ত করে বলা হয়, “রাজেশ কুমার শর্মা, একজন ভারতীয় ব্যক্তি তার বন্ধুর সাথে এক বছর আগে একটি মেট্রো ব্রিজের নিচে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য একটি বিনামূল্যে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি প্রতিদিন কমপক্ষে ৪৫ জন শিশুকে পড়ান। ২০১২ সালের নভেম্বরে এই ছবিগুলো প্রকাশিত হওয়ার পরে স্কুলটি একটি অপ্রতিরোধ্য সমর্থন পেয়েছিল। দূর-দূরান্ত থেকে জনহিতৈষীরা স্কুলের শিশুদের নতুন সোয়েটার, জুতা, মোজা, স্কুল ব্যাগ, নতুন মেঝে এবং পরিষ্কার বোতলজাত পানীয় দিয়ে সাহায্য করেছিল।”
পরবর্তীতে আলতাফ কাদরির সাথে যোগাযোগের করে রিউমর স্ক্যানার টিম। আলতাফ রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “ছবিটি আমার তোলা। এটি একটি মেট্রো ফ্লাইওভারের নিচে কম সুবিধাপ্রাপ্ত শিশুদের জন্য একটি স্কুল। ব্রিজটি যমুনা নদীর কাছে।”
মূলত, ২০১২ সালে এপি’র ফটো সাংবাদিক আলতাফ কাদরি ভারতের নয়াদিল্লির যমুনা নদীর কাছের একটি মেট্রো ব্রিজের নিচে রাজেশ কুমার নামক এক ব্যক্তির উদ্যোগে স্থাপিত একটি বিনামূল্যের স্কুলের ছবি তোলেন। ছবিতে একটি শিশুকে কালো বোর্ডে কিছু লিখতে দেখা যাচ্ছিল। পাশে শিক্ষক দাঁড়িয়েছিলেন। পরবর্তীতে সে ছবিকে এক ১২ বছরের বালকের প্রতিদিন গরীব শিশুদের পড়া শেখানোর দাবিতে বিগত কয়েক বছর ধরে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, মেট্রো ব্রিজের তলায় ১২ বছরের এক বালকের গরীব শিশুদের শিক্ষাদান করার দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Share America: The world needs 4 million new teachers. Is your country running short?
- Huffpost: School Under Btidge In New Delhi Offers Free Education To India’s Poor Children
- Altaf Qadri: SCHOOL FOR LESS FORTUNATE
- Statement from Altaf Qadri, AP