নোয়াখালীর আন্ডারচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতিকে হত্যার দাবিটি মিথ্যা

গাছের সঙ্গে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহের একটি ভিডিও ‘নোয়াখালীর আন্ডারচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতিকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে দুর্বৃত্তরা’ শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। পোস্টগুলোতে ঝুলন্ত মরদেহের ব্যক্তিকে আন্ডারচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি বলে দাবি করা হয়।

উক্ত দাবিতে প্রচারিত কিছু ফেসবুক এবং এক্স পোস্ট এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আন্ডারচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতিকে হত্যা করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ওই ইউনিয়নের মো. মাহফুজুর রহমান (মাহফুজ) নামের এক যুবকের ঝুলন্ত মরদেহের ভিডিও প্রচার করে উক্ত দাবিটি করা হয়েছে। তবে, নিহত মাহফুজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত  ছিলেন না বরং, তার ফেসবুক আইডি থেকে তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত বলে জানা যায়। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ঘটনাটিকে আত্মহত্যা মনে করছে। তবে পরিবার দাবি করেছে বন্ধুর স্ত্রীকে পরকীয়া প্রেমে বাধা দেওয়ায় মাহফুজকে হত্যা করা হয়েছে।

ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানে গত ১৬ আগস্টের একাধিক ফেসবুক পোস্টে একই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে এটি নোয়াখালীর সদর উপজেলার ২০নং আন্ডারচর ইউনিয়ন ৯নং ওয়ার্ডের মাহফুজ আলম নামের এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

পরবর্তী অনুসন্ধানে ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়। “রাজমিস্ত্রির মরদেহ উদ্ধার, পরিবারের দাবি পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় হত্যা” শিরোনামে গত ১৭ আগস্ট আরটিভি’র একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়— “নোয়াখালী সদর উপজেলার আন্ডারচর ইউনিয়ন থেকে মো. মাহফুজ (২৫) নামের এক রাজমিস্ত্রির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের পরিবারের দাবি বন্ধুর স্ত্রীকে পরকীয়া প্রেমে বাধা দেওয়ায় মাহফুজকে হত্যা করা হয়েছে।

…সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.কামরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা মনে হচ্ছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তবে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন করে ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।”

ঘটনার কয়েকদিন পর নিহত মাহফুজের ঝুলন্ত মরদেহের ভিডিওটি প্রচার করে তাকে আন্ডারচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতির দাবি করা হয় এবং এটিকে রাজনৈতিক হত্যাকান্ড হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়। 

তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নিহত মাহফুজের আন্ডারচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতির হওয়ার দাবি মিথ্যা, এমনকি তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথেও জড়িত নয়। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং বিভিন্ন পোস্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় নিহত যুবক ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। আন্ডার চর ইউনিয়ন ছাত্রদলের পক্ষ থেকেও মো. মাহফুজকে নিজেদের কর্মী উল্লেখ করে দেয়া একটি শোক বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়। নিহতের একজন প্রতিবেশী নজরুল বলেন, ছাত্রলীগের সাথে জড়িত থাকার দাবিটি শতভাগ মিথ্যা। ছাত্রদলের সাথে জড়িত ছিলো সে। এছাড়াও, পুলিশের ময়নাতদন্তে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি। স্থানীয় একাধিক সাংবাদিকও নিহত মাহফুজের ছাত্রলীগের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি গুজব বলে নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়াও, অনুসন্ধানে উক্ত ইউনিয়নের সর্বশেষ কয়েকজন ছাত্রলীগ সভাপতি (আব্দুর জব্বার রাহাত, আব্বাস উদ্দিন প্রমুখ) এবং সভাপতি প্রার্থীদের অনুসন্ধান করে কেউ খুনের শিকার হয়েছেন এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। নিহত মাহফুজের কাজিন ও স্থানীয় যুবদল নেতা নিলয় মাসুদও ঐ ইউনিয়নের ছাত্রলীগ সভাপতি জীবিত আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।

সুতরাং, নোয়াখালীর আন্ডারচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতিকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখার দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

  • The deceased Mahfuj’s Facebook profile
  • News reports
  • Statements from locals and local journalists

আরও পড়ুন

spot_img