গণতন্ত্র কী
জনপ্রিয় এনসাইক্লোপিডিয়া “ব্রিটানিকা” অনুযায়ী, গণতন্ত্র হলো এমন একটি সরকার ব্যবস্থা যেখানে আইন, নীতি, নেতৃত্ব এবং একটি রাষ্ট্রের প্রধান উদ্যোগগুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে “জনগণ” দ্বারা নির্ধারিত হয়।
Merriam-webster ডিকশনারি অনুযায়ী, গণতন্ত্র হলো একটি সরকার ব্যবস্থা যেখানে সর্বোচ্চ ক্ষমতা জনগণের উপর ন্যস্ত থাকে এবং জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একটি প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই ব্যবস্থা বা কার্যক্রম সাধারণত (পর্যায়ক্রমে) অনুষ্ঠিত অবাধ নির্বাচনের সাথে সম্পর্কিত।
ফ্যাক্ট-চেকিং কী
কেমব্রিজ ডিকশনারি অনুযায়ী, একটি লেখা, সংবাদ, নিবন্ধ, বক্তৃতা, তথ্য (ছবি এবং ভিডিও) ইত্যাদির সমস্ত তথ্য সঠিক কিনা তা পরীক্ষা করার প্রক্রিয়াকে ফ্যাক্ট-চেকিং বলে।
আমেরিকান রাজনৈতিক এনসাইক্লোপিডিয়া ব্যালটপিডিয়া, অনুযায়ী, ফ্যাক্ট-চেকিং হলো সাংবাদিকতার একটি আধুনিক, শনাক্তযোগ্য বিভাগ। এর লক্ষ্য হলো জনসাধারণের ভুল ধারণাগুলো সংশোধন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে জ্ঞান বৃদ্ধি করার জন্য জনসাধারণের মধ্যে প্রচারিত তথ্যের সঠিক ও নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ প্রদান করা।
আধুনিক ফ্যাক্ট-চেকিং বিভিন্ন দাবি বিশ্লেষণ করে এবং সেগুলোকে সত্য বা মিথ্যা হিসেবে রেট (মূল্যায়ন) দেয়। ফ্যাক্ট চেকাররা প্রসঙ্গ এবং নেপথ্যের তথ্য প্রদান করে একটি দাবির ব্যাপারে তাদের মূল্যায়ন স্পষ্ট করে। তারা নিশ্চিত করে যে একটি কন্টেন্টের প্রকৃত তথ্যগুলো সঠিক ছিল কিনা; নাম, ঠিকানা, তারিখ ইত্যাদি।
ভুলতথ্য কিভাবে গণতন্ত্রকে প্রভাবিত করে
তথ্যের অধিকার খর্ব করার মাধ্যমে: সরকার সমর্থক এবং সরকার বিরোধী দলগুলি প্রায়ই জনগণকে বিভ্রান্ত (জনগণের কাছে তাদের অধিকার খর্ব করার সত্যতা লুকিয়ে) করার জন্য বিভিন্ন কারসাজিমূলক প্রচারণা চালায়। এই কারসাজি গণতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্যকে বাধাগ্রস্ত করে।
আইন অবমাননার মাধ্যমে: দেশীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী (আইনজীবীর দাবি), ভুয়া তথ্য রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে, যা বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩৮ ও ৪৪ ধারার লঙ্ঘন।
রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও জনজীবনের শৃঙ্খলা নষ্ট করার মাধ্যমে: ভুয়া তথ্য কিংবা ভুল তথ্য রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও জনজীবনের শৃঙ্খলা নষ্ট করে। যা সংবিধানের ধারার পাশাপাশি বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০১ এর ৩০, ৬৪, ৭৬, ৯৭ ধারা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ৮, ১৩, ১৬, ২৫ ধারা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৪৬ ধারা লঙ্ঘন করে।
সত্যকে মিথ্যা দ্বারা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে: স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা কম্পিউটারের তথ্য যেকোনো সময় পাওয়া যেতে পারে। লাইক, শেয়ার এবং কমেন্ট করা যায় কয়েক সেকেন্ডে। একই সময়ে, যে কেউ একজন সংবাদ লেখক হতে পারে এবং ইন্টারনেটে কন্টেন্ট প্রকাশ করতে পারে। তবে যা ইতিবাচক শোনায় তার অন্ধকার দিকও রয়েছে: ডিজিটাল মিডিয়াও ইচ্ছাকৃতভাবে অপব্যবহার করা হয় বিভ্রান্তি, মতামত তৈরি এবং প্রচারের জন্য। এটি আমাদের গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিশেষ করে এই ধরণের ডিজিটালাইজেশনের সময়ে।
সহিংসতা তৈরি কিংবা মানবাধিকার ক্ষুন্ন করার মাধ্যমে: পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ছেলেধরা গুজবের কারণে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে এমন সংখ্যাটা ত্রিশের উপরে। ফ্যাক্ট-চেকিং যে জীবন-মৃত্যুর নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে, সেটাও এই তথ্য থেকে বোঝা যায়। একই ধরণের গুজবের কারণে বাংলাদেশেও অনেকগুলো মর্মান্তিক প্রাণহানির কথা গণমাধ্যমে পাওয়া যায়।
