সুঁচ ফুটিয়ে আঙুলে ও কানে রক্তপাতে স্ট্রোক রোধ করা সম্ভব? 

মানবদেহে যতগুলো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ব্যাপারে জানা গেছে তার মধ্যে স্ট্রোক অন্যতম। মস্তিষ্কের এই রোগে প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি মানুষ আক্রান্ত হন। এর মধ্যে গড়ে প্রতি বছর মারা যান প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ। বাংলাদেশে ২০২০ সালে ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ এই রোগে মারা যান। স্ট্রোক নিয়ে অসচেতনতা যেমন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে তেমনি স্ট্রোকের চিকিৎসায় নানা বিভ্রান্তিকর পদ্ধতিতে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। 

স্ট্রোকের চিকিৎসায় যে বিভ্রান্তিকর তথ্যটি বেশ প্রচলিত  

১. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে Fakhrul Islam নামের একটি অ্যাকাউন্টে ২০১৬ সালের ০২ জুন “ ইস! কৌশলটা আগে জানা থাকলে বাবা স্ট্রোক করে মারা যেতেন না” (আর্কাইভ) শিরোনামে একটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “চীনা অধ্যাপকরা বলেছেন স্ট্রোকের চিকিৎসায় গরম সুঁচ দিয়ে হাতের ১০ আঙ্গুলের প্রতিটিতে ক্ষত সৃষ্টি করে রক্তক্ষরণের ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর কানে ম্যাসাজ করলে কান গরম হলে সেখান থেকে সুঁচ দিয়ে রক্ত বের করতে হবে। “

Screenshot Source : Facebook

পরের বছরগুলোতেও একই পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে কপি-পেস্ট হয়ে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। সম্প্রতি একই ভাবে পোস্টটি ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে।

একই রকম ফেসবুকের আরো কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

স্ট্রোক কী? 

স্ট্রোককে এমন একটি রোগ হিসেবে অভিহিত করা হয় যা মস্তিষ্ক ও তার ভেতরকার ধমনীগুলোকে প্রভাবিত করে। American Heart Association বলছে, স্ট্রোক তখনই ঘটে যখন মস্তিষ্কে অক্সিজেন এবং পুষ্টি বহন করে এমন একটি রক্তনালীতে সমস্যা দেখা দেয়। তখন রক্তনালিটি হয় জমাট বেঁধে যায় নয়তো ফেটে যায়। যখন এই সমস্যা হয় তখন মস্তিষ্কের অংশ রক্ত ​​​​(এবং অক্সিজেন) পেতে পারে না, তাই এটি এবং মস্তিষ্কের কোষগুলো মারা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) দেওয়া তথ্যমতে, সারাবিশ্বে যে রোগগুলোর জন্য সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় তার মধ্যে স্ট্রোকের অবস্থান দ্বিতীয়। একইসাথে সর্বাধিক পঙ্গুত্ব বরণ করা রোগের মধ্যে এই রোগের অবস্থান তৃতীয়। 

Screenshot Source : WHO

প্রধানত দুই ধরনের স্ট্রোক রয়েছে। প্রথমটি ইস্কিমিক (Ischemic) স্ট্রোক এবং দ্বিতীয়টি হ্যামারেজিক (Hemorrhagic) স্ট্রোক। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা Centers for Disease Control and Prevention বলছে, দুই ধরনের স্ট্রোকের মধ্যে ইস্কিমিক স্ট্রোকেই আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এই স্ট্রোকে আক্রান্তদের রক্তনালি ব্লক হয়ে গিয়ে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত সরবারাহে বাঁধার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে হ্যামারেজিক স্ট্রোকে আক্রান্তদের মস্তিষ্কের রক্তবাহী ধমনির দেওয়াল ছিঁড়ে গিয়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে স্নায়ু কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়।

Screenshot Source : www.stroke.org.uk

স্ট্রোক হয়েছে কীভাবে বুঝবেন ?

