দেরিতে হলে ঢুকায় ঢাবির নারী শিক্ষার্থীকে ভিপির দেহ ব্যবসায়ী বলে অভিহিত করার দাবিটি সঠিক নয় 

সম্প্রতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে নারী শিক্ষার্থীর রাতে দেরি করে হলে ফেরায় তাকে হলের নব-নির্বাচিত ভিপি ‘দেহ ব্যবসায়ী’ বলে অভিহিত করে হলে প্রবেশ করতে দেননি দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। প্রচারিত ভিডিওটিতে একজন নারী শিক্ষার্থীকে দেরি করে হলে ফেরায় ‘দেহ ব্যবসায়ী’ বলে অভিহিত করার বিষয়ে অভিযোগ করতে দেখা যায়।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নারী শিক্ষার্থীর সাথে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই ৩৬ (সাবেক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল) হলে সম্প্রতি রাত ১১টার পর হলে ফেরায় ৯১ ছাত্রীকে নোটিশ দেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত একটি ফেসবুক পোস্টে এক ছাত্রদল নেতা ছাত্রীদের ‘বিনা পারিশ্রমিক যৌনকর্মী’ বলে মন্তব্য করলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। সেই বিক্ষোভের ভিডিওকেই উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব-এর ফেসবুক পেজে গত ৩ সেপ্টেম্বর সরাসরি সম্প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওর সাথে উক্ত ভিডিওর শুরুর কিছু অংশের হুবহু মিল রয়েছে। মূলত এই ভিডিওটির শুরুর অংশটুকু কাট করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, ছাত্রদল নেতার নারী শিক্ষার্থীদের ‘বিনা পারিশ্রমিকের যৌনকর্মী’ বলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ভিডিও এটি। সাড়ে ১৮ মিনিটের এই ভিডিওটিতে নারী শিক্ষার্থীদের রাবির জুলাই ৩৬ (সাবেক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল) হলে সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। যেখানে তারা ছাত্রদল নেতার বহিস্কার দাবি করে বিভিন্ন বক্তব্য প্রদান করেন।

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক ইনকিলাবের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই ৩৬ হলে রাত ১১টার পরে হলে ফেরায় ৯১ ছাত্রীকে প্রাধ্যক্ষের অফিসে তলব করে হল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নোটিশ দেওয়া হয়। ওই বিজ্ঞপ্তির একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। ফেসবুকে প্রচারিত এ-সংক্রান্ত একটি পোস্টের মন্তব্যের ঘরে আনিসুর রহমান মিলন নামের একজন ছাত্রদল নেতা ছাত্রীদের ‘বিনা পারিশ্রমিক যৌনকর্মী’ বলে মন্তব্য করেন। যার প্রেক্ষিতে ওই নেতার স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে নারী শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পরদিন অর্থাৎ, ৪ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান মিলনকে আজীবনের জন্যে বহিষ্কার করে শাখা ছাত্রদল।

সুতরাং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতে দেরি করে হলে ফেরায় এক নারী শিক্ষার্থীকে হলের ভিপি ‘দেহ ব্যবসায়ী’ বলে অভিহিত করে হলে প্রবেশ করতে দেননি দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img