পাশাপাশি ভারত, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা তৈরি কিংবা এধরণের সহিংসতাকে আরও ভয়ানক দিকে চালিত করার লক্ষ্যে ভুলতথ্য, ছবি ও ম্যানিপুলেটেড ভিডিও ব্যবহার করা হয়।
ভুলতথ্যের দ্বারা গণতন্ত্র ব্যাহত (প্রভাবিত) হওয়ার উদাহরণ
সোশ্যাল মিডিয়ায় (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপ) একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছিল যেখানে ঘানার রাষ্ট্রপতি নানা আদ্দো ডানকওয়া আকুফো-আদ্দো রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন ঘুষ গ্রহণ করতে ক্যামেরায় ধরা পড়েছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছিল (২০১৭)। পাশাপশি ২০২০ সালের অক্টোবরে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করেছিলেন যে ঘানার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জন ড্রামানি মহামা সমর্থন সংগ্রহের জন্য একটি রাজনৈতিক প্রচারণার সময় সমর্থকদের কাছে নগদ অর্থ বিতরণ করছে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান DUBAWA প্রাসঙ্গিক এবং ফরেনসিক বিশ্লেষণ চালিয়ে উভয় ভিডিওকে মিথ্যা বলে প্রমাণ করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার স্বপক্ষের ক্যাম্পেইনের প্রধান স্লোগান ছিল “ইইউতে প্রতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের সাপ্তাহিক চাঁদা দিতে হয় £৩৫০ মিলিয়ন (কথিত) যা ইইউর পরিবর্তে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে ব্যয় করলে দেশ লাভবান হবে”। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে গণভোটের পর “লিভ” ক্যাম্পেইনের একজন নেতা স্বীকার করেন যে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন। ইইউতে প্রতি সপ্তাহে দেয়া যুক্তরাজ্যের সাপ্তাহিক চাঁদা (প্রকৃতপক্ষে) £২৫০ মিলিয়ন ইইউর পরিবর্তে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে পাঠানো হবে কিনা জানতে চাওয়া হলে, প্রাক্তন ইউকে ইনডিপেনডেন্স পার্টি (ইউকেআইপি) নেতা নাইজেল ফারাজ বলেছিলেন “এটি একটি ভুল ছিল।”
গণতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এমন ভুলতথ্য ছড়িয়ে পড়ার কারণ
তথ্য অধিকার আইন থাকা সত্ত্বেও, বিশেষ করে সরকার এবং সরকারী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অপর্যাপ্ত এবং নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাব বা অপ্রতুলতার কারণে তৈরি শূন্যতা, ভুল তথ্যের বিস্তারে অবদান রাখে। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় টিকে থাকতে, ক্ষমতাকে প্রশ্নহীন করতে কিংবা নিজেদেরকে যোগ্য প্রমাণ করতে তথ্য বা পরিসংখ্যান বাড়িয়ে কিংবা ভুল তথ্য প্রকাশ করতে পারে। এমনকি সত্যতাও লুকাতে পারে।
অপরদিকে বিরোধী দলগুলো সরকারকে (ক্ষমতায় থাকা দল) প্রশ্নবিদ্ধ করা, সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরি করাসহ বিভিন্ন কারণে ভুল, মিথ্যা কিংবা বানোয়াট তথ্য প্রচার করতে পারে। উভয় ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ দলের পাশাপশি সাধারণ জনগন তথা গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষেত্রবিশেষ জনসাধারণের অধিকার ক্ষুন্ন হয়। যোগ্য নাগরিকগণ অধিকার বঞ্চিত হোন। সঠিক ও গ্রহণযোগ্য তথ্যের অধিকারও ভুলুন্ঠিত হয়; যা গণতন্ত্রের পরিপন্থী।
গণতন্ত্র রক্ষায় ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের ভূমিকা
ফ্যাক্ট-চেকিং বা তথ্য-পরীক্ষা হলো জবাবদিহিতা বা (সরকারি তথ্যের ক্ষেত্রে) সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা এবং সুশাসনের একটি নিরলস প্রচেষ্টা। যা গণতন্ত্রের অন্যতম উপাদান। জবাবদিহিতা প্রচার এবং গুণমান তথ্যের সরবরাহ ও প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য ফ্যাক্ট-চেকিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভুলতথ্যের দ্বারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রভাবিত হওয়ার ঘটনাগুলো জনসাধারণের জন্য রাজনৈতিক তথ্যগুলো ফ্যাক্ট-চেক করার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব তুলে ধরে। এর ফলে ভোটাররা তাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে এমন বিষয় সম্পর্কে আরও সচেতন এবং যুক্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়।
