‘যা জানা গেল’ সাংবাদিকতা: ফ্যাক্টচেক পুনঃপ্রকাশে বিভ্রান্তিতে ফেলা হচ্ছে যেভাবে

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বাংলা সংবাদমাধ্যম ‘ঠিকানা’র ফেসবুক পেজে গত এপ্রিলে “সারজিস-নাফসিনের ‘ব্যক্তিগত মুহূর্তের’ ছবি নিয়ে যা জানা গেল” শিরোনামে একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়। প্রায় দেড় হাজার রিয়েক্টের এই পোস্টটিতে যে ১৭৫টি কমেন্ট পড়েছে সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, কিছু কমেন্টকারী এই শিরোনামে বিভ্রান্ত হয়ে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তি অর্থাৎ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফসিন মেহনাজের সমালোচনা করছেন। এসব কমেন্টকারী যে গণমাধ্যমটির সাইটে দেওয়া এ সংক্রান্ত সংবাদের বিস্তারিত পড়ে দেখেননি তা সহজেই অনুমেয়। পড়ে থাকলে জানতে পারতেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি ভিন্ন যুগলের ছবি বিকৃত করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ, ছবিটি সারজিস ও নাফসিনের নয়। 

গত মে মাসে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমকে নিয়ে একটি ফটোকার্ড প্রকাশ করে দেশের মূল ধারার টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভি। “মমতাজের বাড়িতে সেনা অভিযানে ৯০০ কোটি টাকা উদ্ধারের খবর, যা জানা গেল” শিরোনামের এই ফটোকার্ডে রিয়েক্ট পড়েছে ৩৮ হাজার। পোস্টের দুই হাজারের বেশি কমেন্ট বিশ্লেষণ করে এই ঘটনাকে সত্যি ভেবে নিয়ে নানা ধরণের মন্তব্য নজরে এসেছে। যেমন একজন লিখেছেন, “মমতাজ কে ধন্যবাদ জানানো উচিত সে দেশের টাকা দেশেই রেখেছে।” আরেকজনের দাবি, “এই টাকা গুলো রাষ্ট্রয় কোষাগারে জমা রাখা হোক। জাতির সামনে প্রকাশ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।” কেউ কেউ আবার এই গণমাধ্যমকেই দুষছেন কমেন্টে। একজন যেমন লিখেছেন, “শিরোনাম কি আর বিস্তারিত কি সাংবাদিক বাটপার।” অর্থাৎ, আসল ঘটনা যে ভিন্ন এবং তা যে শিরোনাম দেখে বোঝার উপায় নেই তা-ই বলার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। মূল ঘটনা হচ্ছে, মমতাজ বেগমের বাড়ি থেকে ৯০০ কোটি টাকা উদ্ধারের দাবিটি সঠিক নয়। এই দাবিতে যে ভিডিও ছড়ানো হয়েছে তা ভিন্ন ঘটনার একাধিক পুরোনো ভিডিও। 

আরো কিছু উদাহরণ দেখা যাক। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জড়িয়ে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার ফেসবুক পেজে একটি ফটোকার্ড প্রকাশ করে শিরোনাম দেওয়া হয় “ড. ইউনুসের গ্রামীণ ভবন পোড়ার বিষয়ে যা জানা গেল।” অর্থাৎ, এটা বোঝা যাচ্ছে যে, ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক ভবন পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে ফলোআপ নিউজ এটি। কিন্তু মূল সংবাদটা এমন, “ তবে, তথ্য যাচাইকারী সংস্থা রিউমর স্ক্যানার এই দাবির সত্যতা অস্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, আসলে গ্রামীণ ভবন নামে কোন ভবনে আগুন দেওয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মিথ্যা খবরটি প্রমাণবিহীনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।” 

“মির্জা ফখরুল স্ট্রোক করেছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল” ফটোকার্ডে এমন শিরোনাম দিয়ে গত ০৯ জুন একটি পোস্ট করা হয় ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম চ্যানেল২৪ এর ফেসবুক পেজে। ফটোকার্ডের শিরোনামে তার অসুস্থতা সংক্রান্ত দাবিটির বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য না থাকায় অনেক নেটিজেন বিভ্রান্ত হয়ে এই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে বিএনপির মহাসচিবকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করতে দেখা গেছে।  

