শুক্রবার, অক্টোবর 4, 2024
spot_img

ছবিটি জবি নতুন ক্যাম্পাসের মাস্টারপ্ল্যানের খসড়া

সম্প্রতি, “বিশ্বের নবম আশ্চর্য! (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস ) প্রস্তাবিত” শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের প্রস্তাবিত মডেলের নয় বরং এটি নতুন ক্যাম্পাসের মাস্টারপ্ল্যানের পুরাতন একটি খসড়া। 

কি-ওয়ার্ড সার্চে, গত ১২ জানুয়ারি দৈনিক ‘ভোরের কাগজ’-এর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি ‘Raky Ahmed’  এর ফেসবুক প্রোফাইলে “যেমন হবে জবির ২০০ একরের নতুন ক্যাম্পাস,, সর্বশেষ মাস্টারপ্ল্যান,,”  শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Raky Ahmed’s facebook profile

তার সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান তিনি যে ভিডিওটি পোস্ট করেছেন এটিই সর্বশেষ মাস্টারপ্ল্যান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে মাস্টারপ্ল্যানটি ছড়িয়ে পড়েছে তা পুরোনো।

পরবর্তীতে, বিশ্ববিদ্যালয়টির চীফ ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দীন পাটোয়ারীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া মাস্টারপ্ল্যানটিকে “প্রিলিমিনারি ড্রয়িং” বলে রিউমর স্ক্যানারকে জানান।

তিনি বলেন, “বর্তমানে নতুন মাস্টারপ্ল্যান হয়েছে। এই ছবিটা আপডেটেড না।”

এছাড়া, Raky Ahmed এর ফেসবুক প্রোফাইলে পাওয়া ভিডিও’র মাস্টারপ্ল্যানটির ছবিকেই নতুন মাস্টারপ্ল্যান বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি। 

পরবর্তীতে, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে দেশীয় প্রথম সারির সংবাদপত্র দৈনিক ‘জনকন্ঠ’ এর অনলাইন সংস্করণে “জবির নতুন ক্যাম্পাসের উন্নয়ন কাজে ধীরগতি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Daily Janakantha

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, “২০২১ সালের ৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ ইমদাদুল হক যোগদানের পর মাস্টারপ্ল্যানের কোম্পানি নিয়োগে জটিলতা ও অনিয়মের কারণে পুরো প্রক্রিয়া বাতিল করেন। গত ২৩ আগস্ট মাস্টারপ্ল্যানের জন্য পুনঃদরপত্র আহ্বানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে একটা মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছে। সেটা এখন প্রধানমন্ত্রীকে দেখাবেন। বিশ্ববিদ্যালয় চীফ ইঞ্জিনিয়ার প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘নতুন ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীরের কাজ চলছে। আর মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত হলে বাকি কাজ দ্রুতই শুরু হবে।’  নতুন ক্যাম্পাসের কাজের অগ্রগতি ও পরিকল্পনা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ ইমদাদুল হক বলেন, ‘নতুন ক্যাম্পাসের কাজের মাস্টারপ্ল্যানের দরপত্রে জটিলতা ছিল। আগের পুরো প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন করে মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে।”

মূলত, ২০০৯, ২০১১, ২০১৪ ও ২০১৬ সালে জবি শিক্ষার্থীদের হল আন্দোলনের পর ২০১১ সালে কেরানীগঞ্জে হল ও ২০১৬ সালে কেরানীগঞ্জে ২০০ একর জায়গায় নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের ঘোষণা দেয় প্রশাসন। তবে ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা ধরণের জটিলতায় ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ সে অর্থে শুরু হয়নি এখনো। ২০২১ সালের ৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ ইমদাদুল হক যোগদানের পর মাস্টারপ্ল্যানের কোম্পানি নিয়োগে জটিলতা ও অনিয়মের কারণে পুরো প্রক্রিয়া বাতিল করেন এবং নতুন মাস্টারপ্ল্যান তৈরী করেন। তবে কোনোটিই এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত বলে সিদ্ধান্ত হয়নি। নতুন ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুততার সাথে সম্পন্নের দাবিতে গত সেপ্টেম্বর ২০২২ এ পুনরায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পুরোনো সেই মাস্টারপ্ল্যানটিই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের মাস্টারপ্ল্যান দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর দাতব্য প্রতিষ্ঠান আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম একাধিকবার তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের শহীদ আব্দুর রহমান হলের দখল নেওয়ার চেষ্টা করে। সে সময়ে শিক্ষার্থীরা সেটিকে রক্ষা করে। তবে ১৯৮৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয়দের সাথে এই হলের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ঘটলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আটটি হল বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে কলেজ সংলগ্ন শহীদ আজমল হোসেন হলটিও দখল করে নেয় প্রভাবশালীরা।

প্রসঙ্গত, ভাস্কর্যের ছবিকে জবির নতুন ভবনের ফাটল ধরা পিলারের ছবিতে প্রচার করা হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের পুরোনো মাস্টারপ্ল্যানের ছবিকে নতুন মাস্টারপ্ল্যান দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img