সম্প্রতি ‘ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে উপজেলা যুবলীগ সভাপতিকে দিনে-দুপুরে অপহরণ করলো সন্ত্রাসীরা। ভিডিওতে সন্ত্রাসীদের দেখা গেলেও পুলিশ এখনো উদ্ধার করতে পারেনি।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে৷
ভিডিওটিতে কয়েকজন ব্যক্তি মিলে একজন ব্যক্তিকে জোরপূর্বক একটি প্রাইভেট কারে তুলতে দেখা যায়।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে কোনো উপজেলার যুবলীগের নেতাকে অপহরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, গত এপ্রিল মাসে ঢাকার উত্তরায় সংঘটিত একটি অপহরণের ঘটনার ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। উত্তরায় অপহরণের ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যক্তির কোনো রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Noman Ahmed নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৮ এপ্রিল প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সেদিন দুপুর ০২:৫০ ঘটিকায় উত্তরা সেক্টর ০৬ এর প্রধান সড়কে একটি প্রাইভেট কারে একজন ব্যক্তিকে জোরপূর্বক তোলা হয়েছিল। তবে, দুঃখজনকভাবে গাড়িটির নম্বর প্লেট রেকর্ড করা যায়নি।
এ বিষয়ে একাধিক গণমাধ্যমের (১, ২) ওয়েবসাইটে গত ১৯ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনে একই ধরণের চিত্র ও তথ্য পাওয়া যায়।
জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর উত্তরা থেকে দিন দুপুরে এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, কালো মাস্ক পরা এক ব্যক্তিকে ধাক্কা দিয়ে একটি সাদা প্রাইভেট কারে তুলছেন দুই ব্যক্তি। তখন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক ব্যক্তিও যোগ দেয়। এরপর তারা ধাক্কা দিয়ে মাস্ক পরিহিত ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলে ফেলেন। এ সময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তাদের ওপর চড়া হয় ওই ব্যক্তিরা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নিশ্চিত হওয়া গেছে- ভিডিওটি উত্তরা পূর্ব থানা এলাকার। তবে কবেকার ঘটনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিভাগের সকল অফিসারকে এ বিষয়ে খোঁজ নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউই এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেননি’।
পরবর্তীতে, মূলধারার গণমাধ্যম আজকের পত্রিকা ওয়েবসাইটে গত ৩০ এপ্রিল ‘উত্তরায় প্রাইভেট কারে অপহরণ, ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেপ্তার ২’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উত্তরার ওই অপহরণের ঘটনায় ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. হাসানুজ্জামান শাওন (৩৬) ও মো. আমির হোসেন (৩২)। দুজনকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিসি মো. মহিদুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
ডিসি মহিদুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে- পাওনা টাকা আদায়ের জন্য ভুক্তভোগী আরিফকে অপহরণ করে রূপগঞ্জে নিয়ে যায়। পরে টাকা আদায়ের পর আরিফকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপহরণ মামলা করেছে। পলাতকদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
অপরদিকে, উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামীম আহমেদ জানান, অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার ও অপহরণে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার জব্দের পর গত ২৯ এপ্রিল পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। পরবর্তীতে তাঁদের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গ্রেপ্তারে বিলম্বের বিষয়ে ওসি শামীম বলেন, ‘অপহরণের পর ভুক্তভোগী আরিফ বা তাঁর স্বজনদের কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। সেই সঙ্গে অপহরণের ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হওয়ার পর অপহরণকারীরা পুলিশি তৎপরতা টের পেয়ে কক্সবাজারে আত্মগোপন করে। তাঁরা ঢাকায় আসলে তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় গ্রেপ্তার করা হয়’।
উক্ত প্রতিবেদনে বা অন্য কোনো গণমাধ্যমে অপহরণের ভুক্তভোগী আরিফের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় কিংবা সংশ্লিষ্টতা উল্লেখ করা হয়নি।
সুতরাং, মোহাম্মদপুর থেকে উপজেলা যুবলীগ সভাপতিকে অপহরণের ভিডিও দাবিতে উত্তরায় অপহরণের ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Noman Ahmed – Facebook Post
- বাংলা ট্রিবিউন – উত্তরায় প্রকাশ্যে যুবককে তুলে নেওয়ার ভিডিও, মিসিং রিপোর্টের অপেক্ষায় পুলিশ
- Channel 24 – দিন দুপুরে এক ব্যক্তিকে তুলে নেয়ার ভিডিও ভাইরাল, কুলকিনারা পাচ্ছে না পুলিশ
- আজকের পত্রিকা – উত্তরায় প্রাইভেট কারে অপহরণ, ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেপ্তার ২