সম্প্রতি একমাসে দুইবার রক্তদান করার ফলে একটি ছেলে মারা গেছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। উক্ত দাবির সাথে এক ব্যক্তির দুইটি ছবিও যুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে যে ব্যক্তির ছবি রয়েছে তার নাম আরেফিন শুভ এবং এক মাসে দুইবার রক্ত দেওয়ার ফলে তার মৃত্যু হয়নি বরং তিনি ছয় মাসে দুইবার রক্ত দিয়েছিলেন এবং তার মৃত্যু হয়েছিল স্ট্রোক করে।
এক মাসে দুইবার রক্ত দেওয়ার বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ২০২২ সালে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে মৃত আরেফিন শুভর ভাই মুহাম্মদ রাফি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সেসময় তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “এক মাসে দুইবার রক্ত দেওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। পুরোটাই গুজব। আসলে ছয় মাসের ব্যবধানে দুইবার রক্ত দিয়েছিল আমার ভাই। তবে শেষবার রক্ত দেওয়ার দুইদিন পর তার জ্বর আসে এবং অসুস্থ হয়ে যায়। পরে আমরা বারডেম, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা মেডিকেলে তার ব্লাড কালচার করিয়েছিলাম। কোনো সমস্যা পাইনি।”
তার অসুস্থতার ব্যাপারে রাফি সরকার বলেন, “শুভ কুরবানি ঈদের(২০২২) এক সপ্তাহ পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা নয়নপুর জেনারেল হাসপাতালে রক্ত দিয়েছিল। এর দুইদিন পর তার জ্বর আসে এবং অসুস্থ হয়ে যায়। পরে কসবায় আমার তার চিকিৎসা করাই। কিন্তু সেখানে ভালো না হওয়ায় ডাক্তার আমাদেরকে তাকে কুমিল্লা নিয়ে যেতে বলে। অপরদিকে অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক খাওয়ানোর ফলে শুভের অগ্ন্যাশয়ে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এটি চিকিৎসায় ভালোও হয়ে যায়। এর মধ্যে তার পেটের অভ্যন্তরে পুনরায় একটি ফোঁড়া হয়। যেটিকে চিকিৎসকেরা টিউমার হিসেবে সন্দেহ করে। পরবর্তীতে আমরা আরও নিশ্চিত হতে ঢাকায় নিয়ে গেলে চিকিৎসক আমাদের জানায়, তার পেটের অভ্যন্তরে ফোঁড়া হয়ে সেটি সংক্রমিত হওয়ার মাধ্যমে ফুলে গিয়েছে এবং এক পর্যায়ে সেটি পেঁকে যায়।”
রাফি সরকার সেসময় আরও বলেন, ‘জ্বরের কারণে আমার ভাইয়ের মুখে খাবারের রুচি না থাকায় আমার মা তাকে মাল্টা খেতে দিয়েছিল। মাল্টা টক জাতীয় ফল হওয়ায় শুভর ফোঁড়াটি ফেটে যায় এবং কিডনি, রক্ত সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার এক পর্যায়ে ব্রেইনস্ট্রোক করে মারা যায়।‘
মূলত, ২০২২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আরেফিন শুভের মৃত্যু হয়েছিল স্ট্রোকের ফলে। এর আগে আরেফিন শুভ ছয় মাসের ব্যবধানে দুইবার রক্ত দেন। সবশেষ ২০২২ সালে কুরবানির ঈদের এক সপ্তাহ পর রক্ত দিয়েছিলেন৷ রক্ত দেওয়ার দুইদিন পর তার গায়ে জ্বর আসে। ডাক্তাররা জানান, তার পেটের অভ্যন্তরে ফোঁড়া হয়ে সেটি সংক্রমিত হওয়ার মাধ্যমে ফুলে গিয়েছে এবং পেঁকে গিয়েছে। পরবর্তীতে খাবারের ক্রিয়ায় ফোঁড়াটি ফেটে যায় এবং কিডনি, রক্ত সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার এক পর্যায়ে স্ট্রোক করে আরেফিন শুভ মারা যান।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিষয়টি নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সেসময় ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।