নারায়ণগঞ্জের কথিত যুবদল কর্মীকে শিবিরের হত্যার দৃশ্য দাবিতে ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট করায় নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ার কথিত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও যুবদল কর্মী মাসুদ শিবিরের নেতাকর্মীরা হত্যা করেছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। প্রচারিত পোস্টগুলোতে আরও দাবি করা হয়, শিবিরের বিরুদ্ধে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে নৌকায় নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। 

এ ঘটনায় সুজন, আলম ও সাব্বির নামের শিবিরের কথিত তিন নেতাকর্মী জড়িতে বলেও পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত একই ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি নারায়ণগঞ্জে শিবিরের নেতাকর্মী দ্বারা মাসুদ নামের কথিত কোনো যুবদল নেতার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে শরীয়তপুরের কীর্তিনাশা নদীর তীরে ডাকাতি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাত দলকে ধরে গণধোলাই দেয় স্থানীয় লোকজন। উক্ত ঘটনার ভিডিও এটি।

আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জে মাসুদ নামের কোনো যুবদল নেতাকে হত্যার তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি নারায়ণগঞ্জে সাম্প্রতিক সময়ে হওয়া কোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিবিরের সংশ্লিষ্টতার তথ্যও পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Md Abbas’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ০১ মার্চ প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওতে থাকা ব্যক্তি, নৌকা এবং পোশাকের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। তবে প্রাপ্ত ভিডিওটি আলোচিত ভিডিওটির বিপরীত পাশ থেকে ধারণ করা হয়েছে।

Video Comparison by Rumor Scanner 

মো. আব্বাস তার পোস্টে দাবি করেন, শরীয়তপুরে গণপিটুনিতে দুই ডাকাত নিহত। উক্ত ঘটনার ভিডিও এটি। উক্ত ঘটনার ভিডিও মিরর করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

ওই সময় একই তথ্যে আরও একাধিক ব্যক্তি ভিডিওটি পোস্ট করেন। দেখুন– এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

উক্ত সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ০১ মার্চ ‘‘ডাকাতি’ করে পালানোর সময় নদীতে নেমে ধাওয়া, পাল্টা গুলি-ককটেল, গণপিটুনিতে নিহত ২’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া এলাকায় কীর্তিনাশা নদীর তীরে ‘ডাকাতি’ করে পালানোর সময় শরীয়তপুর সদরের কীর্তিনাশা নদীর দুই পাড় ও নদীতে নেমে সন্দেহভাজন ডাকাত দলকে ধাওয়া দেন স্থানীয় লোকজন। এ সময় ওই দল স্থানীয় লোকজনকে লক্ষ্য করে গুলি ও ককটেল ছোড়ে। পরে স্পিডবোট ফেলে ওই দলের সদস্যরা একটি ইটভাটায় আশ্রয় নিলে স্থানীয় লোকজন তাদের ঘিরে ধরে পিটুনি দেন। এতে দুজনের মৃত্যু হয়।

তখন একই তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছিল যমুনা টিভি, চ্যানেল ২৪, ডেইলি স্টার , ইত্তেফাকের মতো মূলধারার গণমাধ্যমগুলো।

পূর্বেও আলোচিত ভিডিওটি ছাত্রলীগ কর্মীকে হত্যার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হলে সেসময় দাবিটিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, গত ফেব্রুয়ারিতে শরীয়তপুরের স্থানীয় জনগণ কর্তৃক ডাকাতদের গণধোলাই দেওয়ার দৃশ্যকে নারায়ণগঞ্জে মাসুদ নামের কথিত যুবদল কর্মীকে শিবিরের হত্যার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img