বৃহস্পতিবার, মে 22, 2025

দুর্ঘটনায় আহত মুসলিম নারীর ছবি কথিত লাভ জিহাদে আক্রান্ত হিন্দু নারীর ছবি দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন আহত নারীর ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “আরেকটি লাভ জিহাদের ঘটনা। আবদুল তার প্রেমিকাকে কুকুরের মতো মারধর করেছে। কোনো বাবার যেন এমন মেয়ে না হয়, যে ধর্মের অপমান ডেকে আনে। এ ধরনের মেয়েরা দেবী নয়, এরা ডাইনি।” (অনূদিত) উল্লেখ্য যে, কথিত লাভ জিহাদ বলতে হিন্দু মেয়ে ও মুসলিম ছেলের প্রেমের সম্পর্ক বুঝানো হয়ে থাকে। অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে যে, প্রচারিত ছবিটিতে প্রদর্শিত নারী হিন্দু এবং তাকে তার মুসলিম প্রেমিক মারধর করে আহত করেছে।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

থ্রেডে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উল্লেখ্য যে, ভারত থেকে পরিচালিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকেও আলোচিত দাবিটি প্রচার হতে দেখা গেছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির নারী হিন্দু নন বরং জন্মগত মুসলিম, তার নাম আদ্রিতা আজাদ রীতি এবং প্রচারিত ছবিটি স্বামী কর্তৃক নির্যাতনের দৃশ্যের নয় বরং, একটি দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Adrita Azad Reety’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৮ এপ্রিলে দুইটি ছবির সংযুক্তিসহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়৷ পোস্টে সংযুক্ত উক্ত ছবিগুলোর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner

এছাড়া, উল্লিখিত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ছবি উল্লিখিত আদ্রিতা আজাদ রীতির। আলোচিত ছবি সম্বলিত উক্ত পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “আমি রীতির স্বামী। গতকাল সন্ধ্যায় রীতির একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সনি সিনেপ্লেক্সের পেছনের রাস্তায় এক ছেলে হেলমেট পরে স্কেটিং করছিল এবং হঠাৎ করেই রীতির সঙ্গে ধাক্কা খায়। ছেলেটির হেলমেট সরাসরি রীতির ডান চোখে আঘাত করে, এবং সাথে সাথে তার চশমা ভেঙে চোখের উপর চাপ পড়ে। এতে তার ডান চোখ ও চোখের আশপাশের অংশে আঘাত লাগে। ডান নাসার ভিতরের অংশও ছিঁড়ে যায়, ফলে ট্যাপ খোলা পানির মতো তীব্র রক্তপাত হতে থাকে। আমি সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।  

সকাল পর্যন্ত নাকের রক্তপাত বন্ধ হয়, তবে এখন জমাট বাঁধা রক্ত গলায় নেমে মুখ দিয়ে বের হচ্ছে, যখন সে থুতু ফেলে। তার কপালের ডান পাশ থেকে গাল পর্যন্ত পুরো অংশ অবশ হয়ে গেছে। আমি তার ডান গালে হাত দিলেও সে কোনো অনুভূতি পাচ্ছে না।  দ্বিতীয় ছবিটি গত রাতের তোলা, আর প্রথমটি আজকের। রীতি খুব অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছে। যদি চশমার কাঁচের টুকরোগুলো আরও গভীরে ঢুকে যেত, তবে তার দৃষ্টিশক্তি চিরতরে হারানোর আশঙ্কা ছিল। আল্লাহ তাকে সত্যিই রক্ষা করেছেন। সে এখন বিশ্রামে আছে। দয়া করে তার দ্রুত ও সম্পূর্ণ সুস্থতার জন্য সবাই দোয়া করবেন।” (অনূদিত)

অর্থাৎ, পোস্টটি থেকে জানা যায় যে আলোচিত ছবিটি কোনো নির্যাতনের নয় বরং একটি দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার।

Screenshot: Facebook

এছাড়া, আদ্রিতার উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে ১৯ এপ্রিলে একটি পোস্ট প্রচার হতে দেখা যায়। উক্ত পোস্টে আদ্রিতা লাভ জিহাদে আক্রান্ত ও স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দাবিতে তার ছবিসহ প্রচারিত দুইটি পোস্টের লিঙ্ক সংযুক্ত করে ক্যাপশনে লিখেন, “আমি জন্মসুত্রে একজন মুসলিম,আমি গতকাল এক্সিডেন্ট করেছি,আমার ছবি নিয়ে হিন্দুত্ববাদীরা ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে,দয়া করে আর ভুল তথ্য ছড়ায়েন না আমি শারীরিকভাবে প্রচন্ড অসুস্থ, আমি আর আমার স্বামী এই মানসিক চাপ আর নিতে পারছি না…”।

এছাড়াও এ বিষয়ে বাংলাদেশ হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক জয় রাজবংশী নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৮ এপ্রিল এ বিষয়ে একটি পোস্ট করে জানান, আহত নারীর নাম আদ্রিতা আজাদ রীতি এবং সে ধর্মান্তরিত বা হিন্দু এমন দাবি গুজব। উক্ত পোস্টে তিনি আদ্রিতার জাতীয় পরিচয় পত্রের একটি ছবিও সংযুক্ত করেন যেখানে তার বাবার নাম মোঃ আবুল কালাম আজাদ ও মায়ের নাম সালমা সুলতানা ম্যারি দেখা যায়। অর্থাৎ, আদ্রিতা মুসলিম পরিবারের মেয়ে, তার বাবা-মাও মুসলিম।

সুতরাং, জন্মসূত্রে মুসলিম আদ্রিতা আজাদ রীতি নামে এক নারীর দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার ছবি প্রচার করে কথিত লাভ জিহাদে আক্রান্ত হয়ে মুসলিম প্রেমিক/স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দাবি করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img