গাইবান্ধায় অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার চার ব্যক্তি জামায়াত কিংবা বৈছাআর সদস্য নয় 

সম্প্রতি, গোবিন্দগঞ্জে জামায়াত নেতার বাড়িতে যৌথ বাহিনীর সারারাত অভিযান, দেশীয় অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার চার জন – এই দাবিতে মোহনা টিভির লোগো যুক্ত একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

Sujan Datta’ ও ‘Abdur Razzak’ নামের দুটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে একই ভিডিওটি প্রচার করে ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, ‘গোবিন্দগঞ্জে সারা রাত যৌথবাহিনীর অভিযান চালিয়ে জুলাই সন্ত্রাসে ব্যবহৃত এবং বিভিন্ন সময়ে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি এবং হত্যা সহ বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহৃত হওয়া বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র এবং মাদকদ্রব্য সহ স্থানীয় জামায়াত নেতা এবং স্থানীয় সমন্বয়ককে গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনীর একটি দল।’ (বানান অপরিবর্তিত)

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার চারজন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী কিংবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নয় এবং অভিযান এই দুই সংগঠনের কোনো সদস্য্যের বাড়িতে হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, গ্রেফতারকৃতদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটিতে থাকা মোহনা টিভির লোগোর সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে গত ৫ জুলাই ‘যৌথ বাহিনীর সারারাত অভিযান, গোবিন্দগঞ্জে দেশীয় অ’স্ত্র মা’দকসহ গ্রেফতার চার’ ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

তবে প্রতিবেদনে গ্রেফতাকৃত ব্যক্তিদের কোনো  রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি এবং  অভিযানটি জামায়াত কিংবা সমন্বয়কদের বাড়িতে হয়েছে এমন তথ্যেরও উল্লেখ নেই।

Comparison: Rumor Scanner

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে একাত্তর টিভির ওয়েবসাইটে গত ৫ জুলাই ‘সেনা অভিযানে দেশীয় অস্ত্র ও মাদকসহ চার সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র ও মাদকসহ চার চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। শনিবার (৫ জুলাই) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা সেনা ক্যাম্পের মেজর ইনজামামুল আলম। এর আগে শুক্রবার (৪ জুলাই) দিনগত রাতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। গ্রেপ্তার সন্ত্রাসীরা হলেন- আজাদ মিয়া, আসাদ আলী, মোশাররফ হোসেস ও ছোটন ছোটন মিয়া।’

এছাড়াও বলা হয়, ‘সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার দিনগত রাতে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় জব্দ করা হয়‎ ইয়াবা, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও একটি খেলনা পিস্তল। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ’

এছাড়াও, বাংলাভিশন, এনটিভি, দেশ টিভি এর ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও প্রায় একই তথ্য জানা যায়।

 দৈনিক দেশ রূপান্তরের ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে প্রকাশিত ‘গাইবান্ধায় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ৪’ শিরোনামের প্রতিদেনে শেষের দিকে বলা হয়, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। একাধিক ব্যক্তি জানান, আজাদ মন্ডল ও তার লোকজন বিগত আওয়ামী লীগের সরকারের ছত্রছায়ায় ছিলেন। উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার অপরাধীদের গডফাদার ছিল তারা। তাদের ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলত না।’

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টাতার বিষয়ে জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম বলেন, “গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের সাথে জামায়াত বা সমন্বয়কদের সংশ্লিষ্টতা নেই।”

সুতরাং, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার চারজন জামায়াত কিংবা বৈছাআর সদস্য শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img