স্ট্রোকের লক্ষণ একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম। বিবিসি বাংলা বলছে, “অনেকে আবার স্ট্রোকের সাথে হার্ট অ্যাটাককে গুলিয়ে ফেলেন। কিন্তু বিষয় দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা।” সাধারণত ৬০-বছরের বেশি বয়সী রোগীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকলেও তবে ইদানীং তরুণ এমনকি শিশুরাও স্ট্রোকে আক্রান্ত আক্রান্ত হচ্ছেন। স্ট্রোকের সাধারণ কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে, আচমকা হাত, পা বা শরীরের কোনও একটা দিক অবশ হয়ে যাওয়া, চোখে ঝাপসা/ অন্ধকার দেখা, কথা বলতে অসুবিধা হওয়া বা কথা জড়িয়ে যাওয়া, শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা, বমি বমি ভাব, বমি, খিঁচুনি হওয়ার মতো অবস্থা অন্যতম। 

বিশ্বের বহুদেশে স্ট্রোক রোগ চিহ্নিতকরণে FAST নামক একটি পদ্ধতির ব্যবহার হয়ে আসছে। এখানে F দিয়ে Face বা মুখ, A দিয়ে Arm বা বাহু,  S দিয়ে Speech বা কথা এবং T দিয়ে  Time বা সময় বোঝানো হয়। 

F : মুখ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করা হয় মানুষটি কি হাসতে পারছেন? তার মুখ কি একপাশে ঝুলে গেছে? 

A : বাহু দিয়ে বোঝার চেষ্টা করা হয় মানুষটি কি তার দুটি বাহুই উপরে তুলতে পারছেন এবং কিছুক্ষণ বাহুগুলো উপরে রাখতে পারছেন? 

S : কথা দিয়ে বোঝার চেষ্টা করা হয় মানুষটি কি স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারেন এবং আপনার বলা কথা তিনি কি বুঝতে পারছেন? তার কথা কি জড়িয়ে যাচ্ছে? 

T : উপরের তিনটি লক্ষণের যে কোনোটি দেখা গেলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারের হেল্পলাইন বা নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। 

Screenshot Source : www.stroke.org.uk

সুৃঁচ কি স্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসায় কার্যকর? 

স্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসায় সুঁচের ব্যবহার বিষয়ক তথ্য শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই অন্তত ২০০৩ সাল থেকে প্রচার হয়ে আসছে। বাংলাদেশে এই তথ্য ২০১৬ সালে ছড়ালেও এর প্রায় এক দশক পূর্বেই এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম The New York Times. ২০০৬ সালের ২১ নভেম্বর এই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পত্রিকাটি জানায়, সে সময় ই-মেইলের মাধ্যমে তথ্যটি ছড়িয়ে পড়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক স্ট্রোক সেন্টারের ডিরেক্টর Dr. Larry B. Goldstein এর বরাত দিয়ে পত্রিকাটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, “স্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসায় সুঁচের ব্যবহারের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এটি যেমন নিরর্থক তেমনি এর কারণে মেডিকেল ট্রিটমেন্ট শুরু করতেও দেরী হয়ে যায়৷” 

Screenshot Source : The NY Times

AP News এ ২০১৯ সালের ২৩ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একই মত দেন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজির অধ্যাপক Dr. Mitchell Elkind।  বলেন, “এটা একেবারে আজেবাজে কথা, খুবই দুঃখজনক।”

Screenshot Source: AP News

‘চীনা অধ্যাপকরা স্ট্রোকের চিকিৎসায় সুঁচ ব্যবহার বিষয়ক তথ্য দিয়েছেন’- এমন দাবির সত্যতা অনুসন্ধানে National Library of Medicine এ ২০০৫ সালে চীনা গবেষকদের প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, “হাতের বারোটি স্থানে রক্তের ক্ষত সৃষ্টি চেতনা উন্নত করতে পারে এবং হালকা আঘাতের দলের রোগীদের সিস্টোলিক চাপ বাড়াতে পারে।” স্ট্রোক আক্রান্তদের প্রাথমিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত – এমন কোনো তথ্য অবশ্য দেওয়া হয় নি এই গবেষণায়। 

Screenshot Source : National Library of Medicine

সংবাদ সংস্থা AFP নাইরোবির আগা খান বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের স্ট্রোক সার্ভিসের প্রধান Dr. Dilraj Singh Sokhi’র বরাত দিয়ে ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, “সুঁচ কৌশলটি নিজেই ক্ষতিকারক হতে পারে। শরীরের এই সবথেকে সংবেদনশীল অংশে আঘাত করে যে ব্যথা অনুভব করা হয় তা রোগীর রক্তচাপ বাড়াতে পারে এবং রোগীকে আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে। এছাড়া সুঁচগুলো জীবাণুমুক্ত না হলে সংক্রমণ স্থানান্তরের ঝুঁকি থাকে।” 

হংকংয়ের চাইনিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক Wendy Wong’,এর বরাত দিয়ে একই প্রতিবেদনে এএফপি জানায়, “সুঁচ ব্যবহারের তথ্যটি ঐতিহ্যগত চীনা ওষুধে ব্যবহৃত আকুপাংচার কৌশলগুলোর একটি বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দিয়েছে।”

