শনিবার, মে 24, 2025

বৌদ্ধ বিহারে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের আগুনকে উগ্রবাদীদের হামলা দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্যের ভিডিও সংযুক্ত করে দাবি প্রচার করা হয়েছে, “বাংলাদেশে উগ্রবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রুমা, বান্দরবানে একটি বৌদ্ধ মঠ এবং আশেপাশের এলাকায় অগ্নিসংযোগ করেছে।” (অনূদিত)

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বান্দরবানের রুমায় উক্ত বৌদ্ধ বিহারে উগ্রবাদীরা অগ্নিসংযোগ করেনি বরং বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে, পোস্টগুলোতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ‘শাওন বড়ুয়া’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৪ ফেব্রুয়ারিতে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের সাথে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটি সম্পর্কে ক্যাপশনে বলা হয়, “আজ সন্ধ্যা ৭টার দিকে বান্দরবান জেলা রুমা‌তে একটি বৌদ্ধ বিহার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘটনাটি রুমা উপজেলার, ১নং পাইন্দু ১নং ওয়ার্ড, মংশৈপ্রূ কার বাড়ি পাড়াতে ঘটে। বৌদ্ধ বিহারের সাথে আরো একটি ইউনিসেফ আগুন পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তার মধ্যে এক পরিমাণ জিনিস পত্র ও ভিতর থেকে বের করতে পারেনি। বৌদ্ধ মূর্তি থেকে শুরু করে  সব কিছুই ছাই হয়ে পুড়িয়ে যায়। স্থানীয়দের মতে আগুন লাগার মূলত কারণ কারেন্ট থেকে।”

একইদিন ৪ ফেব্রুয়ারিতে ‘নাই ম্রা চিং মারমা’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে “তাং:০৪/০২/২০২৫ ইং জেলা বান্দরবান, উপজেলা রুমা ১নং পাইন্দু ইউনিয়নে মংশৈপ্রু পাড়া আগুনে পুড়ে ছারখার সময় সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে।” শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ফেসবুক লাইভ সম্প্রচার পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের সাথেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি বান্দরবান জেলার রুমার ১নং পাইন্দু ইউনিয়নে মংশৈপ্রু পাড়ার আগুনের দৃশ্য।

এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে সংবাদমাধ্যম ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ এর ওয়েবসাইটে “বান্দরবানে পরিত্যক্ত বৌদ্ধ বিহারে আগুন” শীর্ষক শিরোনামে গত ৪ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “বান্দরবানের রুমা উপজেলায় আগুনে পুড়ে গেছে বৌদ্ধ বিহারের একটি পুরোনো পরিত্যক্ত ঘর। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পাইন্দু ইউনিয়নের দুর্গম মংসুথুই পাড়ায় এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের মতে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং মুহূর্তের মধ্যেই তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। দুর্গম ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকা হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেননি।

পাইন্দু ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মংচ খয় জানান, বৌদ্ধ বিহারের পরিত্যক্ত ঘরটিতে বৈদ্যুতিক মিটারের শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে এবং তা পুরো ঘর পুড়িয়ে দেয়। তবে আশপাশে কোনো বসতি না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।”

এছাড়া এ বিষয়ে ‘খোলা কাগজ’ নামের একটি সংবাদমাধ্যমে ‘রুমায় বৌদ্ধ বিহার আগুনে পুড়ে ছাই’ শীর্ষক শিরোনামে একইদিন ৪ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত আরেকটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে আলোচিত ঘটনার দৃশ্যের একটি স্থিরচিত্রও সংযুক্ত করা হয় যার সাথে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্যের সাদৃশ্য রয়েছে। উক্ত প্রতিবেদনে বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ইন্দ্রাবংশ ভিক্ষুর বরাতে বলা হয়, “[৪ ফেব্রুয়ারি] সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিহারের বৈদ্যুতিক তার থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। তখন আমার শিষ্য রান্নাঘরে ছিলো।”

একই তথ্য এর পরদিন তথা গত ৫ ফেব্রুয়ারিতে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলা’য় প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়। তবে কোথাও নির্ভরযোগ্য সূত্রে অগ্নিকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশি কোনো উগ্রবাদী দল বা গোষ্ঠীকে দায়ী করা হয়নি।

সুতরাং, বান্দরবানের রুমার বৌদ্ধ বিহারে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের আগুনকে উগ্রবাদীদের হামলা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img