গত ২০ মার্চ রাতে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুকে দাবি করেন, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। বিষয়টিকে তিনি ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে ‘নতুন একটি ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করেন।
এ প্রসঙ্গে আলোচিত সংবাদ উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দন হাসনাতের পাশে ছাত্র-জনতাকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন: ইনকিলাব, সময়ের আলো, জনকণ্ঠ, যায়যায়দিন, বিডি২৪লাইভ, ঢাকা প্রকাশ (ফেসবুক), বিডি২৪রিপোর্ট (ফেসবুক), শেয়ারনিউজ২৪।
এছাড়া, আমাদেরসময়.কমও একই দাবিতে সংবাদ প্রচার করে, তবে পরে তা অপসারণ করে নেওয়া হয়।

একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ ইস্যুতে খালেদ মুহিউদ্দীন ছাত্র-জনতাকে হাসনাতের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত খবরটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, একটি ভুয়া ফেসবুক প্রোফাইল থেকে এ সংক্রান্ত পোস্ট ছড়ানো হলে কতিপয় কিছু গণমাধ্যম সেটিকে খালেদ মুহিউদ্দীনের মন্তব্য হিসেবে প্রকাশ করে। পরবর্তীতে, ওই পেজ থেকে জানানো হয় যে এটি শুধুমাত্র একটি ফ্যান পেজ। একই সঙ্গে, খালেদ মুহিউদ্দীনও নিশ্চিত করেন যে তার নামে পরিচালিত ওই পেজটি ভুয়া।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, খালেদ মুহিউদ্দীন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ছাত্র-জনতাকে হাসনাতের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে তার মূল ফেসবুক প্রোফাইলে এমন কোনো পোস্টের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বরং, আজ ২২ মার্চ তিনি নিজের মূল ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করেন, ওই প্রোফাইলই তার একমাত্র ফেসবুক প্রোফাইল। ওই পোস্টে তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এবং ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ নামে আরও একটি ফেসবুক পেজের লিংকও যুক্ত করা হয়। তিনি জানান, ‘সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দিন’ নামের পেজটি তার নয় এবং সেখানে প্রকাশিত কোনো মতামতও তার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তিনি এ বিষয়ে ইতোমধ্যে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলেও ওই পোস্টে জানান।
খালেদ মুহিউদ্দীনের ওই পোস্টের সূত্র ধরে ‘সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দিন’ নামের একটি ফেসবুক পেজের সন্ধান পাওয়া যায়। গতকাল ২১ মার্চ, ওই পেজে প্রকাশিত একটি পোস্টে হাসনাতের পাশে ছাত্র-জনতাকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। সেখানে লেখা হয়, “হাসনাত আব্দুল্লাহ যে সাহসটা দেখালো, যে প্রলোভন অগ্রাহ্য করলো, সেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। তাঁর পাশে ছাত্র-জনতাকে দাঁড়াতে হবে।”
পেজটির ট্রান্সপ্যারেন্সি সেকশন অনুযায়ী, এটি খোলা হয়েছে গত বছরের জানুয়ারিতে, এবং সৌদি আরব থেকে একজন অ্যাডমিন এটি পরিচালনা করছেন। পেজটির বায়োতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, ‘It’s a Khaled Muhiuddin fan page। এই পেইজের কোনো মন্তব্য খালেদ মুহিউদ্দীন স্যারের নিজস্ব মন্তব্য নয়।’

এছাড়া, আজ ২২ মার্চ, আলোচিত সংবাদের বিষয়ে পেজটিতে প্রকাশিত আরেকটি পোস্টে লেখা হয়, ‘The Daily Inqilab, আপনাদের আবার এ কেমন সাংবাদিকতা? কোনো কিছু যাচাই-বাছাই না করেই নিউজ করে দিলেন? নিউজের উক্ত মন্তব্যটি খালেদ মুহিউদ্দিন স্যারের নিজস্ব মন্তব্য নয়। পেজের বায়োতেই দেওয়া আছে এটি একটি ফ্যান পেজ। এই পেজের সাথে Khaled Muhiuddin স্যারের ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই। অনুগ্রহ করে আপনারা ফেসবুক এবং ওয়েবসাইট থেকে ফেক নিউজটি ডিলিট করে দিন।’
সুতরাং, খালেদ মুহিউদ্দন হাসনাতের পাশে ছাত্র-জনতাকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Khaled Muhiuddin: Facebook Post