একই ঘটনা ঘটেছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরর ক্ষেত্রেও। গত মার্চে মূলধারার তিনটি গণমাধ্যমের ফটোকার্ড নকল করে দাবি করা হয়, ওবায়দুল কাদের মারা গেছেন। তবে রিউমর স্ক্যানার সে সময় ফ্যাক্টচেক করে জানায়, এই দাবিতে উক্ত গণমাধ্যমগুলো কোনো ফটোকার্ড কিংবা সংবাদ প্রকাশ করেনি। গণমাধ্যমগুলোর ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডগুলো প্রচার করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত ফ্যাক্টচেক পুনরায় প্রকাশ করে আরেক গণমাধ্যম ‘ঢাকা পোস্ট’ শিরোনাম দেয়, “ওবায়দুল কাদেরের মারা যাওয়ার খবর নিয়ে যা জানা গেল।”

বাংলাদেশে ফটোকার্ডের মাধ্যমে গণমাধ্যম তাদের সংবাদ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এই সংস্কৃতি খুব বেশি পুরোনো নয়৷ ছবির মাধ্যমে উপস্থাপন এবং একটু বড় আকারের শিরোনাম দেওয়ার সুবিধা থাকায় কম সময়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এই পদ্ধতি। এই ফটোকার্ডের অপব্যবহারও দেখেছে গণমাধ্যমগুলো। শুধু গত ছয় মাসেই ২৯০টি ঘটনায় দেশের ৩৮টি গণমাধ্যমকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার, যার অধিকাংশই ফটোকার্ডের মাধ্যমে। কিন্তু এর বিপরীত চিত্রও আছে। 

ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিতই বিভিন্ন ভুয়া তথ্য শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় সেসব প্রতিবেদন গণমাধ্যমগুলো পুনরায় প্রকাশের হার বেড়েছে। রিউমর স্ক্যানার বরাবরই বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে আসছে। এর একটিই কারণ, প্রতিষ্ঠান হিসেবে বহুল সংখ্যক মানুষের কাছে ভুয়া তথ্যের ফ্যাক্টচেক পৌঁছে দেওয়া ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে গণমাধ্যমগুলোর। গণমাধ্যমগুলো তাদের প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত পরিচিতি এবং বিশ্বস্ততার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সহজেই মানুষের কাছে ফ্যাক্টচেকগুলো পৌঁছে দিতে পারে। এজন্য ফ্যাক্টচেকাররা সবসময়ই এই বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব রাখেন। কিন্তু এমন যদি হয়, ফ্যাক্টচেক সংক্রান্ত পোস্টে সঠিক তথ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকায় উল্টো মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ছেন, অনেক ক্ষেত্রে পোস্টের উপস্থাপনের ধরণের কারণে বিশ্বাস করে বসছেন ভুয়া তথ্যটাকেই। এমনটাই যে ঘটছে তা এই লেখার শুরুতে উপস্থাপিত চারটি উদাহরণ থেকেই স্পষ্ট।

ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ফ্যাক্টচেকে সাধারণত সিদ্ধান্তমূলক শিরোনাম দিয়ে থাকে; যাতে শিরোনাম দেখেই পুরো বিষয়টির সারসংক্ষেপ বোঝা যায়। কিন্তু গণমাধ্যম যখন সেসব ফ্যাক্টচেক পুনরায় প্রকাশ করছে তখন একই শিরোনাম দিচ্ছে না। রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুয়া তথ্যটিকে চটকদারভাবে শিরোনামে উপস্থাপন করে সঠিক তথ্যকে আড়াল করা হচ্ছে। তার পরিবর্তে উৎসাহিত করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে গিয়ে মূল সংবাদ পড়তে। চলতি বছর শুধু রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক থেকে এমন অন্তত শতাধিক সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে পুনরায় প্রকাশের ঘটনা ঘটেছে যেগুলোতে মূল শিরোনাম বদলে দিয়ে দাবি এবং তার সাথে ‘যা জানা গেল’ শব্দ যুগল যুক্ত করে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হয়েছে। 

এমন কোনো গবেষণা সাম্প্রতিক সময়ে হয়নি যা থেকে জানা যাবে ঠিক কতজন ফটোকার্ড সম্বলিত পোস্টে দেওয়া বিস্তারিত লিংকে গিয়ে পুরো খবর পড়ছেন। তবে পোস্টগুলোর কমেন্ট সেকশন পর্যবেক্ষণ করলে এ বিষয়ে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। এটি অনুমান করা কঠিন নয় যে, মানুষ গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে যেতে আগ্রহী হয় না। ফটোকার্ডের শিরোনাম দেখেই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায় এবং তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভুয়া তথ্যের পক্ষেই কমেন্ট করে। এই রীতি বেশ ভাবিয়ে তুলছে সচেতন মহলকে, ভাবাচ্ছে ফ্যাক্টচেকারদেরও। 

অনেক ক্ষেত্রে কমেন্টে কঠোর সমালোচনা দেখার পর বিভ্রান্তিকর শিরোনামের ফটোকার্ড পরিবর্তন করার নজিরও পাওয়া যাচ্ছে।

Collage: Rumor Scanner 

কিন্তু এর পূর্বেই ফটোকার্ডটি বেশ ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় মানুষের মনে স্বাভাবিকভাবেই পূর্বের শিরোনামটিই গেঁথে যায়। কারণ শিরোনাম বদলালেও পূর্বের পাঠকরা তা আর জানতে পারছেন না৷ এতে করে বিভ্রান্তি থেকে যাচ্ছেই।

সম্প্রতি এমন বিভ্রান্তিকর ফটোকার্ডের কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন সরকারের উপদেষ্টা ও একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বিশেষ করে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া গত মাসে তার বাড়িতে ১২০০ বস্তা চাল পাওয়া যাওয়া সংক্রান্ত অপতথ্যের শিকার হন। দাবিটি যাচাই করে রিউমর স্ক্যানার মিথ্যা হিসেবে শনাক্তের পর বিষয়টি আলোচনায় আসে। দেশটিভি এ সংক্রান্ত সংবাদের ফটোকার্ডের শিরোনাম দেয় ‘বাড়িতে মিলল ১২০০ বস্তা চাল যা বললেন উপদেষ্টা আসিফ’। আসিফ বিষয়টি নিয়ে তার ফেসবুক প্রোফাইলে অনেকটা বিরক্তির সুরেই বলেন, “১২০০ বস্তা চাল দেশ টিভির কার্যালয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এগুলা কি ধরনের সাংবাদিকতা করেন ভাই আপনারা?”


এনসিপির নেত্রী ডা. তাসনিম জারার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সম্পাদিত একটি ছবি নিয়ে সম্প্রতি ফ্যাক্টচেক করে রিউমর স্ক্যানার। দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে তা পুনরায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু কিছু গণমাধ্যম উক্ত প্রতিবেদন নিয়ে করা ফেসবুক পোস্টকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে সম্পাদিত ছবিটিকেই আসল বলে মনে হওয়ার মতো সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন তাসনিম জারা নিজেই। ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি।

Screenshot: Facebook 

মূলত তাসনিম জারার পোস্টের পর বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনীতিবিদরা যোগ দিয়েছেন একই আলোচনায়।

সম্প্রতি রিউমর স্ক্যানার সারজিস আলমের বিষয়ে একটি ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার শিরোনাম দেওয়া হয়, “সারজিস আলমের বন্ধুর বাসা থেকে তিন বস্তা টাকা উদ্ধারের দাবিটি ভুয়া”। কিন্তু কতিপয় সংবাদমাধ্যম এই শিরোনাম বদলে দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছে- “সারজিস আলমের বন্ধুর বাসা থেকে তিন বস্তা টাকা উদ্ধার, যা জানা গেল” শীর্ষক শিরোনামে।

Collage: Rumor Scanner

এই ধরনের উপস্থাপন স্পষ্টতই বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শিরোনামের শুরুতেই “তিন বস্তা টাকা উদ্ধার” বলার মাধ্যমে পাঠকের মনে ভুয়া ঘটনাটিকে একরকম সত্য হিসেবে গেঁথে দেওয়া হচ্ছে। আর শেষে অনেকটা দায়সারাভাবে “যা জানা গেল” ধরনের ক্লিকবেইট ও কৌতূহল জাগানিয়া শব্দগুচ্ছ জুড়ে দিয়ে সেটিকে ‘ফ্যাক্টচেক’ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। 

আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বিভ্রান্তিকর এই প্রচারণা সুযোগ করে দিচ্ছে রাজনৈতিক অপতথ্যের প্রচারকেই। সারজিসের প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর নেতাকর্মীরা একই ফটোকার্ড সত্য হিসেবে প্রচার করছেন, ছড়িয়ে দিচ্ছেন অপতথ্য। 