অন্যথায় মিথ্যা তথ্য বা পরিসংখ্যান দ্বারা ভুলভাবে প্রভাবিত হয়ে নেয়া ভুল সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলোকেও প্রভাবিত করে। ফ্যাক্ট-চেকিং তথা তথ্য যাচাই গণতন্ত্রের যে সকল বিষয়ের মাধ্যমে গণতন্ত্রে অবদান রাখেঃ-
- সত্য তথ্যের প্রবাহ ও তা জানার অধিকার খর্ব হওয়া থেকে মানুষকে রক্ষা করে
- সত্যতা যাচাই করে ভুল তথ্যের বিপরীতে রাষ্ট্রের মর্যাদা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও জনজীবনের শৃঙ্খলা রক্ষা করার মাধ্যমে
- ধর্মীয়, গোষ্ঠীগত কিংবা রাজনৈতিক সহিংসতা এবং মানবাধিকার ক্ষুন্ন হওয়া রোধ করার মাধ্যমে।
সর্বোপরি তথ্যের সাথে যেহেতু গণতন্ত্রের ক্রমধারা ও প্রক্রিয়া ওতপ্রোত সম্পর্কিত সেহেতু ফ্যাক্ট-চেকিং বা তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া গণতন্ত্র রক্ষায় অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র রক্ষায় ফ্যাক্ট-চেকিং যেভাবে ভুমিকা রাখতে পারে
বাংলাদেশেও গণতন্ত্র রক্ষায় (গণতন্ত্রের বেশকিছু উপাদান) ফ্যাক্ট-চেকিং গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে। দেশীয় গণমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলোতে ২০১৮ সালের ৯ নভেম্বর প্রকাকশিত এক সম্পাদকীয় প্রতিবেদন অনুযায়ী, তথ্যের অবাধ প্রবাহের সঙ্গে গণতন্ত্রের নিবিড় সম্পর্ক একটি সর্বজনস্বীকৃত বিষয়। কার্যকর ও ফলপ্রসূ গণতন্ত্রের জন্য অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন।
এছাড়াও আরও উল্লেখ করা হয়, এসব সমস্যা (সঠিক তথ্যের অধিকার) বাংলাদেশেও প্রকটভাবে দৃশ্যমান। বিশেষত তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার, ভাব ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। … এসবের ফলে আমাদের গণতান্ত্রিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গণতন্ত্র কার্যকর হওয়ার জন্য সুষ্ঠ নির্বাচন, নিরপেক্ষ গণমাধ্যম ও শিক্ষিত নাগরিকের মত উপাদান জরুরি।”
কিন্তু ভুল তথ্যের প্রবাহের কারণে এইসব উপাদানের সঠিক ফলাফল পাওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে। কেননা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে ভুল কিংবা মিথ্যা তথ্য সাধারণ নাগরিকদেরকে ভুলপথে পরিচালিত করে। তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনেও প্রভাব রাখে। ফলে নাগরিকদের গণতান্ত্রিক কাঠামোতে সঠিক মতামত প্রদানের সুযোগও ব্যহত হয়। সঠিক তথ্য প্রাপ্তির অধিকারও ক্ষুন্ন হয়। বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক ভুল তথ্য ছড়ানোর ব্যাপক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এইসকল ক্ষেত্রে ফ্যাক্ট-চেকিং বাংলাদেশেও গণতন্ত্র রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে।
এছাড়াও বাংলাদেশে ভুল তথ্যে প্রচারের মাধ্যমে জনজীবনের বিশৃঙ্খলা তৈরি, ধর্মীয় বা গোষ্ঠীগত, রাজনৈতিক কিংবা জাতীয় সহিংসতা তৈরি এবং মানবাধিকার ক্ষুন্ন হওয়ার উদাহরণ পাওয়া যায়। ফ্যাক্ট-চেকিং এর দ্বারা গুজব রোধ করার মাধ্যমে জনজীবনের শৃঙ্খলা রক্ষা করা, ধর্মীয় বা গোষ্ঠীগত কিংবা রাজনৈতিক সহিংসতা এবং মানবাধিকার ক্ষুন্ন হওয়া রোধ করা সম্ভব। যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ।
বিভিন্ন দেশে নির্বাচন কিংবা যুদ্ধে সত্য তথ্যের অধিকার নিশ্চিতকরণ পদক্ষেপসমূহ
মেক্সিকোর নির্বাচন: ২০১৮ সালে মেক্সিকোর জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ভরে যায় ভুল ও ভুয়া তথ্যে। ‘বট’ তথা কম্পিউটার প্রোগ্রামের তৈরি হ্যাশট্যাগ আর সেলিব্রেটিদের উদ্ধৃত করে ভুয়া বক্তব্য আসতে থাকে, টুইটারেও। এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য বছরের শুরুর দিকে একজোট হয় দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যম, সংবাদ সংস্থা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলো (৯০ টি)। তারা তথ্য-যাচাই ও ভুয়া খবরকে মিথ্যা প্রমাণের একটি সমবেত উদ্যোগ নেয়, যার নাম দেয়া হয় ‘ভেরিফিকাদো ২০১৮’।
