শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার প্রমাণ মেলেনি শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা  

সম্প্রতি, “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ’ণ’হ’ত্যা’র কোনো প্রমাণ মেলেনি” শিরোনামে হিউম্যান রাইটস-কে উধদৃত করে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা এবং কয়েকজন শীর্ষ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা জড়িত বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ‘হিউম্যান রাইটস’ নামে একটি সংস্থাকে তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে, ‘হিউম্যান রাইটস’ নামে কোনো সংস্থার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কাছাকাছি, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নামে নিউইয়র্ক-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থার সন্ধান পাওয়া যায়, যেখানে বাংলাদেশ সেকশনে বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিষয়াবলির অস্তিত্ব রয়েছে। 

সংস্থাটির বাংলাদেশ বিষয়ক সেকশন পর্যবেক্ষণে, সর্বশেষ গত ০৮ এবং ০৯ অক্টোবরে প্রকাশিত দুইটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ‘Bangladesh: New Crackdown Under Anti-Terrorism Law’ শিরোনামে গত ০৮ অক্টোবরে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হচ্ছে, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার নতুন সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সমালোচকদের দমন করতে যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে, এতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং সরকার আগের মতোই রাজনৈতিক নিপীড়নের পথে হাঁটছে। 

এছাড়া, গত ০৯ অক্টোবরে ‘In Bangladesh a Step toward Justice’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির বিবরণী থেকে জানা যায়, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে বাংলাদেশ সরকার। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একে ন্যায়বিচারের দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বললেও বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও মৃত্যুদণ্ডের আশঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। 

এর আগে গত ২৮ আগস্টে ভারত থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুশ ইন বিষয়ক আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে বলা হচ্ছে, ভারত সরকার ২০২৫ সালের মে মাস থেকে শতাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে জোরপূর্বক ফেরত পাঠিয়েছে এবং আরও অনেককে ইচ্ছামতো আটক ও নির্যাতন করেছে। সংস্থাটি বলেছে, এসব পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং মুসলিম রোহিঙ্গাদের প্রতি বৈষম্যমূলক নীতির প্রতিফলন। 

অর্থাৎ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এ সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে কোথাও ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’র কোনো প্রমাণ মেলেনি’ শীর্ষক দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

পাশাপাশি, দেশিয় মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রেও আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। প্রতিবেদনটিতে, বাংলাদেশে সংঘটিত গুম ও খুনের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কয়েকজন শীর্ষ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানায় সংস্থাটি। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে দেশিয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখুন এখানে।  

সুতরাং, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’র কোনো প্রমাণ মেলেনি জানিয়ে ‘হিউম্যান রাইটস’ এর নামে প্রচারিত দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img