বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের কোনো ঘটনা ঘটেনি, এনসিপিকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার

জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগে গত ২৪ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিএনপি। 

এরই মধ্যে ‘বিএনপির নেতা ফজলুর রহমান শোকজের পরে, গ্রামের বাড়িতে এনসিপির সন্ত্রাসীদের হামলা ও আগুন দিয়েছে।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের গ্রামের বাড়িতে জাতীয় নাগরিক পার্টি ( এনসিপি) কর্তৃক আগুন দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাছাড়া, এই ভিডিওটি ফজলুর রহমানকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগে বিএনপি থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার আগে থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ২২ আগস্ট কিশোরগঞ্জের বৌলাই এলাকায় যুবদলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এটি সেই ঘটনারই ভিডিও।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানের গ্রামের বাড়িতে আগুনের ঘটনা ঘটেছে কিনা জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে, ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Imam Hossain Milon’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২২ আগস্ট প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘কিশোরগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবদলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, গুলি এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে একজন নিহত ও কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে! আজ শুক্রবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই পুরান বাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা যুবদলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আলী আব্বাস ওরফে রাজন ও সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদুল হকের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।’

উল্লিখিত পোস্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে আলোচিত ভিডিওর ঘটনার বিষয়ে গত ২২ আগস্ট বাংলাভিশন, চ্যানেল ২৪ -এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ২২ আগস্ট কিশোরগঞ্জের বৌলাই এলাকায় যুবদলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষে একজন নিহত এবং অনেকেই আহত হয়েছেন। বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।

একই ঘটনায় প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রের বরাতে বলা হয়, ‘জেলা যুবদলের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আলী আব্বাস ওরফে রাজন এবং সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদুল হকের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এর জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।’

অর্থাৎ, ভিডিওটি কিশোরগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও নৈরাজ্যের ঘটনায় বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার।  

সুতরাং, কিশোরগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও নৈরাজ্যের ঘটনায় বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ভিডিওকে বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের গ্রামের বাড়িতে এনসিপি কর্তৃক আগুন দেওয়া হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img