সম্প্রতি, “বাংলাদেশের দুইশত ভিআইপি পাসপোর্টধারির প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইংল্যান্ড” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভাইরাল কিছু ফেসবুক পোস্টের আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে তথ্যটির কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি বরং দেখা যায় তথ্যটি ভিত্তিহীনভাবে গত কয়েকদিন যাবত ভিন্ন ভিন্ন দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে।
গুজবের সূত্রপাত: মূলত সর্বপ্রথম এই দাবিটি গত ১১ ডিসেম্বরে ফেসবুকে প্রচার করা হয়। OSINT (Open Source Intelligence) টুলস এর সহায়তায় দেখা যায়, কাজি শামিম আহসান নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে গত ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭ টা ১২ মিনিটে প্রথম ‘কমপক্ষে ২০০ জন বাংলাদেশী ভিআইপির ভিসা বাতিল হচ্ছে! যাদের বেশিরভাগেরই লাল পাসপোর্ট!’ শীর্ষক দাবিতে একটি পোস্ট করা হয়। উল্লেখ্য, পোস্টটিতে কোন ধরণের সূত্রের উল্লেখ ছিলোনা, এছাড়াও কোন দেশের ভিসা বাতিল হচ্ছে এমন নির্ধারিত কোন তথ্যেরও উল্লেখ ছিলোনা সেখানে।
শামিম আহসানের পোস্টের ২ ঘন্টা ৩৫ মিনিট পর অর্থাৎ রাত ৯ টা ৪৭ মিনিটে জাহাঙ্গীর হোসাইন নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে সর্বপ্রথম পূর্বের একই ক্যাপশনের সাথে ‘মার্কিন’ শব্দটি অতিরিক্ত যুক্ত করে “কমপক্ষে ২০০ জন বাংলাদেশী ভিআইপির মার্কিন ভিসা বাতিল হচ্ছে! যাদের বেশিরভাগেরই লাল পাসপোর্ট!” শিরোনামে আরেকটি পোস্ট করা হয়। জাহাঙ্গীর হোসাইন এর ফেসবুক আইডির এবাউট সেকশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় তিনি লন্ডনে বসবাস করেন। লক্ষণীয় বিষয় এটা, তিনি পোস্টটিতে লন্ডন বা ইংল্যান্ড নয় বরং মার্কিন শব্দ ব্যবহার করেছেন। একইভাবে তার পোস্টেও কোন সূত্রের উল্লেখ না থাকায় পোস্টটির কমেন্ট সেকশনে অনেকে বিষয়টিতে দ্বিমত পোষণ করলেও তিনি সেসব মন্তব্যগুলোর জবাবে কোন সূত্র পেশ করেননি।
পরবর্তীতে, জাহাঙ্গীর হোসাইন এর পোস্টের প্রায় ৩ ঘন্টা পর অর্থাৎ ১২ ডিসেম্বর রাত ১২.৫০ মিনিটে বর্ষা আক্তার নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে সর্বপ্রথম ইংল্যান্ড নাম উল্লেখ করে ‘ আলহামদুলিল্লাহ বাংলাদেশের দুইশত ভিআইপি পাসপোর্টধারির প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইংল্যান্ড।’ দাবি করে পোস্ট করা হয়। অনুরূপভাবে উক্ত পোস্টটিতেও কোন সূত্রের উল্লেখ নেই। মূলত বর্ষা আক্তারের আইডিতে দেয়া ক্যাপশনটি এরপর থেকে কোন সূত্র ছাড়াই গত ১২ ডিসেম্বর থেকে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, উপরোক্ত তিন জনের ফেসবুক আইডিতেই একাধিক গুজব পোস্টের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে যেগুলো পূর্বেই শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
মূলত, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে এধরণের কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, বাংলাদেশে অবস্থিত বৃটিশ হাই কমিশনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং যুক্তরাজ্যের ফরেন এন্ড কমনওয়েলথ অফিসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও এধরণের কোন তথ্য বা ঘোষণা দেয়া হয়নি। পাশাপাশি, বিষয়টি নিয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে কোন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি।
আরো পড়ুনঃ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে র্যাব কর্মকর্তার দেয়া বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার
বিষয়টি অধিক নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশে নিযুক্ত বৃটিশ হাই কমিশনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেয়া নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে, পরবর্তীতে তাদের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত লাইভ ইনকুয়ারি সেকশন থেকেও আমরা বিস্তারিত জানতে চেয়ে যোগাযোগ করেছি। তাদের বিবৃতি পাওয়া মাত্রই তা এই প্রতিবেদনে যুক্ত করে দেয়া হবে।
অর্থাৎ, “বাংলাদেশের ২০০ ভিআইপি পাসপোর্টধারির প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইংল্যান্ড / মার্কিন” শীর্ষক এই দাবিটির কোন ভিত্তি নেই, বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
[su_box title=”True or False” box_color=”#f30404″ radius=”0″]
- Claim Review: বাংলাদেশের দুইশত ভিআইপি পাসপোর্টধারির প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইংল্যান্ড
- Claimed By: Facebook Posts
- Fact Check: False
[/su_box]