জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের হলে উপস্থিত থাকার দাবিটি মিথ্যা

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সফরসঙ্গী বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। গত ২৬ সেপ্টেম্বর এই অধিবেশনে ভাষণ দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ড. ইউনূস ও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় অনেক দেশের প্রতিনিধি হল পরিত্যাগ করলেও হলে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সফরসঙ্গী বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতিসংঘের অধিবেশনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সফরসঙ্গী বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের হলে ছিলেন না, যা নেতানিয়াহুর বক্তব্যের একাধিক লাইভ ভিডিও যাচাই করে নিশ্চিত হওয়া যায়।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জাতিসংঘের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৬ সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের অধিবেশনে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পুরো ভাষণের ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির ৭ মিনিট ১০ সেকেন্ড, ২০ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড ও ৩৪ মিনিট ১৭ সেকেন্ডে বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত আসন দেখা যায়, যেখানে আসনটি ফাঁকা ছিল।

Screenshot : UN

এছাড়াও, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর ইউটিউব চ্যানেলে নেতানিয়াহুর ভাষণের পুরো বক্তব্যের সরাসরি সম্প্রচার পাওয়া যায়। পাশাপাশি জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ডয়চে ভেলে’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২৬ সেপ্টেম্বরে সাধারণ অধিবেশনের শুরু থেকে সরাসরি সম্প্রচার পাওয়া যায় যেখানে নেতানিয়াহুর পুরো ভাষণের দৃশ্যও রয়েছে৷ উপরোক্ত ভিডিওগুলোতেও নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় বাংলাদেশের আসন ফাঁকা দেখা যায়।

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদারের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২৭ সেপ্টেম্বরে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টে আজাদ মজুমদার দাবি করেন, ‘নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় আজ সকালে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার দুটি পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। প্রথম কর্মসূচি ছিল বিভিন্ন দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম নিজামী গাঞ্জাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক, যা সকাল ৯টায় হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় কর্মসূচি ছিল ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক, যা অনুষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সকাল সাড়ে ১০টায়। কর্মসূচি শেষে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল যখন সাধারণ পরিষদের হলরুমে প্রবেশ করে, তখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন সেন্ট ভিনসেন্টের প্রধানমন্ত্রী রালফ গনজালভেস। এর আগে ইসরাইল, পাকিস্তান ও চীনের প্রধানমন্ত্রীরা তাদের বক্তব্য শেষ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সময় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিল—এমন প্রচারণা আসলে পতিত শক্তির অপপ্রচার ছাড়া কিছুই নয়। মিথ্যাই এখন তাদের একমাত্র অবলম্বন।’

এছাড়া, ড. ইউনূসসহ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের বসে থাকার যে ছবির মাধ্যমে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে, সেই ছবিটি প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে গতকাল ২৬ সেপ্টেম্বরে পোস্ট করা হয়েছিল। পোস্টটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ছবিটি ২৬ সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের আগের ছবি যেখানে ড. ইউনূস তার নিজের বক্তব্য প্রদানের অপেক্ষায় রয়েছেন।

Screenshot : Facebook/Chief Adviser GOB

উপরোক্ত তথ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, জাতিসংঘের অধিবেশনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীরা হলে উপস্থিত ছিলেন না।

সুতরাং, জাতিসংঘের অধিবেশনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল হলে উপস্থিত থাকার দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img