গত ১৮ মার্চ ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজা উপত্যকায় পুনরায় হামলা শুরু করলে ফিলিস্তিনে মানবিক সংকট চরম আকার ধারণ করে। এই সংকটের মধ্যে, সম্প্রতি ইসলামের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান হিসেবে পরিচিত জেরুসালেমের আল-আকসা মসজিদ ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে দাবিতে একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিত ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
টিকটকে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
থ্রেডসে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আল-আকসা মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, আল-আকসা মসজিদের কোনো ক্ষতি হয়নি। আল-আকসার পাশে অবস্থিত সোনালি গম্বুজবিশিষ্ট ‘ডোম অব দ্য রক’-এর আদলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি একটি ছবিকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলি হামলায় আল-আকসা ধ্বংসের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে।
এই ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে, বাংলাদেশ সময় গত ৪ এপ্রিল ভোর ৫টা ২০ মিনিটে ‘𝐑𝐨𝐳𝐲’ নামের একটি এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটির আরবি ভাষার ক্যাপশনের ভাবানুবাদ করলে দাঁড়ায়: “গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন: যদি কোনো ভোরে পুরো আরব জাতি এমন একটি দৃশ্যের মুখোমুখি হয়, তাহলে তাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে? শঙ্কা হলো, হয়ত আমরা আবারও সেই চিরচেনা চিত্রটাই দেখব—নিন্দা, প্রতিবাদ, ধিক্কার আর কিছুটা প্রতীকী মিছিল-মানববন্ধন। কিন্তু এরপর? এরপর কি কিছু বদলাবে?”
পরদিন, ৫ এপ্রিল ‘AhMed M. Skran’ নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইলে একই ছবিসহ কাছাকাছি ধরনের আরও দুইটি ছবিযুক্ত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। এই পোস্টের ক্যাপশনে আরবি ভাষায় লেখা হয়, “ভাবুন তো, ঘুম থেকে উঠে যদি হঠাৎ এমন একটা দৃশ্য চোখে পড়ে।”
এসব পোস্টের বরাতে বোঝা যায়, ছবিটি প্রাথমিকভাবে আল-আকসা মসজিদের প্রতীকী রূপ হিসেবেই সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিল।
তবে ছবিতে দেখানো স্থাপনাটি আল-আকসা মসজিদ নয়। এটি আল-আকসার সংলগ্ন সোনালি গম্বুজবিশিষ্ট ‘ডোম অব দ্য রক’। জেরুসালেমের পবিত্র হারাম আল-শরীফ চত্বরে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ ও ডোম অব দ্য রক—দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্থাপনা। আল-আকসা মসজিদে মুসল্লিরা নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। অপরদিকে, ডোম অব দ্য রক একটি ধর্মীয় স্মৃতিচিহ্ন, যেখান থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মেরাজে গমন করেছিলেন বলে মুসলিমরা বিশ্বাস করেন।

পবর্তীতে, ছবিটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম সাইটইঞ্জিনে পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ।

আলোচিত ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে তৈরি—এটি নিশ্চিত হওয়ার পর আল-আকসার বর্তমান পরিস্থিতি জানতে ফিলিস্তিনের স্থানীয় ফ্যাক্টচেকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তারা নিশ্চিত করেছেন, আল-আকসা মসজিদে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে তুরস্কভিত্তিক আনাদোলু এজেন্সির গত ৬ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত রবিবার আল-আকসা মসজিদ চত্বরে ৫০০-রও বেশি অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী জোরপূর্বক প্রবেশ করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, অনুপ্রবেশকারীদের পুলিশি পাহারায় সহযোগিতা দেওয়া হয়। আগামী ১২ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া ইহুদি ধর্মীয় উৎসব পাসওভারকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি এ ধরনের অনুপ্রবেশের ঘটনা বেড়েছে। ফিলিস্তিনি ওয়াক্ফ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ মাসে, অর্থাৎ পবিত্র রমজান মাসে অন্তত ২১ বার এ ধরনের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এ ছাড়া বছরের প্রথম তিন মাসে মোট ১৩ হাজারের বেশি ইসরায়েলি আল-আকসা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছে।
এটিই আল-আকসার সর্বশেষ পরিস্থিতি বলে ফিলিস্তিনের স্থানীয় ফ্যাক্টচেকাররাও রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসন্ধান করে, সম্প্রতি আল-আকসা মসজিদে অবস্থান করা একাধিক বাংলাদেশি নাগরিকের ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। আল-আকসার ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে তারা নিশ্চিত করেছেন, আল-আকসা মসজিদে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।
সুতরাং, ইসরায়েলি হামলায় আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস হয়ে গেছে দাবিতে ডোম অব দ্য রকের আদলে তৈরি একটি এআই-নির্মিত ছবি প্রচার করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s analysis.
- Image Verification by Sightengine.
- Statement from Palestinian Fact-Checkers.
- Getty Images.
- IslamQA: What Is the Difference Between al-Aqsa and the Dome of the Rock?
- Anadolu Agency: Over 500 illegal Israeli settlers storm Jerusalem’s Al-Aqsa Mosque under heavy police protection