তিনি বলেন, “চীনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায়, একটি চীনা মেডিসিন হাসপাতাল তীব্র স্ট্রোকের জন্য পশ্চিমা ওষুধের সাথে আকুপাংচার ব্যবহার করা হয়। এটি স্ট্রোকের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রয়োগ করা হয়। “

Screenshot Source : AFP News

এই শিক্ষক বলছেন, স্ট্রোকের রোগীদের শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত৷ 

Wendy Wong তার বক্তব্যে আকুপাংচার বলে যে পদ্ধতিটির কথা উল্লেখ করলেন সেটি মূলত ব্যথা ও রোগ নিরাময় করার জন্য ব্যবহৃত প্রাচীন চৈনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে শরীরের কতগুলো বিশেষ বিশেষ বিন্দুতে নানা উপায়ে (সুঁচ ঢুকিয়ে, তাপ দিয়ে, রক্ত শুষে, চাপ দিয়ে ইত্যাদি) শরীরের তথাকথিত Qi বা জীবনী শক্তিকে বাঁধন মুক্ত করা হয়। তবে সকলের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কার্যকর নয়। ডাক্তারদের পরামর্শ মেনেই এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয়। 

গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যথা উপশমের ক্ষেত্রে বা কেমোথেরাপির ফলে বমি বমি ভাব এই প্রক্রিয়ায় দূর হয়। এছাড়াও এটি নানা অসুখে, যেমন, অ্যালার্জি, আর্থ্রাইটিস, পেটের রোগ ইত্যাদিতে কার্যকরি বলে মনে করা হয়৷ 

মার্কিন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান John Hopkins Medicine অবশ্য বলছে, আকুপাংচার স্ট্রোক পুনর্বাসনেও সাহায্য করতে পারে। তারাও এই পদ্ধতি প্রয়োগের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলেছে। 

Screenshot Source : John Hopkins Medicine

স্ট্রোকের চিকিৎসায় আকুপাংচার কার্যকর কি না তা অনুসন্ধানে ২০১৭ সালে National Library of Medicine এ প্রকাশিত একটি লিটারেচার রিভিউ খুঁজে পাওয়া যায়। তাইওয়ানের গবেষকদের করা এই রিভিউতে উল্লেখ করা হয়েছে, “আকুপাংচার আহত স্থানে রক্ত ​​প্রবাহ বাড়িয়ে ইস্কিমিক (Ischemic) স্ট্রোক পুনরুদ্ধারের প্রাথমিক পর্যায়ে সহায়ক হতে পারে।“

Screenshot Source : National Library of Medicine

National Library of Medicine এ ২০২০ সালে চীনা গবেষকদের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, আকুপাংচার অক্সিডেটিভ স্ট্রেস উপশম করে স্ট্রোক পুনরুদ্ধারে সাহায্য করতে পারে। এই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্রি রেডিক্যাল মধ্যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে দেওয়ার কারণে টিস্যু এবং কোষের ক্ষতি হয়। এই গবেষণার মাস কয়েক আগে করা আরেক গবেষণায় মিশরের গবেষকরা বলেছেন, “অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ইস্কেমিক স্ট্রোকের কারণে যে ক্ষতি হয় তার মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে।”

Screenshot Source : Healthline

গেল বছর (২০২১) চীনা গবেষকদের করা আরেক গবেষণায় এসেছে, আকুপাংচার এমন লোকেদের সাহায্য করতে পারে যারা স্ট্রোকের পরে ডিসফ্যাগিয়ার সমস্যায় পড়েন। ডিসফ্যাগিয়ায় আক্রান্তরা খাবার গিলতে সমস্যায় পড়েন, খাওয়ার সময় কাশি হয় কিংবা দম বন্ধ হয়ে যায়৷ 

চলতি বছর জানুয়ারিতে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, “আকুপাংচার স্ট্রোকের পরে একতরফা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করতে পারে।” 

স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইটে Healthline এ প্রকাশিত গত ২৪ জুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, “স্ট্রোক থেকে পুনরুদ্ধারের উপর যে আকুপাংচারের একটি নির্দিষ্ট প্রভাব রয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়, তবে গবেষকরা স্ট্রোক নিরাময় প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিকগুলোতে কীভাবে এই পদ্ধতি সহায়তা করতে পারে তা বোঝার জন্য আরও গবেষণা পরিচালনা করছেন। ” 

স্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা কেমন? 

