ফলের গায়ে লাগানো স্টিকারের রহস্য কি?

ফলের গায়ে স্টিকার লাগানোর বিষয়টি সম্পর্কে আমরা সবাই-ই অবগত। বাজারে ফল কিনতে গেলেই বিভিন্ন ফলের গায়ের এসব লাল নীল স্টিকার আমাদের চোখে পড়ে। তবে আমরা যে বিষয়টি বুঝতে পারিনা তা হলো এ ধরনের স্টিকার কেন ব্যবহার করা হয় এবং এসব স্টিকার কি অর্থে ব্যবহার করা হয়। উন্নত বিশ্বের মানুষেরা ফলের গায়ের স্টিকার সম্পর্কে অবগত হলেও বাংলাদেশের মতো মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে সেসব সম্পর্কে জনগণের ধারণা কম। আমরা অনেকেই মনে করি, দোকানে যেসব ফলের গায়ে স্টিকার লাগানো থাকে, সেগুলো সম্ভবত সবচেয়ে ভালো ফল। কিন্তু বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। মূলত স্টিকারগুলোর আলাদা আলাদা কিছু অর্থ থাকে যা আন্তর্জাতিকভাবেই অভিন্ন।

স্টিকারগুলোর উৎপত্তিগত ধারণা

ফলের গায়ে স্টিকার লাগানোর বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফেডারেশন ফর প্রোডিউস স্ট্যান্ডার্ডস (আইএফপিএস) দ্বারা নির্ধারিত। প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বে এসব স্টিকারসমূহ দিয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফলের  মানসম্মতকরণ দিকটিকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। স্টিকার হলো মূলত ফল কেনার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য ব্যবহৃত একটি সংকেত৷ 

স্টিকারের উল্লিখিত ঐ কোডটিকে বলা হয় প্রাইস লুকআপ কোড (পিএলইউ)। এই কোডগুলোর ব্যবহার ১৯৯০ সাল থেকে শুরু হয়েছে।

ফলের গায়ে কোড লাগানোর উদ্দেশ্য কি?

মূলত, এই সংখ্যাগুলোর দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে: ক্যাশিয়ার বা স্ব-স্ক্যানিং চেকআউটের মূল্য কী তা জানানো এবং কীভাবে ফল জন্মানো হয়েছিল সে সম্পর্কে ভোক্তাকে তথ্য দেওয়া। 

স্টিকারের অর্থ বিশ্লেষণঃ

ফলে ব্যবহৃত এসব স্টিকারের অর্থ জানতে পারলে ঐ ফলটি সম্পর্কে অনেক তথ্যই জানা হয়ে যায়। কোনো কোড ৪ সংখ্যার হয়, আবার কোনোটি হয় ৫ সংখ্যার। কতোগুলো সংখ্যা দিয়ে স্টিকারের বারকোড উল্লেখিত আছে আর কোন সংখ্যা দিয়ে বারকোডটি শুরু হয়েছে, সেসবই ঐ ফলটির নানা তথ্য নির্ধারণ করে।

সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত এই কোডগুলোর কোনটি দ্বারা কি বুঝায়?

১. কীটনাশক ও অন্যান্য কেমিক্যাল ব্যবহারে জন্মানো ফল এবং স্টিকার পরিচিতিঃ

ফলের গায়ে উল্লিখিত স্টিকারে যদি একটি চার-সংখ্যার কোড থাকে তাহলে বুঝতে হবে ফলটি কীটনাশক ব্যবহার করে প্রচলিত নিয়মে জন্মানো হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, একটা কলার গায়ের স্টিকারে ৪০১১ লেখা  আছে। এই কোড দেখে বুঝতে হবে কলাটি কীটনাশক ব্যবহার করে প্রচলিতভাবে জন্মানো হয়েছিল।

আবার, ৪ ডিজিটের কোডটি যদি ৪১৩১ হয় এবং সংখ্যাটি যদি আপেলের গায়ের স্টিকারে থাকে তবে বুঝতে হবে আপেলটি ফুজি জাতের। গালা জাতের আপেলের গায়ে থাকে ৪১৩৩ কোডের স্টিকার থাকে। সবুজ রঙের আপেলের গায়ে লাগানো হয় ৪০১৭ স্টিকার।

২. জৈব পণ্য ও স্টিকার পরিচিতিঃ

ফল

জৈব পণ্যের স্টিকারে পাঁচটি সংখ্যা থাকে এবং সংখ্যাগুলো ‘৯’ দিয়ে শুরু হয়। জৈব পণ্য খাওয়া উচিত কি উচিত নয় সেটা অত্যন্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, কিন্তু এই নির্দেশিকাগুলো মানুষকে তার পছন্দমতো ফল বেছে নিতে সাহায্য করে। কেউ যদি কীটনাশক প্রয়োগে জন্মানো ফল এড়াতে চায়, জৈবিক পদ্ধতিতে জন্মানো ফল তার জন্য বিকল্প পছন্দ হতে পারে। আপেলের গায়ের স্টিকারটির সামনে এখন ৯ যুক্ত করে দিলে কোডটি দাঁড়ায় ৯৪১৩১। এ কোডের অর্থ হলো আপেলটি ফুজি এবং কোনো কীটনাশক ব্যবহার ছাড়া অর্গানিক পদ্ধতিতে ঐ আপেলের চাষ করা হয়েছে।

৩. জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত পণ্য ও স্টিকার পরিচিতিঃ

জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত পণ্যের স্টিকারে পাঁচটি সংখ্যা থাকে এবং ‘৮’ দিয়ে শুরু হয়। সাধারণত, জিনতগভাবে পরিবর্তিন করে জন্মানো ফলের স্টিকারগুলোতেও পাঁচটি সংখ্যা থাকে তবে এই কোডগুলি “৮” নম্বর দিয়ে শুরু হয়। আপেলের গায়ের কোডের সামনে যদি ৮ নম্বরটি যুক্ত করা হয়, তবে বুঝতে হবে জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে আপেলটির চাষ করা হয়েছে। কোডটি তখন দাঁড়াবে ৮৪১৩১ তে। পাঁচ ডিজিটের হলেও প্রথমে যুক্ত হওয়া নম্বরটি স্টিকারের অর্থ নির্ধারণ করবে।

ভারতের ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ বা ‘এফএসএসএআই’ এর তথ্যমতে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন নানা ধরণের স্টিকার ব্যবহার করা হয় ফলের গুণমান, দাম ও কী ধরণের প্রক্রিয়ায় ফলটি উৎপাদিত হয়েছে তা বোঝানোর জন্য। তাদের গবেষণায় উঠে আসে ভারতে ফলবিক্রেতারা প্রকৃতপক্ষে এমন কোনো নিয়ম কানুন মেনে চলেনা।  বরং ভারতে এই ধরণের স্টিকার ব্যবহার করা হয় ফলের খুঁত লুকানোর জন্য  কিংবা ফলগুলো অন্য ফলের তুলনায় ভাল এমনটা প্রমাণ করার জন্য। অনেক সময় এই ধরণের স্টিকার দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে বেশি মূল্য চাওয়া হয়।

Also Read: বাদুড়ের চোখে দেখতে না পাওয়ার দাবির সত্যতা কতটুকু?

ফলের স্টিকার সম্পর্কিত বিস্তারিত ধারণা আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষেরই নেই। এই অজ্ঞাতার কারণে মানুষ তার পছন্দের ফলটি সঠিকভাবে কিনতে পারছে না। আবার অনেক ব্যবসায়ী এসব স্টিকারের সঠিক ব্যবহার করছে না। তাই ভোক্তাদের এসব স্টিকারের ব্যবহার সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img