Collage: Rumor Scanner 

এ বিষয়ে এক ফেসবুক পোস্টে সারজিস আলম বলছেন, “ছবি দেখে মনে হচ্ছে সারজিস কোথাও থেকে অবৈধ টাকা অর্জন করেছে। এরপরে বন্ধুর বাসায় রেখেছে। সেই বন্ধুর বাসা থেকে এই টাকা উদ্ধার করা হয়েছে! অথচ নিউজ হলে হওয়া উচিত ছিল- সারজিসের বন্ধুর বাসা থেকে তিন বস্তা টাকা পাওয়ার বিষয়টি মিথ্যা/গুজব।”

সারজিসও একমত যে কমেন্টে থাকা নিউজের লিংক ১০ শতাংশ মানুষও পড়েন না। বলছেন, “বাকি মানুষদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য কিংবা আমাদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য আপনাদের এই নোংরামিগুলোই যথেষ্ট।”

সারজিস এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলছেন, “নাহলে আগামীতে আমাদেরও লেখা শুরু করতে হবে- “শেখ হাসিনার  স্বৈরাচারী আমলে হাজারের অধিক বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে সন্তোষ শর্মার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে যা জানা গেল…” কিংবা “সারাদেশে বসুন্ধরা গ্রুপের হাজার কোটি টাকার অবৈধ জমি দখল, খুন এবং ধর্ষণ সম্পর্কে যা জানা গেল…”

এই পোস্টের পর আরেক এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহও বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করেছেন। সারজিসের পোস্টের একটি অংশ নিয়ে তিনি লিখেছেন, “শেখ হাসিনার  স্বৈরাচারী আমলে হাজারের অধিক বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে সন্তোষ শর্মার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে যা জানা গেল।”

এই দুই নেতার পোস্টের পর প্রতিবাদের অংশ হিসেবে আজ (০৭ জুলাই) দিনভর একাধিক গণমাধ্যমের ফটোকার্ড নকল করে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমগুলোর মালিকপক্ষ এবং শীর্ষস্থানীয় কর্তা ব্যক্তিদের নামে ভুয়া তথ্য প্রচার হতে দেখা যায়। এর মধ্যে এক নারী সম্পাদক সাইবার বুলিংয়েরও শিকার হয়েছেন।

Collage: Rumor Scanner

এসবের মধ্যেই মজার যে বিষয়টি ঘটেছে তা হলো দৈনিক ইত্তেফাক তাসনিম জারাকে নিয়ে তাদের প্রকাশিত ফটোকার্ডকেই নিজেদের নয় বলে অস্বীকার করেছে। রীতিমতো ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে গণমাধ্যমটির পক্ষ থেকে আজ জানানো হয়, এটি এডিটেড ফটোকার্ড।

Screenshot: Facebook 

পরে অবশ্য পোস্টটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আরেক পোস্টের মাধ্যমে ইত্তেফাক তাসনিম জারার ছবি সম্পর্কিত পোস্টের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। জানানো হয়, “এই ভুলটি দৈনিক ইত্তেফাকের নীতিমালার পরিপন্থী, অনাকাঙ্খিত ভুলের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”

শুধু রাজনৈতিক দল বা দলগুলোর নেতাকর্মীরাই নয়, নানা অঙ্গনের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বরা হরহামেশাই ফটোকার্ড নিয়ে এমন বিভ্রান্তিকর প্রচারণার শিকার হচ্ছেন। কেউ তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, কেউ বা নীরব থাকছেন। গণমাধ্যমের এমন আচরণ সাধারণ পাঠকরাও যে ভালো চোখে দেখছে না তা পোস্টগুলোর কমেন্টেই দৃশ্যমান। রিউমর স্ক্যানার আশা করে, গণমাধ্যম তাদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে বিভ্রান্তিকর প্রচারণার এমন অবস্থান থেকে সরে আসবে। ফটোকার্ড ও শিরোনামেই গুজবকে ‘গুজব’ই বলতে হবে। দিতে হবে সরাসরি ও সিদ্ধান্তমূলক শিরোনাম। তবেই ফ্যাক্টচেক সংক্রান্ত সংবাদ থেকে উপকৃত হবে মানুষ। 

আরও পড়ুন

spot_img