সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের গণআন্দোলনের মুখে গত ০৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিভিন্ন ঘটনায় শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করার তথ্য দেশীয় গণমাধ্যমগুলোতে এসেছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর করিম খানের সাক্ষাৎ হয়। সেই সাক্ষাতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে গত জুলাই-আগস্টে কোটা সংস্কার ও পরবর্তীতে সরকার পতন আন্দোলনের সময় যে হতাহত হয়েছে, এর পেছনে দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলা করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চান। এরই প্রেক্ষিতে, “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের করেছিলেন ডা: ইউনুস, সেই মামলার নথি পত্র প্রকাশ্যে ছিড়ে মাটিতে ফেলে দিলেন নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার।” শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। পোস্টগুলোতে আরও বলা হয়, নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে গিয়ে ডা: ইউনুসের করা অভিযোগ অস্বীকার করে ছিড়ে ফেলেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বৈধ এবং এখনো সে বাংলাদেশ সরকার বলে দাবি করেন।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার নথি বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার দাবিটি ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে, এই দাবির সঙ্গে ২০১৫ সালে বাংলাদেশি ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিবাদস্বরূপ ২০১৬ সালে পিয়ারে মার্শাল নামের এক ফরাসি লেখকের ফ্রান্সের প্যারিসে বাংলাদেশি দূতাবাসের সামনে তোলা কিছু ছবি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। পিয়ারে মার্শাল ভারতের হাইকমিশনার নন, এবং ভারতের বর্তমান বা পূর্বের কোনো হাইকমিশনার এমন কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে তথ্য পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবির সাথে প্রচারিত ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। ছবিতে “AMBASSADE DE LA RÉPUBLIQUE POPULAIRE DU BANGLADESH, PARIS” শীর্ষক লেখা লক্ষ্য করা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায় এটি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে তোলা ছবি।
অর্থাৎ, ফ্রান্সের প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনের ছবিকে নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনের ছবি দাবিতে প্রচার কর হয়েছে।
ছবিতে থাকা ব্যক্তির বিষয়ে জানতে রিভার্স সার্চ করে Pierre Martial নামক এক ব্যক্তির ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালে “Culture contre barbarie. Lecture-performance de Pierre Martial devant l’ambassade du Bangladesh à Paris.” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত নিবন্ধে থাকা ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
নিবন্ধ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালে বাংলাদেশি ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিবাদ জানান।
Pierre Martial এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি পোস্ট থেকে একই তথ্য জানা যায়।
এছাড়া অনুসন্ধানে জানা যায়, নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পদে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন রিনাত সান্ধু। বর্তমানে, কুমার তুহিনকে নেদারল্যান্ডসে ভারতের নতুন হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার নথিপত্র নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে প্রকাশ্যে ছিড়ে ফেলার বিষয়ে কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে ঢাকায় বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর প্রকাশ্য রাস্তায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন অভিজিৎ রয়।
সুতরাং, নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার নথি বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Pierre Martial – Culture contre barbarie. Lecture-performance de Pierre Martial devant l’ambassade du Bangladesh à Paris.
- Pierre Martial – Facebook Post
- Rumor Scanner’s own analysis