মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ’ শীর্ষক ভুয়া তথ্য প্রচার

আজ (০৪ জানুয়ারি) Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ’ শীর্ষক দাবি যুক্ত শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট

ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় ৮ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় ৪ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। 

পরবর্তীতে এই ভিডিওটি আরও একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হয়েছে। সেটি দেখুন  এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় বরং মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের বিষয়ে প্রচারিত একটি অংশের ভিডিও ক্লিপের সাথে উক্ত দাবি সম্বলিত শিরোনাম ও থাম্বনেইল যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটিতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারকে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দিতে দেখা যায়। তবে সেখানে কোথাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ সম্পর্কিত কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

উক্ত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইউটিউব চ্যানেলে ০৪ জানুয়ারি ‘Department of State Daily Press Briefing – January 3, 2024’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

এই ভিডিওটি’র বাংলাদেশের বিষয়ে প্রশ্নোত্তর অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

ভিডিওটিতে দেখা যায়, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বছরের প্রথম প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। সেখানে এক সাংবাদিক ম্যাথিউ মিলারকে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শ্রম আদালতের দেওয়া সাম্প্রতিক রায়ের বিষয়ে প্রশ্ন করেন। 

জবাবে ম্যাথিউ মিলার জানান, আসন্ন ৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে মামলাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র।

পরবর্তীতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত উক্ত ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বিবরণী থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

Screenshot: US State Department Press Briefing
Screenshot: US State Department Press Briefing

অর্থাৎ, এটি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার কোনো ভিডিও নয়।

পাশাপাশি, দেশীয় বা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

মূলত, গত ০৩ জানুয়ারি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। এসময় এক সাংবাদিক বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শ্রম আদালতের দেওয়া সাম্প্রতিক রায়ের বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করলে যুক্তরাষ্ট্র বিষয়গুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে তিনি জানান। পরবর্তীতে উক্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের বিষয়ে প্রচারিত উক্ত অংশের ভিডিও ক্লিপের সাথে Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ’ শীর্ষক দাবি যুক্ত শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়ে। প্রকৃতপক্ষে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা একটি মামলায় গত পহেলা জানুয়ারি গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয় ঢাকার তিন নম্বর শ্রম আদালত। সেই সঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

মামলার আরেকটি ধারায় তাদের ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অর্থাৎ তাদের প্রত্যেককে মোট ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। তবে কারাদণ্ড হলেও এখনি কারাগারে যেতে হবে না ড. ইউনূসকে। আদালতে তাদের আইনজীবীরা ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার শর্তে জামিন চাইলে পাঁচ হাজার টাকার বন্ডে আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন। অর্থাৎ আগামী একমাসের মধ্যে তাদের শ্রম আপিলেট ট্রাইবুনালে আপিল করতে হবে।

উল্লেখ্য, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

সুতরাং, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img