কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ড দাবিতে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি এক্স প্ল্যাটফর্মে এক নারী ও এক কিশোরীর আহাজারির একটি ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে দাবি করা হয়, বিকাশ চন্দ্র নামের একজন হিন্দু ব্যবসায়ীকে ৭০ হাজার টাকা ‘জিজিয়া কর’ না দেওয়ায় মোহাম্মদ ইমরান নামের এক ইসলামপন্থী তাকে হত্যা করেছে। পোস্টে আরও বলা হয়, দেশে ধর্মীয় চাঁদাবাজি ও সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন নির্বিঘ্নে চলছে। অর্থাৎ, ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িকভাবে উপস্থাপন করা হয়।

উক্ত দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে

একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিকাশ চন্দ্রকে হত্যার ঘটনা সাম্প্রতিক নয়। বরং, ২০২৩ সালে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনার ভিডিওকে সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে নতুন করে সাম্প্রদায়িক রঙ দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, ওই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ধর্মীয় কোনো উদ্দেশ্যের প্রমাণ মেলেনি।

এই বিষয়ে অনুসন্ধান ‘Avro Neel’ নামের এক্স অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের ১০ জুন একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওর বর্ণনায় ঘটনাস্থল হিসেবে কুমিল্লার চান্দিনার উল্লেখ করা হয়। ভিডিওতে আহাজারি করা নারী জানান, তার স্বামীসহ সাতজন মিলে একটি পিকআপ কিনেছিলেন। সেই পিকআপের জন্য প্রতিবেশী আর্জু ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ওই চাঁদার না জন্য তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে ২০২৩ সালের ৬ জুন দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় পিকআপ ভাড়া না দেওয়ায় বিকাশ চন্দ্র দাস (৪২) নামের এক ব্যক্তিকে কিল-ঘুষি মেরে হত্যার অভিযোগ উঠে। অভিযুক্ত মো. আজিজুল ইসলাম আজু (২৮) একই উপজেলার বরকরই আন্দিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের প্রতিবেশী শ্রীকান্ত চন্দ্র দাস, বাদল চন্দ্র দাস ও হৃদয় চন্দ্র দাস জানান, নারাচোঁ গ্রামে গৌতমের মৎস্য প্রজেক্ট সংলগ্ন মাঠে ক্রিকেট খেলা চলছিল। বিকাশ চন্দ্র দাস দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিল। হঠাৎ আজু নামের ওই লোকটি এসে পাওনা টাকা চাওয়ার অজুহাতে বিকাশকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে শুরু করে। একপর্যায়ে বিকাশ মাটিতে লুটিয়ে পড়ায় তাকে নবাবপুর বাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে সন্ধ্যার পর চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের ছেলে ঝলক দাস জানান, ৩-৪ দিন আগে রাতে আজু বাবার কাছে ফোন করে পিকআপ ভাড়া চান। তার লেনদেন ভালো না বিধায় আমার বাবা তাকে পিকআপ ভাড়া দেয়নি। ওই ঘটনার জের ধরে আজু আবার বাবাকে হত্যা করে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম কুমিল্লার জমিনে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ঘটনার পর ২৬ জুন ঢাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত আজিজুল হক আজুকে গ্রেপ্তার করে চান্দিনা থানা পুলিশ।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, আলোচিত ভিডিও বিশ্লেষণ বা অন্য কোনো উৎসে এই হত্যাকাণ্ড সাম্প্রদায়িক কারণে ঘটেছে বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ‘জিজিয়া কর’ বা ধর্মীয় চাঁদাবাজির দাবির সপক্ষেও কোনো প্রমাণ মেলেনি।

সুতরাং, ২০২৩ সালের পিকআপ ভাড়া নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডকে সাম্প্রদায়িক রঙ দিয়ে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড দাবি করে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img