সম্প্রতি, ৫১% ভোট না পড়লে আমেরিকা নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে না- শেখ হাসিনাকে মার্কিন মন্ত্রী উজরা জেয়া শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ),এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারসংক্রান্ত আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এমন কোনো কথা বলেননি বরং কোনোপ্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। টুইটারে গত ১৫ জুলাই ইউএনবি’র সাংবাদিক AKM Moinuddin এর করা একটি টুইট রিটুইট করে উজরা জেয়া ক্যাপশনে লিখেন, একেএম মহিউদ্দিনের অবজারভারের সাথে কথা বলে আমি খুশি। ঢাকায় থাকাকালীন সময়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের গুরুত্ব এবং গণতন্ত্রের উন্নতির জন্য সুশীল সমাজ ও মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছি।

উক্ত রিটুইটে আলোচিত বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য AKM Moinuddin এর টুইটে সংযুক্ত ইউএনবি’র একটি সংবাদ প্রতিবেদন পড়তে বলেন উজরা জেয়া। যেখানে তিনি তার বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

ইউএনবিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে উজরা জেয়া বলেন, একটি সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ, অবাধ এবং ন্যায্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করার জন্য সকল পক্ষকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়া এ বিষয়ে আরো তথ্য জানতে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত ওয়েবসাইটে গত ১৩ জুলাই “যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎকারের বিষয় নিয়ে বলা হয়, মানবিক সহায়তা থেকে শুরু করে লিঙ্গ সমতাকার্যক্রম সমন্বয় করাসহ যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যকার শক্তিশালী ও ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনা হয়। একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত ভবিষ্যৎ বির্নিমার্ণে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, সুশীল সমাজ ও সংবাদ মাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার ও সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখার ব্যাপারে আলোচনা হয়৷

অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে এটা নিশ্চিত যে যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারসংক্রান্ত আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘৫১% ভোট না পড়লে আমেরিকা নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে না’ শীর্ষক কথাটি বলেননি।
মূলত, গত ১০ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই বাংলাদেশে সফরে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারসংক্রান্ত আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। উক্ত সফরে মার্কিন প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলের সাথে বৈঠক করেন।
তবে, উজরা জেয়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বললেও ‘৫১% ভোট না পড়লে আমেরিকা নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে না‘ শীর্ষক দাবি সংশ্লিষ্ট কোনো মন্তব্য করেননি।
সুতরাং, “৫১% ভোট না পড়লে আমেরিকা নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে না- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উজরা জেয়া” শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- ইউএনবি: “Reject violence, support genuinely peaceful democratic process: Uzra Zeya’s message to political parti6in Bangladesh”
- ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস: ওয়েবসাইট
- উজরা জেয়া টুইটার অ্যাকাউন্ট
- রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধান