সম্প্রতি পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তুর পরিবর্তন এবং নতুন বিষয় সংযোজন নিয়ে ছবি সম্বলিত কিছু তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
উক্ত দাবিতে বলা হচ্ছে :
“নতুন বছরের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে৷
এটা কি মুসলিম রাষ্ট্র নাকি??? হিন্দুরা কি সুকৌশলে তাদের লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করছে…!
📖 Class two এর বই থেকে প্রিয় নবীর সংক্ষিপ্ত জীবনী বাদ দিয়েছে।
📖 Class three এর বই থেকে খলিফা আবু বক্কর এর জীবনী বাদ দিয়েছে।
📖 Class four এর বই থেকে খলিফা ওমর (রা) এর জীবন বাদ দিয়েছে।
📖 Class five এর বই থেকে নবীজির বিদায় হজের ভাষণের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা বাদ দিয়েছে পাশাপাশি সংযুক্ত করেছে বই নামের একটি কবিতা যা কোরআন বিরোধী।
📖 Class six এর বইতে সংযুক্ত করেছে লাল গরু নামের একটি গল্প, যা মুসলিমদের বাধ্য করছে গরুকে মা বলে সম্বোধন করতে,পাশাপাশি শিক্ষা দিচ্ছে গরু জবাই করা একটি মহা অন্যায়।
📖 Class seven এর বই তে সংযুক্ত করেছে, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখিত লালো নামের একটি গল্প, যা মুসলিমদের কালী পূজা করতে উদ্বুদ্ধ করছে।
📖 Class eight এর বই তে আরো সংযুক্ত করা হয়েছে হিন্দুদের রামায়ণ নামের গ্রন্থ। যা সরাসরি মুসলিমদের হিন্দু ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করছে।
একজন মুসলিম হিসাবে এই সকল মুসলিম বিদ্বেষী কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং এই হিন্দুত্ববাদী শিক্ষামন্ত্রী দিপুমনির বরখাস্ত করা আহবান জানাই। (কপি পোষ্ট..)”
ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্যবই থেকে ইসলামিক গল্প/প্রবন্ধ/কবিতা বাদ দিয়ে হিন্দুধর্ম সম্পর্কিত গল্প/প্রবন্ধ/কবিতা যুক্ত করার দাবিগুলো সত্য নয় বরং উক্ত ইসলামি গল্প/প্রবন্ধ/কবিতা বাদ দেওয়া হয় নি এবং হিন্দুত্ববাদী যেসকল গল্প/প্রবন্ধ/কবিতা যুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে তা বর্তমান পাঠ্যক্রমেই নেই।
এছাড়াও, স্বরবর্নের বইয়ের ছবিটি মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থার সরকারি পাঠ্যক্রমের বই নয় বরং এটি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) পরিচালিত জাগ্রত ছাত্র সমাজের উদ্যোগে প্রকাশিত একটি শিশুপাঠমূলক বইয়ের ছবি।
ছবি যাচাই
কী-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে, Iskcon News-ইসকন সংবাদ নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর “গুরুকুল শিশুপাঠ বই। নার্সারী ও ক্লাস ওয়ান এর শিশুদের জন্য। ইসকন ধর্মনগর। হরে কৃষ্ণ।” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। গুগল ম্যাপে অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেখা যায়, ইসকন ধর্মনগর একটি মন্দির। যেটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পদ্মনগরে অবস্থিত।
উক্ত পোস্টের ছবিগুলোর সাথে বাংলাদেশের পাঠ্যবই দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ ছবিগুলো বাংলাদেশের মূলধারার পাঠ্যক্রমের কোনো বই নয়। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) পরিচালিত জাগ্রত ছাত্র সমাজের উদ্যোগে প্রকাশিত একটি শিশুপাঠমূলক বইয়ের ছবি।
মূলত, গত ৩০ জুন জাতীয় সংসদ অধিবেশনে জাতীয় পার্টি’র সংসদ সদস্য জনাব ফখরুল ইমাম পাঠ্যসূচিতে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত তথ্য বাদ দিয়ে হিন্দু ধর্ম সম্পর্কিত তথ্য যুক্ত করে পাঠ্যসূচীতে হিন্দুত্ববাদ আনা হয়েছে অভিযোগ তুলে একটি বক্তব্য দিয়েছেন। পরবর্তীতে তার বক্তব্যের সূত্র ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উক্ত বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে জনাব ফখরুল ইমাম ওনার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিলেও বিভিন্নসময় উক্ত দাবিগুলো প্রচারিত হতে থাকে। তবে বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্যবই পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত দাবিগুলো সত্য নয়। বইগুলোতে যে গল্প/প্রবন্ধ/কবিতা সরিয়ে নেয়ার দাবি করা হয়েছে সেগুলো উক্ত বইয়ে বিদ্যমান হয়েছে। এছাড়াও স্বরবর্নের বইটিও মূলধারার কোনো পাঠ্যবই নয়। এটি কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) পরিচালিত জাগ্রত ছাত্র সমাজের উদ্যোগে প্রকাশিত একটি শিশুপাঠমূলক বইয়ের ছবি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিতে উক্ত বিষয়গুলো প্রচারিত হলে উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।