স্ট্রোক অত্যন্ত হালকা না হলে, দ্রুত পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। স্ট্রোকের লক্ষণ দেওয়া মাত্রই অবিলম্বে চিকিৎসা সেবা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যদি লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ার প্রথম চার ঘন্টার মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় তাহলে চিকিৎসকরা আই ভি থ্রম্বোলাইসিস চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। থ্রম্বোলাইসিস এমন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্তনালীর ব্লক ছুটিয়ে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করার জন্য একটি ওষুধ দেওয়া হয়। 

রোগীকে যদি লক্ষণ দেখা দেয়ার ৮ থেকে ১৬ ঘণ্টার মধ্যে আনা হয় তাহলে চিকিৎসকরা সাধারণত মেকানিক্যাল থ্রম্বেকটমি চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এই প্রক্রিয়ায় একটি বিশেষ যন্ত্র বা ক্যাথেটার দিয়ে রোগীর রক্তনালীতে জমাট বাঁধা রক্ত অপসারণ করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।।

বিবিসি বাংলা বলছে, “এ ধরণের চিকিৎসা শেষে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। তবে রক্তপাত মারাত্মক হলে মাথার হাড় কেটে মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটিকে চাপমুক্ত রাখা হয়। যেন মস্তিষ্কের সুস্থ অংশ আক্রান্ত হতে না পারে একে বলা হয় ডিকম্প্রেস ক্র্যানিয়্যাকটমি।”,

হাসপাতালে নেয়ার পর পর চিকিৎসকরা লক্ষণ বুঝে রোগীর মাথার সিটি-স্ক্যান সেইসঙ্গে ব্লাড সুগার টেস্ট, ইসিজি টেস্ট দিয়ে থাকেন। পরবর্তীতে রোগীর অবস্থা বুঝে এমআরআই ও সিটি এনজিওগ্রাম করার পরামর্শ দেয়া হয়। এসব টেস্টের ফল দেখেই চিকিৎসকরা তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন বলে জানিয়েছে বিবিসি বাংলা। 

অর্থাৎ, নির্ভরযোগ্য কোনো সঠিক ও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া বহু বছর ধরে ফেসবুকে ’সুঁচ ফুটিয়ে আঙুলে ও কানে রক্তপাতে স্ট্রোক রোধ করা সম্ভব’ বলে একটি দাবি প্রচার হয়ে আসছে। কিন্তু এই দাবির স্বপক্ষে একটিও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। বরং চিকিৎসকরা এটিকে ক্ষতিকর বলে মত দিয়েছেন। গবেষকেরা স্ট্রোকের চিকিৎসায় আকুপাংচার ব্যবহার করা যেতে পারে বললেও এই চিকিৎসায় অনেক পদ্ধতি ব্যবহার হয়, এর মধ্যে একটি হচ্ছে সুৃঁচের ব্যবহার। এই পদ্ধতিতে সুঁচেরই ব্যবহার হয় এমন কোনো তথ্য উল্লেখ নেই কোনো গবেষণায়।

তথ্যসূত্র

  1. WHO : Stroke, Cerebrovascular accident
  2. Prothom Alo : দেশে এক বছরে স্ট্রোকে মৃত্যু বেড়ে দ্বিগুণ
  3. American Heart Association : About Stroke
  4. WHO : World Stroke Day
  5. Centers for Disease Control and Prevention : Stroke Home
  6. বিবিসি বাংলা : স্ট্রোক: যেসব পদক্ষেপ রোগীর জীবন বাঁচাতে পারে
  7. Stroke Association : Symptoms of stroke
  8. The New York Times :The Claim: Pricking a Stroke Victim’s Fingers Can Help Delay Symptoms  
  9. AP News : Pricking a person’s fingers will not stop a stroke
  10. National Library of Medicine : Effect of blood-letting puncture at twelve well-points of hand on consciousness and heart rate in patients with apoplexy
  11. AFP : Doctors warn against ‘dangerously misleading’ posts claiming you can treat a stroke with a needle
  12. John Hopkins Medicine : Acupuncture
  13. National Library of Medicine : Mechanisms of Acupuncture Therapy in Ischemic Stroke Rehabilitation: A Literature Review of Basic Studies
  14. National Library of Medicine : Mechanisms of Acupuncture in the Regulation of Oxidative Stress in Treating Ischemic Stroke
  15. Springer Open : The relationship between oxidative stress and acute ischemic stroke severity and functional outcome
  16.  National Library of Medicine : Efficacy of acupuncture for dysphagia after stroke: a systematic review and meta-analysis
  17. Healthline : Can Acupuncture Help You Recover from a Stroke?
  18. Hindawi : Acupuncture Therapy on Patients with Flaccid Hemiplegia after Stroke: A Systematic Review and Meta-Analysis

আরও পড়ুন

spot_img