সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও বিমানবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কয়েকজন সদস্যকে দেওয়া প্রশিক্ষণের তিনটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে নানা ধরনের আলোচনা ও সমালোচনা। অনেকে দাবি করছেন, এই ছবিগুলো আসলে তিন বছর আগের, কিন্তু আওয়ামী পন্থিরা এটিকে সাম্প্রতিক দাবি করে গুজব ছড়াচ্ছে।
দৈনিল আমার দেশ এর নামে পরিচালিত একটি ভুয়া ফেসবুক পেজ থেকেও এই দাবিটি প্রচার হতে দেখা গেছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ছবিগুলো তিন বছর পুরোনো নয় বরং, গত ১৮ থেকে ২১ মে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের উদ্যোগে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে মার্কিন সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কয়েকজন সদস্যকে দেওয়া প্রশিক্ষণের ছবি।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে, দ্য ডেইলি স্টারের বাংলা সংস্করণে গত ২১ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত তিনটি ছবিই খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে মার্কিন সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের ১৫ সদস্যকে নিয়ে চার দিনের একটি যৌথ উদ্ধার প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৮ মে শুরু হওয়া এই প্রশিক্ষণ গত বুধবার (২১ মে) শেষ হয়। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্তদের উদ্ধারকাজ পরিচালনা নিয়ে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। দেশের অন্যান্য কয়েকটি গণমাধ্যমেও (১,২) একই তথ্য জানানো হয়েছে।
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ওয়েবসাইটে ৫ মে প্রকাশিত একটি অফিস আদেশ থেকে জানা যায়, ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের উদ্যোগে ১৮ মে থেকে ২১ মে পর্যন্ত কক্সবাজারে ‘Swift Water Rescue Training’ শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়। এতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের বিভিন্ন ইউনিট থেকে ১৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত করা হয়।
এই ছবিগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করতে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ তানহারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, ছবিগুলো চলতি বছরেরই এবং সদ্য অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণের সময় তোলা। তবে এ ধরনের প্রশিক্ষণ নতুন নয়, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের উদ্যোগে বিভিন্ন সময় এ রকম প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়ে থাকে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ীও, এ ধরনের প্রশিক্ষণ নতুন কোনো বিষয় নয়। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা ও দূতাবাসের সহযোগিতায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ডের সদস্যদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রমাণ পাওয়া গেছে। গতকাল (২১ মে) রিউমর স্ক্যানারের ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের উদ্যোগে সম্প্রতি বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কয়েকজন সদস্যকে দেওয়া প্রশিক্ষণের তিনটি ছবিকে তিন বছর পুরোনো বলে দাবি করা হচ্ছে, যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s analysis.
- Daily Star: যে কারণে কক্সবাজারে মার্কিন সেনা ও বিমানবাহিনী সদস্যরা
- Cox’s Bazar Fire Service and Civil Defence: Office Order
- Statement from Mohammad Tanharul Islam,
- Deputy Assistant Director of Cox’s Bazar Fire Service and Civil Defence.