সম্প্রতি “একমাসে দুইবার রক্তদান করে, ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার কসবা থানা কামাল পুর গ্রাম,,, কসবা বায়েক আলহাজ্ব শাহ আলম কলেজ ব্লাড ব্যাংক এর সম্মানিত সদস্য রক্তযোদ্ধা “শুভ” নিজেই চলে গেলেন দুনিয়া ছেড়ে। যদিও মৃ/ত্যু ও বেঁচে থাকা উপরওয়ালার হাতে। ” শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এক মাসে দুইবার রক্ত দেওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানা কামালপুর গ্রামের রক্তদাতা মো: আরেফিন শুভের মৃত্যুর বিষয়টি সঠিক নয় বরং তিনি ছয় মাসে দুইবার রক্ত দিয়েছিলেন এবং তার মৃত্যু হয়েছিল স্ট্রোক করে।
এক মাসে দুইবার রক্ত দেওয়ার বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে মৃত আরেফিন শুভর ভাই মুহাম্মদ রাফি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “এক মাসে দুইবার রক্ত দেওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। পুরোটাই গুজব। আসলে ছয় মাসের ব্যবধানে দুইবার রক্ত দিয়েছিল আমার ভাই। তবে শেষবার রক্ত দেওয়ার দুইদিন পর তার জ্বর আসে এবং অসুস্থ হয়ে যায়। পরে আমরা বারডেম, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা মেডিকেলে তার ব্লাড কালচার করিয়েছিলাম। কোনো সমস্যা পাইনি।”
তার অসুস্থতার ব্যাপারে রাফি সরকার বলেন, “শুভ কুরবানি ঈদের এক সপ্তাহ পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা নয়নপুর জেনারেল হাসপাতালে রক্ত দিয়েছিল। এর দুইদিন পর তার জ্বর আসে এবং অসুস্থ হয়ে যায়। পরে কসবায় আমার তার চিকিৎসা করাই। কিন্তু সেখানে ভালো না হওয়ায় ডাক্তার আমাদেরকে তাকে কুমিল্লা নিয়ে যেতে বলে। অপরদিকে অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক খাওয়ানোর ফলে শুভের অগ্ন্যাশয়ে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এটি চিকিৎসায় ভালোও হয়ে যায়। এর মধ্যে তার পেটের অভ্যন্তরে পুনরায় একটি ফোঁড়া হয়। যেটিকে চিকিৎসকেরা টিউমার হিসেবে সন্দেহ করে। পরবর্তীতে আমরা আরও নিশ্চিত হতে ঢাকায় নিয়ে গেলে চিকিৎসক আমাদের জানায়, তার পেটের অভ্যন্তরে ফোঁড়া হয়ে সেটি সংক্রমিত হওয়ার মাধ্যমে ফুলে গিয়েছে এবং এক পর্যায়ে সেটি পেঁকে যায়।”
রাফি সরকার আরও বলেন, ‘জ্বরের কারণে আমার ভাইয়ের মুখে খাবারের রুচি না থাকায় আমার মা তাকে মাল্টা খেতে দিয়েছিল। মাল্টা টক জাতীয় ফল হওয়ায় শুভর ফোঁড়াটি ফেটে যায় এবং কিডনি, রক্ত সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার এক পর্যায়ে স্ট্রোক করে মারা যায়।‘
মূলত, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বায়েক আলহাজ্ব শাহ আলম কলেজের উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো: আরেফিন শুভের মৃত্যু হয়েছিল স্ট্রোকের ফলে। এর আগে আরেফিন শুভ ছয় মাসের ব্যবধানে দুইবার রক্ত দেন। সবশেষ কুরবানির ঈদের এক সপ্তাহ পর রক্ত দিয়েছিলেন৷ রক্ত দেওয়ার দুইদিন পর তার গায়ে জ্বর আসে। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চিকিৎসায় জ্বর ভালো না হলে তাকে কুমিল্লায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর এক পর্যায়ে তার পেটে টিউমার সদৃশ কিছু একটা ধরে পড়ে। পরবর্তীতে আরও নিশ্চিত হতে তার পরিবার তাকে ঢাকায় নিয়ে গেলে ডাক্তার জানায়, তার পেটের অভ্যন্তরে ফোঁড়া হয়ে সেটি সংক্রমিত হওয়ার মাধ্যমে ফুলে গিয়েছে এবং পেঁকে গিয়েছে। পরবর্তীতে খাবারের ক্রিয়ায় ফোঁড়াটি ফেটে যায় এবং কিডনি, রক্ত সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার এক পর্যায়ে স্ট্রোক করে আরেফিন শুভ মারা যান।
সুতরাং, একমাসে দুইবার রক্ত দেওয়ার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানা কামালপুর গ্রামের রক্তদাতা মো: আরেফিন শুভ’র মৃত্যু হয়েছে দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
Conversation with Deceased Brother