সম্প্রতি ‘বাংলাদেশের তো শরিয়া শাষণ শুরু হয়ে গেছে। হিন্দু দোকানদারদেরকে উপর হুমকি’ শীর্ষক শিরোনামে ৮ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওতে বাংলাদেশে শরীয়া শাসন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রোজায় শুধুমাত্র হিন্দু দোকানদারদেরকে হুমকি দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং কয়েকজন ব্যক্তি নিজেদের উদ্যোগে খাবারের হোটেল এবং দোকানে গিয়ে রোজায় মুসলিমদের কাছে খাবার বিক্রি বন্ধের জন্য মালিকদের শাসিয়েছেন এবং সেখানে হোটেল ও দোকান মালিকদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মের মানুষই রয়েছেন।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ৮ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের ভিডিওটির শুরুতেই দেখা যায়, লাঠি হাতে নিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি গলায় গামছা জড়ানো এক ব্যক্তিকে শাসায়। রোজা না রাখা ব্যক্তিদেরকে খাবার দেওয়ার জন্য লাঠি হাতে ভয় দেখিয়ে ওই ব্যক্তিকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়।

পরবর্তীতে এমন আরও এক ব্যক্তিকে একই কাজের জন্য একই শাস্তি দিতে দেখা যায়।

পরবর্তীতে, ভিডিওটির ৫৯ সেকেন্ডের অংশে দেখা যায়, একজন হিন্দু মালিকের হোটেলে গিয়ে পূর্বের ব্যক্তিরা রমজানে কোনো মুসলমানকে খাবার দিলে দোকান বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেন। উক্ত হোটেল মালিকের গায়ে পরিহিত টি-শার্টে ‘শারদীয় শুভেচ্ছা’ লেখা দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় তিনি একজন হিন্দু।

এরপর ভিডিওতে দেখা যায়, অন্য খাবারের দোকানগুলোতে গিয়েও তারা একই কথা বলছেন। তাদের মূল কথা হল, রোজার মধ্যে কোনো মুসলিম হোটেলে গিয়ে খাবার খেতে পারবে না এবং কোনো মালিক তাদের কাছে খাবার বিক্রি করতে পারবে না। অসুস্থ বা অন্যদের খাবারের প্রয়োজন হলে খাবার কিনে নিয়ে যেতে পারবে। ৪ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে তাদের কথোপকথন থেকে বোঝা যায়, হোটেল মালিকদের একজনের নাম জাহাঙ্গীর।

পরবর্তীতে অভিযান পরিচালনাকারী ব্যক্তিদের একইভাবে আরও কয়েকটি দোকানে গিয়ে দোকানদারদেরকে একইভাবে শাসাতে দেখা যায়।

অর্থাৎ, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এটা স্পষ্ট যে, শুধুমাত্র ধর্মীয়ভাবে নির্দিষ্ট কোনো সম্প্রদায়ের মানুষকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে না বরং ওখানকার সকল খাবার হোটেলের মালিকদের রোজায় খাবার বিক্রি করা নিয়ে একই কথা বলা হয়েছে এবং সেখানে হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই ছিল। পাশাপাশি, বাংলাদেশে শরীয়া আইন চালু হবার কোনো তথ্য মূল ধারার গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য অন্যকোনো সূত্রে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচার হওয়া ৮ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে একদল লোককে উত্তেজিত হয়ে বিভিন্ন খাবারের দোকানে গিয়ে রোজায় খাবার বিক্রি করা নিয়ে মালিকদেরকে শাসাতে দেখা যায়। প্রচারিত ভিডিওতে দাবি করা হয় দেশে শরীয়া আইন শুরু হওয়ার ফলে হিন্দু রমজান মাসে দোকানদারদেরকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের বিশ্লেড়ণে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওতে শুধুমাত্র হিন্দু দোকানদারদেরকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে না বরং ওখানকার খাবার হোটেলের সকল মালিককে রোজায় খাবার বিক্রি নিয়ে শাসানো হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে শরীয়া আইন চালু হওয়ার কোনো তথ্য কোথাও পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, রোজায় মুসলমানদের কাছে খাবার বিক্রি না করতে হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মের দোকানদারদেরকে শাসানোর ঘটনার ভিডিওকে শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মের দোকানদারদেরকে শাসানোর ঘটনা দাবিতে প্রচারিত হয়; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner Own Analysis