ভারতের নির্বাচন: ভারতে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সাথে সম্পর্কিত যাচাইকৃত তথ্য, প্রকৃত অবস্থা এবং প্রবণতা শেয়ার করার জন্য ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্ক (IFCN) দ্বারা স্বীকৃত ভারতীয় ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাগুলোর একটি কনসোর্টিয়াম ‘একতা’ চালু করার জন্য ছয়টি ফ্যাক্ট-চেকিং গ্রুপ একত্রিত হয়েছিল। হিন্দিতে একতা মানে “ইউনিটি”।
১ এপ্রিল থেকে ৩ মে ২০২১-এর মধ্যে আসাম, কেরালা, পুদুচেরি, তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন সংক্রান্ত ভুল তথ্যের উপর ফোকাস করে এই উদ্যোগ। নির্বাচনের বাইরেও এই উদ্যোগ ভারতের নাগরিকদের প্রভাবিত করে এমন অন্যান্য বিষয়ের ভুল তথ্যের উপরও ফোকাস করেছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ: পূর্ব ইউরোপে; ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের শুরুর চার মাস পরে, ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বে তথ্য যুদ্ধ বিভিন্ন দিকে চালিত করা হয়। অসত্য পরিসংখ্যান প্রচার করা হয়। যারা সত্য তথ্য প্রকাশের চেষ্টা করেছে তাদের প্রতি বড় ধরণের দমন-পীড়ন করা হয়। বিশ্বব্যাপী প্রভাব রাখা এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে অপপ্রচার ও ভুলতথ্য রোধে স্প্যানিশ ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা মালদিতা এর উদ্যোগে ইউক্রেনফ্যাক্টস নামে একটি উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সংক্রান্ত সকল ধরণের তথ্যের সত্যতা যাচাইকৃত অবস্থায় একত্রে পাওয়া যাবে।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভুল তথ্যের প্রভাব
ইন্ডিয়াস্পেন্ডের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ভারতে হোয়াটসঅ্যাপে ছড়ানো ছেলেধরা গুজবের কারণে গণপিটুনিতে মারা গেছে অন্তত ৩৩ জন। একই ধরণের গুজবের কারণে বাংলাদেশেও অন্তত ২১ জনকে গণপিটুনি, অন্তত ৮ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানির কথা গণমাধ্যমে পাওয়া যায়। এর বাইরে গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও সহিংসতা তৈরির ব্যাপারে গণমাধ্যমে সংবাদ পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, ভুয়া খবর কিংবা গুজব সমাজে নেতিবাচকতা বিস্তার করে। এর ফলে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষতিসাধন হতে পারে। তাই ভুলতথ্য বা গুজব গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। একারণেই সুষ্ঠ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখার জন্য তথ্য-যাচাইয়ের ভুমিকা অপরিসীম। প্রযুক্তির উৎকর্ষতা আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই সময়টাতে তথ্য যাচাই বা ফ্যাক্ট-চেকিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।
সুতরাং, ফ্যাক্ট-চেকিং জবাবদিহিতা এবং সুশাসনের একটি নিরলস প্রচেষ্টা। জবাবদিহিতা প্রচার এবং গুণমান তথ্যের সরবরাহ ও প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য ফ্যাক্ট-চেকিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি, গণতন্ত্র রক্ষায় ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের ভূমিকা অপরিসীম।
তথ্যসূত্র
- Fact-Checking – AsiaPortal
- Poynter- Fact-checking is at the heart of good governance and democracy-building – Poynter
- Bdnews24- ভুয়া সংবাদ ও ভিডিও সরাতে ফেইসবুক ও ইউটিউবকে নোটিস
- Fullfact- £350 million EU claim “a clear misuse of official statistics” – Full Fact
- Opendemocracy- Can fact-checking save democracy – and journalism as we know it? | openDemocracy
- telekom- Strengthening democracy with fact checks | Deutsche Telekom
- Britannica- democracy | Definition, History, Meaning, Types, Examples, & Facts | Britannica
- Merriam-webster; Democracy Definition & Meaning – Merriam-Webster
- Cambridge- FACT-CHECKING | meaning, definition in Cambridge English Dictionary
- Ballotpedia- What is fact-checking? – Ballotpedia