সম্প্রতি, সেনাবাহিনীর প্রধান ওয়াকার উজ জামান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অবৈধ ঘোষণা করে কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করেছে দাবিতে ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অবৈধ ঘোষণা করে সেনাপ্রধান কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করেননি। প্রকৃতপক্ষে, সাংবাদিক মাসুদ কামাল ও কাজী রুনার ভিডিওর সাথে ভারতীয় অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মনজ দাসের অপ্রাসঙ্গিক একটি ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার এতে মোট তিনজন ব্যক্তির ভিডিও ক্লিপ দেখতে পায়। যার একটি সাংবাদিক মাসুদ কামালের, আরেকটি সাংবাদিক কাজি রুনার এবং অপরটি মনজ দাস নামের একজন ভারতীয় ব্যক্তির। ভিডিওটিতে দেখতে পাওয়া মাসুদ কামালের ক্লিপটিতে পুরো ভিডিও জুড়ে কোনো অডিও নেই। তাই সেটি এই দাবির সাথে প্রাসঙ্গিক নয়। কাজী রুনা ২৬ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন শুনানির বিষয় নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করেন। তিনি জানান যদি শুনানি পক্ষে যায় তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফেরার একটি সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তিনি তার বক্তব্যের কোথাও সেনাপ্রধানের ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অবৈধ ঘোষণা করা কিংবা কোর্ট মার্শাল করে ক্ষমতা গ্রহণ করার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। অপরদিকে মনজ দাসকে ভারত, পাকিস্তান, চীন এবং বাংলাদেশের ভৌগোলিক রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করতে শোনা যায়। যার সাথে আলোচিত দাবি সম্পর্কিত নয়।
ভিডিও যাচাই ১
ভিডিওর শুরুতে দেখতে পাওয়া কাজী রুনার ফুটেজটির বিষয়ে অনুসন্ধানে News Analysis by Kazi Runa নামের তার ইউটিউব চ্যানেলটি পর্যালোচনা করে গত ২১ আগস্ট কে হচ্ছেন পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ? ইউনূসকে কি বিদায় নিতেই হচ্ছে ? শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটি পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহৃত কাজী রুনার ফুটেজের সাথে উক্ত ভিডিওর বক্তব্য ও তার পোশাকের হুবহু মিল রয়েছে। মূলত, ডিজিটাল প্রযুক্তি সহায়তায় এই ভিডিওটির ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করে তা আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে তাকে ২৬ আগস্ট ৬ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন শুনানির বিষয় নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করতে শোনা যায়। তবে তার সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
ভিডিও যাচাই ২
পরবর্তীতে ভিডিওতে দেখতে পাওয়া মনজ দাস নামের ব্যক্তির ফুটেজটির বিষয়ে অনুসন্ধানে তার নামের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে CALCUTTA DIALOGUES নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের সন্ধান পাওয়া যায়। উক্ত ইউটিউব চ্যানেলটির বিবরণী থেকে জানা যায়, চ্যানেলটি মনজ দাস নামের ওই ব্যক্তির।

পরবর্তীতে চ্যানেলটি পর্যালোচনার মাধ্যমে গত ২২ আগস্ট চ্যানেলটিতে Rangpur in the north, Chittagong in the south: Ready forces শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওর বক্তব্য ও মনজ দাসের পোশাকের সাথে আলোচিত ভিডিওতে তার ব্যবহৃত ফুটেজের বক্তব্য ও পোশাকের হুবহু মিল রয়েছে। আলোটিত ভিডিওটিতে ব্যবহারের ক্ষেত্রে আগের ভিডিওর মত এটির ব্যাকগ্রাউন্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় পরিবর্তন করা হয়েছে। ভিডিওটিতে তাকে ভারত, পাকিস্তান, চীন এবং বাংলাদেশের ভৌগোলিক রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করতে শোনা গেলেও আলোচিত দাবির বিষয়ে কোনো কথা বলতে শোনা যায়নি।
সেনাপ্রধান প্রধান উপদেষ্টার বৈধতা প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করলে কিংবা কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে সেনাপ্রধানের ক্ষমতা গ্রহণের মতো কোনো ঘটনা ঘটলে তা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হতো। তবে গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, কয়েকটি অপ্রাসঙ্গিক ফুটেজ ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে আলোটিক ভিডিওটি তৈরি করে অধিকতর ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়।
সুতরাং, প্রধান উপদেষ্টাকে অবৈধ ঘোষণা করে সেনাপ্রধান কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- News Analysis by Kazi Runa Youtube Channel: কে হচ্ছেন পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ? ইউনূসকে কি বিদায় নিতেই হচ্ছে ?
- CALCUTTA DIALOGUES Youtube Channel: Rangpur in the north, Chittagong in the south: Ready forces
- Rumor Scanner’s Analysis