আ.লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় সন্তানের সামনে বাবাকে নির্যাতনের দাবিটি বিভ্রান্তিকর

সম্প্রতি, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মবের শিকার এক ব্যক্তিকে সন্তান ও পুলিশের সামনেই নির্যাতন করা হয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। প্রচারিত ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যাচ্ছেন সেসময় তার মেয়ে তাকে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ছে। সেই মুহুর্তে কেউ একজন আটক ওই ব্যক্তিকে থাপ্পড় মারেন।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এক্স (সাবেক টুইটার)-এ প্রচারিত একই ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কোনো ব্যক্তিকে সন্তানের সামনে নির্যাতনের দৃশ্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে পুলিশের সাম্প্রতিক এক অভিযানে মাদকসহ রুস্তম নামের ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। এ সময় তার মেয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সেই মুহূর্তে ধারণ করা ভিডিওটিকেই আলোচিত দাবিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Durbin News এর ফেসবুক পেজে গত ২৩ অক্টোবর একই ভিডিওটি প্রচারিত হতে দেখা যায়। ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, ভিডিওটি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে পুলিশি অভিযান চলাকালে ধারণ করা।

Video Comparison by Rumor Scanner 

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে অনলাইন গণমাধ্যম বার্তা২৪ এবং খবরের কথা-এর ফেসবুক পেজে সেদিন ওই ব্যক্তিকে আটকের বিস্তারিত আরও দুটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, জেনেভা ক্যাম্পে পুলিশি অভিযান চলাকালে ওই ব্যক্তিকে মাদকসহ আটক করা হয়। ভিডিওগুলোতে তার কাছ থেকে বেশ কিছু ইয়াবা উদ্ধার করতেও দেখা যায়। তবে ভিডিওগুলোর কোথাও তাকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার জন্যে আটক করা হয়েছে এমন উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা মেইল-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আটক ওই ব্যক্তির নাম রুস্তম। জেনেভা ক্যাম্পে মাদক বিক্রির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় তার শিশুসন্তান বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলে ঘটনাস্থলে থাকা একজন ব্যক্তি রুস্তমকে চড় মেরে আরও মাদক আছে কি না জানতে চান। এতে শিশুটির কান্না আরও বেড়ে যায়। পরে পাশ থেকে একজন এসে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, রুস্তমের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় প্রায় ১৭টির বেশি মামলা রয়েছে।

একই বিষয়ে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২৩ অক্টোবর জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসার দুই পক্ষের সংঘর্ষে ‘ককটেল’ বিস্ফোরণে মো. জাহিদ নামের এক তরুণ নিহত হন। ওই ঘটনার পর সেদিন সন্ধ্যায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে, যার মধ্যে রুস্তমও ছিলেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুয়েল রানা প্রথম আলোকে বলেন, রুস্তম শুধু মাদক ব্যবসায় যুক্ত নন, তিনি জাহিদ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিও।

এদিকে, এনটিভি-তে ২৭ অক্টোবর প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, জাহিদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার চার আসামিকে দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ডে নেওয়া ওই চারজনের তালিকায় রুস্তমের নামও রয়েছে।

অর্থাৎ, ভিডিওতে দেখা রুস্তমকে গ্রেফতারের কারণ তার রাজনৈতিক পরিচয় নয়। মাদক ব্যবসার অভিযোগ ও জাহিদ হত্যা মামলার এজাহারে তার নাম থাকায় তাকে আটক করা হয়েছে।

সুতরাং, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে সন্তান ও পুলিশের সামনেই নির্যাতন করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img