গণ-আন্দোলনের চাপের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন, যার ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হয়ে যায়। সরকারের পতনের পর মন্ত্রিপরিষদের অনেক সদস্য আত্মগোপনে চলে গেছেন, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতিমধ্যে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরের প্রবাসীরা গণধোলাই দিয়েছেন। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি তাকে কোলে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন এবং এতে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান শোনা যাচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ পর্যন্ত এই বিষয়ে ফেসবুকে ভাইরাল একটি ভিডিও প্রায় ৮৫ লক্ষ বার দেখা হয়েছে। প্রায় ৩২ হাজার ব্যবহারকারী ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, ভিডিওটি ৪ হাজারেরও বেশি বার শেয়ার করা হয়েছে এবং এতে ৯৪০টির বেশি মন্তব্য রয়েছে। পাশাপাশি টিকটকে ভাইরাল একটি ভিডিওর ভিউ সংখ্যা ২৫ লক্ষের বেশি এবং প্রায় ১ লক্ষ ব্যবহারকারীর প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। টিকটক ভিডিওটি ১৬ হাজারেরও বেশি শেয়ার হয়েছে এবং এতে ৩ হাজারের বেশি মন্তব্য রয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিঙ্গাপুরের প্রবাসীরা ওবায়দুল কাদেরকে গণধোলাই দিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ২০০৮ সালের এবং ভিডিওটির প্রেক্ষাপটও ভিন্ন।
অনুসন্ধানে ‘Mashudul Haque’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৪ সালে প্রকাশিত বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের লোগো সম্বলিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ৩ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের এই ভিডিওটির ১ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ৫৪ সেকেন্ড পর্যন্ত দৃশ্যের সঙ্গে দাবিকৃত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।
ভিডিওতে ওবায়দুল কাদেরকে কোলে তুলে নেওয়ার দৃশ্যটি ২০০৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বরের বলে উল্লেখ করা হয়। ভিডিওর সংবাদ বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘২০০৮ সালে কারামুক্ত হয়ে তিনি কারাগারকে রাজনীতিবিদদের পাঠশালা হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।’
এছাড়া দাবিকৃত ভিডিওতে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান শোনা গেলেও মূল ভিডিওতে এমন কিছু শোনা যায়নি। অর্থাৎ, ভিডিওতে ভুয়া স্লোগানটি এডিটের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে।
ইউটিউব ভিডিওতে উল্লিখিত তারিখের সূত্রে পুরোনো পত্রিকার অনলাইন সংরক্ষণাগার সংগ্রামের নোটবুক ওয়েবসাইট থেকে ২০০৮ সালের ০৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রথম আলো পত্রিকার একটি কপি খুঁজে বের করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
পত্রিকারটির দ্বিতীয় পাতায় “রাজনীতিকদের পাশাপাশি শীর্ষ সন্ত্রাসীও ছাড়া পাচ্ছেন” শীর্ষক শিরোনামের নিচে ওবায়দুল কাদেরের কারামুক্তি সম্পর্কে জানা যায়, ২০০৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান এবং বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নেন। মুক্তি পেয়ে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘এবারের কারাজীবন অন্যরকম, এটি রাজনীতিবিদদের জন্য একটি পাঠশালা।’
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি ২০০৮ সালের।
সুতরাং, ২০০৮ সালের ভিন্ন প্রেক্ষাপটের একটি ভিডিওকে বিকৃত করে সম্প্রতি ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরের প্রবাসীরা গণধোলাই দিয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Mashudul Haque – YouTube Video
- Prothom Alo – 06.09.2008 Paper